বহুদিন আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গিয়েছিলেন, “দেখা হয় নাই চক্ষু
মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশিরবিন্দু।”
সত্যিই তো নিজের দেশের মধ্যেই যে কত সৌন্দর্য রয়েছে তা আমরা যেন দেখতে পাই না। সুযোগ
পেলেই পাড়ি দিই বিদেশ। অথচ একটু নজর রাখলেই বুঝবেন নিজের দেশেই লুকিয়ে রয়েছে বিদেশ। সপরিবারে ভ্রমণ হোক কিংবা হানিমুন
অথবা বন্ধুদের সঙ্গে হই হই করে ঘোরা। এই জায়গাগুলির তুলনা
হয় না।
ভারতের সুইজারল্যান্ড- খাজ্জিয়ার
হিমাচল প্রদেশের অপূর্ব সুন্দর মফঃস্বল শহর খাজ্জিয়ার।
বেশিরভাগ পর্যটক এখানে এক বা দুই দিনের জন্য বেড়াতে যান। বেড়াতে যেতে পারেন
খাজ্জিয়ার হ্রদে। দর্শন করে আসতে পারেন খাজ্জি নাগ মন্দিরেও। পুজো দিন বা না দিন
পাহাড়ি এলাকার প্রায় আটশো বছরের পুরোনো মন্দিরের পরিবেশ ভালই লাগবে। ইচ্ছে হলে
ট্রেকিং-এ যেতে পারেন। পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে চড়ে গ্রাম ঘুরে বেড়ান। এখান থেকে
কৈলাস পর্বতকে স্পষ্ট দেখা যায়। তুষারপাতের সময় খাজ্জিয়ারের সৌন্দর্য দেখে সুইত্জারল্যান্ডও
ঈর্ষা করবে। খাজ্জিয়ার থেকে ডালহৌসি, ধরমশালাও ঘুরতে যাওয়া যায়।
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস হল এই স্থান পরিদর্শনের
সেরা সময়।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ৫০০ টিরও বেশি ছোটো বড় দ্বীপ রয়েছে।
সেগুলির মধ্যে ৩০ টিরও বেশি দ্বীপে রয়েছে জনবসতি। এখানকার সমুদ্র সৈকতের
সৌন্দর্যের যেমন কোনও তুলনা হয় না, তেমনই অতুলনীয় এখানকার ওয়াটার
স্পোর্টস্-গুলি। স্কুবা ডাইভিং, জেট-স্কিটিং, প্যারা স্লাইডিং, বোটিং, ট্রেকিং
সবই করতে পারবেন সেখানে। আন্দামান হল স্কুবা ডাইভিং-এর আদর্শ জায়গা। জলে ভয় না
থাকলে হই চই করতে করতে এর আনন্দ নেওয়ার কোনও তুলনা হয় না। ভারত মহাসাগরের নীচে
প্রবালের প্রাচীর এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের সংসার দেখার এটি এক অসাধারণ সুযোগ। নীল
দ্বীপ, ক্যাম্পবেল বে, হ্যাভলক দ্বীপ,
পোর্ট ব্লেয়ার, লিটল আন্দামান দ্বীপ, সিঙ্ক আইল্যান্ড, ব্যারেন আইল্যান্ড, দিগলিপুর, মায়াবন্দর, রাঙাট,
বারাটাং দ্বীপ এবং লং আইল্যান্ড হল এখানকার কিছু সৈকত।
'প্রাচ্যের
প্যারিস'- পন্ডিচেরি
ভারতের সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম পন্ডিচেরি। ২০০৬
সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নতুন নামকরণ হয়েছিল 'পুদুচেরি'। প্রায় ৭১১,৯৩৪ জনসংখ্যা সহ এই ৪৯২ বর্গ কিলোমিটার
এলাকার পুদুচেরি ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি আধুনিক শহর। শহরটি 'পন্ডি' (Pondi) নামেও পরিচিত। এ যেন ভারতে বিদ্যমান
ফ্রান্সের একটি অংশ। অতীতে ফরাসীদের উপনিবেশ থাকা পন্ডিচেরিতে তার রেশ আজও রয়ে
গেছে। শীতকালে এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম থাকে। পন্ডিচেরির সমুদ্র সৈকত দারুণ
সুন্দর। সার্ফিংয়ের জন্য, অরোভিল বিচ জনপ্রিয়। ব্যাক
ওয়াটার বোটিং উপভোগ করার দারুণ জায়গা প্যারাডাইস বিচ। যোগাসনের জন্য শান্তিপূর্ণ
জায়গা পেতে চাইলে চলে যেতে পারেন প্রমেনেড বিচে। সান বাথ এবং মাছ ধরার জন্য
বিখ্যাত মাহে বিচ। ক্যানোয়িংয়ের জন্য আদর্শ কারাইকাল সমুদ্র সৈকত। ইন্দো-ফরাসি
নিদর্শনের সেরা উদাহরণ হল ফ্রেঞ্চ কলোনির ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার্স এবং সেখানকার
রাস্তাগুলি। ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারগুলি 'হোয়াইট টাউন' নামে পরিচিত। ক্যাথেড্রালের ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যের নিয়ম মেনে ফ্রেঞ্চ
ভিলাগুলি সব ধূসর, সাদা, পিচ এবং হলুদ
রঙে রাঙা। এখানকার ভারতী পার্ক, অরবিন্দ আশ্রম, লা মেসন রোজ, কিউরিও সেন্টার এবং Notre Dame
Anges ঘুরে দেখতে দারুণ লাগে।
ভারতের ভেনিস- আলেপ্পি
বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহর ইতালির ভেনিস। আর সেই ভেনিসের মতোই সুন্দর
আমাদের দেশের আলেপ্পি। কেরালার অপূর্ব সুন্দর এই শহরটি ব্রিটিশ আমল থেকেই
অত্যাধুনিক অথচ সাবেকি সাজে সজ্জিত। সচেতন নাগরিকদের কল্যাণে শহরের যৌবন এবং
সোন্দর্য্য আজও অটুট। এখানকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও অপূর্ব। লেপ্পির চারদিকে
সমুদ্র আর হ্দের ছড়াছড়ি। এখানকার নদীগুলির জল আসাম্ভব স্বচ্ছ এবং পরিবেশ।
প্রতিটি নদী, হ্রদ সমুদ্র এবং একে অপরের সঙ্গে কখনও প্রাকৃতিক
কখনও আবার কৃত্রিম উপায়ে সংযুক্ত। শহর ঘুরে দেখলে যে সমস্ত স্থাপত্য-ভাস্কর্য বা
ভবনগুলি রয়েছে সেগুলি দেখলে ইতালির সুসজ্জিত শহরের কথাই মনে কারবে। সঙ্গে পরিষ্কার
ঝকঝকে রাস্তাঘাট। আলেপ্পিতে গেলে হাউজ বোটে থাকতেই হবে। না হলে অসাধারণ অভিজ্ঞতা
থেকে বঞ্ছিত হবেন।