বিগত মরসুমগুলির তুলনায় আশা জাগিয়ে এ বার শুরু করলেও সময় যত গড়াচ্ছে ততই পুরনো রোগ দেখা দিচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের। শুরুতে গোল করে এগিয়ে গেলেও ডিফেন্সের ব্যর্থতায় গোল হজমের ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতি ম্যাচে।
তারা শুরুতে গোল করে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তার পরে আর সেই ব্যবধান যে শুধু ধরে রাখতে পারছে না, তা নয়, উল্টে হেরেও যাচ্ছে।
চলতি আইএসএল-এ হারের হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। চার ম্যাচে লাল-হলুদের সংগ্রহ চার পয়েন্ট। কোচ পরিবর্তিত হচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে ফুটবলারও তবুও কেন ডিফেন্সের রোগ সারছে না ইস্টবেঙ্গলের? এই প্রশ্নটাই ঘোরা ফেরা করছে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে।
শেষ ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ৭৩ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকেও পর পর দু’মিনিটে দু’টি গোল হজম করে নিশ্চিত তিন পয়েন্ট কলিঙ্গ স্টেডিয়ামেই ফেলে আসে লাল-হলুদ। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে বেঙ্গালুরু এফসি’র বিরুদ্ধেও।
এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্প্যানিশ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত বলেছেন, “আসলে আমাদের দলে এ বার অনেক নতুন খেলোয়াড় আছে। ওদের আরও পরিণত হয়ে উঠতে হবে। এই হারটা আমাদের কাছে একটা বড় শিক্ষা। বেঙ্গালুরুতে শেষ ম্যাচেও এ রকম হয়েছিল। আমাদের মানসিক ভাবে আরও শক্তিশালী হতে হবে, যাতে এই কঠিন দলগুলোর বিরুদ্ধে ভাল খেলতে পারি।”
কোচের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়তো এই কথাগুলি ঠিকই, কিন্তু তাঁর এই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এখনও যদি দলের খেলোয়াড়রা পরিণত হয়ে উঠতে না পারেন, তা হলে গত চার মাস ধরে নিয়মিত একসঙ্গে মাঠে নেমে কী লাভ হল?
যদিও আইএসএল চ্যাম্পিয়ন কোচ কুয়াদ্রাত জানিয়েছেন তাঁর দলের এই রোগ তিনি দ্রুতই সারাবেন, বেশিদিন এই একই ভুলের পুনোরাবৃত্তি তিনি হতে দেবেন না। তাঁর কথায়, “এই ভুলগুলো শোধরাতে হবেই। গত ম্যাচে একটা পেনাল্টি আমাদের শেষ করে দিয়েছিল, এই ম্যাচে একটা ফ্রি-কিকের জন্য আমরা খেলা থেকে হারিয়ে গেলাম। এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাদের। প্রতি ম্যাচে এমন হতে দেওয়া যাবে না।”
বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে যতটা ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল তারা এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে কিন্তু ততটা ভাল খেলতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। বেঙ্গালুরুতে সে দিন হারার মতো পারফরম্যান্স ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। তারা যে হোম টিমের কাছে আত্মসমর্পণ করে, তা একেবারেই বলা যায় না। তা সত্ত্বেও হেরেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
সেই ম্যাচের পর কুয়াদ্রাত বলেছিলেন, “আমার ভাল লাগছে যে, আমরা আজ সব দিক থেকেই আধিপত্য বিস্তার করেছি। বেঙ্গালুরু যেখানে চারটে শট মেরেছে, সেখানে আমরা ১২টা শট মেরেছি। এর মধ্যে দুটো শট আমরা লক্ষ্যে রাখতে পেরেছি। এই সংখ্যাটা আমাদের বাড়াতে হবে। তবে আমার দলের ছেলেদের কোনও দোষ দেব না। তাদের চাপে ফেলতেও চাই না আমি। সমর্থকদের এবং আমাদেরও সবাইকে বুঝতে হবে, ফুটবলে এ রকমই। বক্সের মধ্যে কে কী রকম খেলছে, তার ওপর নির্ভর করে সব কিছু। ওরা দুটো শট গোলে রেখেছে, দুটো থেকেই গোল পেয়েছে। আমরা কিন্তু অনেক সুযোগ হাতছাড়া করেছি।”
এই সুযোগ নষ্ট করাও ইস্টবেঙ্গলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারার অন্যতম একটি কারণ। এখনও পর্যন্ত তারা চারটি ম্যাচে মাত্র এগারোটি শট গোলে রাখতে পেরেছে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে ২২টি শট। ৩২টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে তারা, যার মধ্যে গোলে পরিণত হয়েছে মাত্র চারটি। যতই তাদের আক্রমণ বিভাগ খাতায় কমমে শক্তিশালী হোক না কেন, এই পরিসংখ্যানে উন্নতি না ঘটাতে পারলে এ মরশুমেও ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে প্রথম ছয়ে থাকা কঠিন হবে।
আক্রমণে উঠে ফের নেমে আসার (ট্রানজিশন) গতিও বেশি না হওয়াটা তাদের একটা বড় সমস্যা ইস্টবেঙ্গলের জন্য। যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে প্রতি আক্রমণ উঠে গোল করাটাও ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষদের কাছে সহজ হয়ে উঠছে। রক্ষণও আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন তাদের। এ পর্যন্ত চারটি গোল করলেও পাঁচটি গোল খেয়েছে ইস্টবেঙ্গল। অনুশীলনে এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে তাদের।