তেকাঠির নিচে দাঁড়িয়ে একাধিকবার
প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন তিনি। আইএসএল'এ গোল্ডেন গ্লাভ'ও তাঁর দখলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিকে নজর না দিয়ে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়াকেই পাখির চোখ
করেছেন এটিকে মোহনবাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ।
চলতি আইএসএল মরসুমে ২২ ম্যাচ খেলে
১১টি ক্লিন সিট রেখেছেন বিশাল। পরিসংখ্যান বলছে, ১১৫ মিনিট ছাড়া একটি করে গোল হজম করেছেন তিনি। তবে আসন্ন সোমবার বড়
পরীক্ষার মুখোমুখি হবে মোহনবাগান। এই ম্যাচেই বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বিশালের
জন্য। সেমি ফাইনালের প্রথম লেগে বিশাল'কে ব্যর্থ প্রমান করে
গোল দিতে পারেনি হায়দরাবাদ এফসি। আগামী ১৩ মার্চ যুবভারতীতে গোল না খাওয়ার চেষ্টায়
রয়েছেন এটিকেএমবি গোলরক্ষক।
এটিকেএমবি'র মিডিয়া টিম'কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে
বিশাল বলেন, “গোল্ডেন গ্লাভ পেয়ে ভাল লাগছে। যে কোনও
গোলকিপারের কাছেই স্বপ্ন থাকে এই সম্মান পাওয়ার। বিশ্বকাপ থেকে আইএসএল বা বিভিন্ন
প্রতিযোগিতায়, সব জায়গাতেই এতদিন দেখতাম যে, কোনও একজন গোলকিপার ওই সম্মান পাচ্ছে। আমারও স্বপ্ন ছিল এই সম্মান
পাওয়ার। জীবনে প্রথমবার এই সম্মান পেলাম। এটা হয়তো আমাকে আরও ভাল খেলতে উদ্বুদ্ধ
করবে। কিন্তু গোল্ডেন গ্লাভ পেয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। আমার সামনে এখন দুটো লক্ষা। এক
শেষ দুটো ম্যাচ নিজে অপরাজিত থাকা। দুই দুটি ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেই
লক্ষ্যেই সোমবার মাঠে নামব। মাঠে যখন নামব তখন এই সম্মানের কথা মাথায় রাখতে চাই
না। ট্রফি না পেলে এই সম্মানের কোনও দাম নেই আমার কাছে।”
বিশালের মনে করেন, তিনি গোল্ডেন গ্লাভ পেলেও নিজেকে এখনও পর্যন্ত নিংড়ে দিতে
পারেননি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “গোল্ডেন গ্লাভ পেলেও আমি
এখনও নিজের সেরা ফর্মে পৌঁছাতে পারিনি। আমার লক্ষ্য আরও ভাল
খেলা। আমি অনেক গোল সেভ করেছি বলে হইচই হচ্ছে। কিন্তু মনে করি, গোলকিপারের কাজই হল, গোল অক্ষত রাখা। সেটা আমি করেছি
মাত্র। এবং এজন্য আমি কৃতজ্ঞ দলের সতীর্থ সব ফুটবলার ও কোচেদের কাছে। তাদের জন্যই
আমি এই সম্মান পেয়েছি। আমার পাওয়া সম্মান আমি ওদেরই উৎসর্গ করতে চাই। ফুটবল দলগত
খেলা। সবাই ভাল না খেললে ম্যাচ জেতা যায় না। অনেকেই জানতে চাইছে আমি যে সেভগুলো
করেছি তার মধ্যে সেরা কোনটা। আমার মতে, গত বৃহস্পতিবার
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সেমিফাইনালের শুরুর দিকে কিয়ানিসের যে হেডটা ডানদিকে
ঝাঁপিয়ে সেভ করেছি ওটাই এই মরসুমে আমার করা সেরা সেভ। ওই বলটা বেশ কঠিন
পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল আমাকে।”
আরও পড়ুন: গৃহযুদ্ধ! PSG'র এই ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেন না এমবাপে, জেনে নিন তালিকায় কারা রয়েছেন
আরও পড়ুন: ISL 2022-23: হায়দরাবাদের ডেরায় ছাত্রদের ছন্নছাড়া খেলা দেখে হতাশ কোচ জুয়ান, দ্বিতীয় লেগে কী পরিকল্পনা জানালেন প্রীতম'দের হেডস্যার
ওড়িশার বিরুদ্ধে প্লে অফ ম্যাচে
মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছিলেন বিশাল। তাঁর অবস্থা দেখে সল্টলেক
স্টেডিয়ামের দর্শকরা চিন্তায় পড়ে যান। যদিও কিছুক্ষণ পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। এই
প্রসঙ্গে বিশাল বলেছেন, "হিমাচল
প্রদেশের মতো জায়গা থেকে উঠে এসে আমি আইএসএল-এর মতো প্রতিযোগিতায় সবুজ-মেরুন
জার্সি পরে খেলার নিয়মিত সুযোগ পাব এবং লিগের ২১ টা ম্যাচেই গোলের নিচে শুরু করব
কখনও ভাবিনি। এটা সম্ভব হয়েছে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের ভালবাসা ও সমর্থনের জন্য।
সেটা আরও বেশি করে অনুভব করলাম যুবভারতীতে ওড়িশার বিরুদ্ধে প্লে-অফ ম্যাচে মাথায়
ও কাঁধে চোট পাওয়ার পর। জীবনে কখনও ওরকম চোট পাইনি। পরে শুনলাম মাঠে পড়ে গিয়ে
আমি মিনিট দুয়েক অজ্ঞানও নাকি ছিলাম। মাঠে অ্যাম্বুলেন্সও ঢুকেছিল। এই অবস্থায়
সবাই যেভাবে আমাকে সাহায্য করার জন্য দৌড়ে এসেছিল তা দেখে আমি আপ্লুত। বিশেষ করে আমি উঠে দাঁড়ানোর পর যেভাবে সবুজ-মেরুন সমর্থকরা আমাকে
হাততালি দিয়ে এবং শ্লোগান দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তা
কোনওদিন ভুলব না। আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম কিছু পরীক্ষার জন্য। হোটেলে ফিরে ফোন
খুলে দেখি, কত মানুষ আমার সুস্থতা কামনা করে বার্তা
পাঠিয়েছেন। শুভ কামনা জানিয়েছেন। গ্লোল্ডেন গ্লান্ডের চেয়েও এই সমর্থন ও সম্মান
আমার কাছে অনেক বেশি পাওয়া। সবাইকে অনুরোধ করব, সোমবার সবাই
মাঠে আসুন। আমাদের সমর্থন করুন। শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন
করার জন্য নিজের সেরাটা দিতে আমরা সবাই প্রস্তুত। গ্লোন্ডেন গ্লাভে আমি সন্তুষ্ট
নই, সমর্থকদের হাতে ট্রফি তুলে দিতে পারলে সবথেকে তৃপ্ত
হব।"