মার্চ মাস পড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ গরমও পড়তে চলেছে। এই গ্রীষ্ম এবং
বর্ষার সময়টাতে বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে ঘুরে আসতে পারেন।
চেষ্টা করেও মদ্যপান ছাড়তে পারলেন না, রইল উপায়
চাঁদিপুর
ওড়িশার বালেশ্বর জেলার
একটি সমুদ্রতট এই চাঁদিপুর সৈকত। এটি বঙ্গোপসাগরের কাছে এবং ভুবনেশ্বর থেকে প্রায়
২০৭.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পৌঁছতে সময় লাগে সাত ঘণ্টার মতো। এই সমুদ্রতটের
একটি বৈশিষ্ট্য হল যে, ভাটার
টানে জল প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে চলে যায়। এই কারণে এই স্থানের আরেক নাম অদৃশ্য
সমুদ্র। এবং বিদেশিদের কাছে এই নামেই এলাকাটি পরিচিত। আবার এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের
কারণে এখানকার জীববৈচিত্র্যও অন্যরকম। এখানকার সমুদ্রতটে এক বিপন্ন প্রজাতির
লিমুলাস দেখতে পাওয়া যায়। চাঁদিপুর থেকে ঘুরে আসা যায় পঞ্চলিঙ্গেশ্বর, দেবকুণ্ড জলপ্রপাত, নীলগিরি জগন্নাথ মন্দির,
ইমামী জগন্নাথ মন্দির, খিরাচরা গোপীনাথ
মন্দির, বুড়িবালাম নদীর মোহনা-সহ নানা স্থান।
শঙ্করপুর
দিঘা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে
অবস্থিত শঙ্করপুরের দুটি রূপ। একটি নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত। আর অন্যটি কোলাহলে
পরিপূর্ণ মৎস্যবন্দর। বন্দরে সবসময় ছোট, বড়, মাঝারি
মাপের ট্রলার এবং জেলে নৌকা দেখতে পাবেন। সঙ্গে সমুদ্রে থেকে তুলে আনা টন টন ওজনের
মাছ। এই বন্দর থেকেই পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে মাছ যায়। শঙ্করপুর প্রবেশের ডান
দিকে রয়েছে এই মৎস্যবন্দরটি। আর বাঁ দিকে বাঁকলেই পেয়ে যাবেন নির্জন সমুদ্র সৈকত।
সেখানে রযেছে হাজার হাজার ঝাউগাছের সারি। রয়েছে কেয়া গাছের ঝোপও।
ঘোষণা হয়ে গেল লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা, থাকল চমকের পর চমক
এখানকার সূর্যাস্তের দৃশ্য় অপূর্ব
সুন্দর। দিঘা না গিয়ে সারাটা দিন শঙ্করপুরে ছুটি কাটালে মন অনেক বেশি শান্ত হয়।
এখানে নানা বাজেটের সরকারি বেসরকারি হোটেল পেয়ে যাবেন। কলকাতা থেকে শঙ্করপুর
পৌঁছোতে ঘণ্টা পাঁচেক সময় লাগে।
মায়াপুর
কলকাতা থেকে ১২৩
কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নদীয়া জেলার মায়াপুর। পৌঁছোতে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
গঙ্গা এবং জলঙ্গী নদীর তীরে অবস্থিত মায়াপুর বৈষ্ণব এবং হিন্দুদের একটি পবিত্র
তীর্থস্থান। এখানকার প্রধান আকর্ষণ ইসকনের মন্দির, শ্রী
চৈতণ্য মঠ, চাঁদ কাজির সমাধি, শ্রী
দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ এবং যোগ পীঠ। ধর্মীয় স্থানগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং স্থাপত্য
অনবদ্য। গঙ্গায় নৌবিহার করতে দারুণ লাগবে। সন্ধ্যার সময় সূর্যাস্তের দৃশ্যের কোনও
তুলনা হয় না।
বাংরিপোসি, ওড়িশা
কলকাতা থেকে প্রায়
