সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে রয়েছে বৈচিত্র্য। মানুষে-পশুতে, শহরে-গ্রামে, খাবার-দাবারে, রীতিনীতিতে- সর্বত্রই এখানে বৈচিত্র্য দেখা যায়। ইরানে এক অনন্য গ্রাম রয়েছে, যা গোটা বিশ্বকে অবাক করেছে৷ সেদেশের পূর্ব তেহরানে রয়েছে গ্রামটি যেখানে শুধুমাত্র বামন আকৃতির মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে। এই কারণে এই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে লিলিপুট গ্রাম।
দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশের রাজধানী বীরজান্দ থেকে ১৪৩ কিলোমিটার দূরে এবং আফগানিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামটির আসল নাম মাখুনিক। এই গ্রামে বামনাকার মানুষের অস্তিত্বের কারণ কী? মাখুনিক গ্রামে মানুষের লম্বা না হওয়ার প্রধান কারণ অপুষ্টি, যা ৪০০ বছরের একটি শিশুর মমি থেকে বোঝা গিয়েছে। গবেষকরা এই মমি নিয়ে গবেষণা করে জানতে পেরেছেন যে এখানকার মানুষ যে নাতিদীর্ঘ তার কারণ হল অপুষ্টি। একটা সময় ছিল যখন মানুষের জীবিকার যথেষ্ট উপায় ছিল না। পশুপালন করা কঠিন ছিল, এমন পরিস্থিতিতে মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাবে কোথা থেকে? ছিল মাত্র কয়েকটি খেজুর ও অন্যান্য গাছ।
এই গ্রামের গঠনও বিশেষ। এখানকার দরজাগুলো এতই ছোট যে কেউ মাথা নিচু না করে ভিতরে যেতে পারে না। বহু শতাব্দী ধরে, এখানে স্থাপত্য এবং পর্যটনের জন্য কোনও কাজ করা হয়নি, যার কারণে গ্রামটির সংস্কার করা হয়নি। ফলে অনেকেই এটি সম্পর্কে জানেন না। প্রায় এক শতাব্দী আগে মাখুনিক গ্রামের কিছু বাসিন্দার উচ্চতা ছিল মাত্র ১ মিটার, যা সে সময়ের গড় দৈর্ঘ্যের চেয়ে প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার কম ছিল।
২০০৫ সালে এই অঞ্চলে ২৫-সেন্টিমিটার-দৈর্ঘ্যের একটি মমি পাওয়া গিয়েছিল, যা থেকে জানা যায় যে মাখুনিক সহ ১৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ইরানের এই প্রত্যন্ত এলাকা একসময় একটি প্রাচীন 'বামনদের শহর' ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অপুষ্টির শিকার এই গ্রামটি আজ একটু সবুজ হয়ে উঠেছে। এখানকার বাসিন্দারা পেট ভরে খেতে পাচ্ছে। ফলে পরিপূর্ণ পুষ্টি তাঁদের শরীরে যাচ্ছে।ফলে বর্তমানে মানুষের শারীরিক গঠন সাধারণ মানুষের মতোই হয়ে যাচ্ছে। তবে আজও এখানে লিলিপুট আক্লৃতির মানুষ নেই তা নয়।