পাহাড়ের কোল, বাংলো আর ভৌতিক রহস্যময় পরিবেশ- এমন মিশেল খুঁজে পেলে মন যেন আহ্লাদে আটখানা
হয়ে যায়। এমন একটা অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে হলে চলে যেতে হবে হিমাচল প্রদেশের
সিমলায়। ভারত শাসনের সময় ব্রিটিশ অফিসারদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল সিমলা। তাই
তৈরি হয়েছিল বড় বড় অট্টালিকা এবং বাংলো। এমনই একটি বাংলো আজও সিমলার সুন্দর
পাহাড়ে রয়েছে ‘দুখানি’।
মহুয়ার ‘বসন্ত বোধহয় এসে গেল’ আজ অতীত, বৈশাখের আগেই তাপমাত্রা ৪০ ছোঁয়ার সম্ভাবনা
‘দুখানি’র
মালিক ছিলেন বাকি নামে এক বৃদ্ধ। দিল্লির বাসিন্দা হলেও মাঝেমধ্যে সিমলায় গিয়ে ওই
বাংলোয় থাকতেন তিনি। সেখানেই মাঝেমধ্যে উইকএন্ড পার্টি চলত। স্যার জন স্মিথ নামে
একজন ছিলেন বাকির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সপ্তাহান্তের পার্টিতে নিয়মিত আসতেন তিনি। একবার
কী হল, এমনই এক পার্টিতে আসলেন সস্ত্রীক স্যার জন স্মিথ। সেবার
ফিরতে গিয়ে হয়ে গেল অনেক রাত। বাধ্য হয়ে দম্পতিকে থাকতে হল দুখানিতে।
স্থানীয়দের
দাবি, জনের স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
জন ছিলেন বাকির ঘরে। বাংলোর সবচেয়ে পুরনো ঘরটিতে থাকতেন বাকি।
“কেউ কেন রক্ত মোছাল না?”, মুখ্যমন্ত্রী মমতার জখম নিয়ে প্রশ্ন রুদ্রনীল ঘোষের
ঘুমোতে গিয়ে
নাক ডাকতেন বাকি। তাঁর নাক ডাকার তীব্র আওয়াজে কিছুতেই ঘুম আসছিল না জনের। অনেকক্ষণ
জেগে থাকার পর জনের চোখে নেমে এলেন নিদ্রাদেবী। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই জোর হাওয়ার
শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে গেল।
স্থানীয়দের
দাবি, ঘুম ভাঙার পর জন দেখেন প্রচন্ড হাওয়ায় ঘরের জানলা
খুলে গিয়েছে। শরীর এত ক্লান্ত ছিল যে জন আর উঠে গিয়ে জানলা আটকাতে পারেননি। কিন্তু
জানলা থেকে চোখ সরাতেই স্তম্ভিত হয়ে গেলেন জন।
দেখলেন জানলার
কাছে ড্রেসিং গাউন পরিহিত এক ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘুমচোখে তাঁর মনে হয়েছিল, জানলার সামনে বাকি-ই দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
ভয় পেলেও জন
প্রথমে ভাবলেন বাকি-ই বুঝি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বাকিকে বলেন জানলাটা বন্ধ করে
দিতে। ঠিক তখনই কানের কাছে একটা আওয়াজ পেলেন তিনি।
জনের কানে
ভেসে আসছিল বাকির নাক ডাকার শব্দ। পাশে তাকিয়ে জন দেখলেন, বাকি ঘুমে
আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন।
জনের মনে
তখন একটাই প্রশ্ন, জানলার কাছে কে? সাহস করে এবার জানলার
দিকে ধীর পায়ে হেঁটে গেলেন জন। ঘরের মধ্যে মাঝরাতে কে প্রবেশ করেছেন তা ভাল করে
দেখার চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু ছায়ামূর্তির কাছাকাছি পৌঁছতেই নাকি আচমকা তা খোলা
জানলা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে অন্ধকারে মিশে গিয়েছিল।
জন তখনই বেরিয়ে
বাইরে খোঁজও করলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। ভোর হতেই বাকিকে এই ঘটনার কথা
জানান জন। কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গেও।
তারপর এক
স্থানীয় জানান, ‘দুখানি’ বাংলোয় বহু বছর আগে এক বৃদ্ধ বাস
করতেন। ব্রিটেন থেকে সিমলায় এসেছিলেন তিনি। বাকি যে ঘরে থাকেন, সেই ঘরেই নাকি ৪০ বছর আগে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ।
আত্মহত্যা
করার সময় ড্রেসিং গাউন পরেছিলেন বৃদ্ধ। মৃত্যুর পরেও দুখানির মায়া ছাড়তেপারেননি ওই
বৃদ্ধ। তাই রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই বৃদ্ধের ‘প্রেতাত্মা’ই নাকি সারা বাংলো টহল দিয়ে বেড়ায়।
তারপর থেকে
আজ অবধি সিমলার ‘ভুতুড়ে’ বাড়ি হিসাবেই পরিচিত হয়ে গিয়েছে
দুখানি বাংলো।