২২০ কিলোমিটার দূরত্ব। মেরেকেটে পৌঁছতে লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা। ওড়িশার বাংরিপোসি
পাহাড় এবং জঙ্গলের জন্য বিখ্যাত। পূর্বঘাট পর্বতমালার হালকা একটা অংশ রয়েছে
এখানে। সঙ্গে রয়েছে ঘন সবুজ জঙ্গল, আদিবাসী
এবং তাঁদের সাবেকি সভ্যতা। সবুজে মোড়া এই বাংরিপোসির রাস্তাঘাট সাধারণত ফাঁকাই
থাকে। হাতে গোনা লোকজন সেখানে বেড়াতে যান। রোম্যান্টিক সময় কাটানোর জন্য এটি
আদর্শ স্থান। পাহাড়, জঙ্গল ছাড়াও আছে ঝর্ণা, নদী এবং ট্রেকিং। তাই অ্যাডভেঞ্চারেরও কমতি হবে না। বাংরিপোসির কাছে রয়েছে
সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান, জোরান্দা এবং বরেহিপানি ঝরণা,
ঠাকুরানি পাহাড়, বাঁকাবল হ্রদ ইত্যাদি।
সুন্দরবন
সুন্দরবনে বেড়াতে
যেতে চাইলে বিন্দাস ঘুরে নিন। গাড়ি চড়ে সুন্দরবন যাওয়াই যায়। তবে নৌকার মধ্যে
গাড়ি চাপিয়ে নদী পেরোতে হবে। নদী পেরিয়ে ফের নিজের গাড়িতে ঘুরুন। ম্যানগ্রোভ
অরণ্য, কুমীর, হরিণ, নানা জাতির পাখি সবই দেখতে পাবেন। লঞ্চে করে নদীতে ঘুরে বেড়ান। চারদিকে
সবুজ বনানী দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। সুন্দরবন অভয়ারণ্য ঘুরে নিন মন মতো। ভাগ্য ভালো
থাকলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। জঙ্গলে প্রবেশের জন্য
প্রশিক্ষিত গাইড পেয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ, নদীর টাটকা মাছ,
কাঁকড়া, চিংড়ি এবং বন মোরগ খেতে খেতে ভুলবেন
না যেন। কলকাতা থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব একশো কিলোমিটার মতো। পৌঁছোতে সময় লাগে দেড়
ঘণ্টার মতো।
বড়ন্তি
একটা ছোট উইকএন্ড
কিন্তু প্রকৃতির কোলে কাটানোর ইচ্ছে হলে পুরুলিয়া দারুণ জায়গা,
বলতে পারি। যদি ‘লাল-পাহাড়ির দেশে’ যেতে চান তা হলে বড়ন্তিতে চলে যেতে পারেন। শাল-শিমূল, মহুয়া, পলাশ, পিয়াল, সেগুন – সব ধরনের গাছের বনের মধ্যিখানে ছোট্ট একটা
জায়গা! নিরিবিলিতে নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।নিজের গাড়িতে না
গেলে শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে আসানসোলগামী যে-কোনও ট্রেনে চেপে বসুন। আসানসোল থেকে
আদ্রা এবং আদ্রা থেকে সামান্য পথ পেরোলেই বড়ন্তি।
বাঁকিপুট
শহরের কোলাহল থেকে
একটু অবসর খুঁজতে চাইলে চলে যেতে পারেন বাঁকিপুট। মন্দারমনি-তাজপুরের ভিড় নেই,
অথচ রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! এক আধটা দিন উইকেন্ড
সমুদ্র-সৈকতে কাটিয়ে গেলে মনটাও ফুরফুরে হয়ে যাবে। শুধু সমুদ্র নয়, এখানে দেখার মতো রয়েছে একটি শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির, যার
উল্লেখ রয়েছে ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসেও। যদি বাসে যান, তা হলে
যে-কোনও দিঘাগামী বাসে চেপে পড়ুন এবং কাঁথিতে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে
হবে বাঁকিপুটের জন্য। কাঁথি থেকে গাড়িতে প্রায় মিনিট ৪০ সময় লাগে এই উইকএন্ড
ডেস্টিনেশনটিতে (destination) পৌঁছতে। রিজার্ভ করা গাড়িতে
মোটামুটি ১,০০০ টাকা মতো খরচ পড়ে।