লিগ শিল্ড জেতা মোহনবাগানের স্বপ্নের কামব্যাকের সাক্ষী থাকল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ। আইএসএল-এর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দাপটের সঙ্গে ওড়িশা এফসি’কে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল গঙ্গাপেরারের ক্লাব। একই সঙ্গে টানা দ্বিতীয় বার আইএসএল ফাইনালে পৌঁছে গেল মোহনবাগান।
এক গোলে পিছিয়ে ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিল অ্যান্তোনিও হাবাস অ্যান্ড কোম্পানি। এক গোলে পিছিয়ে থেকে ঘরের মাঠে সার্জিও লোবেরার দলকে হারিয়ে ফাইনালের নিজেদের স্থান নিশ্চিত করতে অনেক বেশি আগ্রাসী ফুটবল খেলা প্রয়োজন ছিল মোহনবাগানের। সেই কাজটা সঠিক ভাবে পালন করতে কোনও ভুল করেননি জেসন কামিন্স-দিমিত্রি পেত্রাতোস’রা। শুধু আক্রমণাত্মক ফুটবলই নয়, ডিফেন্সে মাথা ঠাণ্ডা করে একের পর এক বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ইউস্তে-আনোয়ার’রা। মূলত দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দশ মিনিট ওড়িশা যে ভাবে চেপে ধরেছিল এবং বাগান ডিফেন্স যে ভাবে তার মোকাবিলা করেছে তাতে ফাইনালে নামার আগে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় থাকবে বাগানের ডিফেন্স।
ম্যাচের প্রথম গোলটি মোহনবাগান পায় ২৫ মিনিটে। বক্সের বাইরে থেকে দিমিত্রি পেত্রাতোসের নেওয়া ডান পায়ের জোড়াল শট অমরিন্দর বাঁচালে বক্সের মধ্যে থাকা জেসন কামিন্স সুযোগসন্ধানী স্ট্রাকারের মতো বাম পায়ে তা জড়িয়ে দেন জালে। ৩৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও লিস্টন কোলাসোর শট প্রথম পোস্টে বাঁচান অমরিন্দর। লিস্টন যদি একক দক্ষতায় এই প্রচেষ্টা না করে বক্সের মধ্যে পাস বাড়াতেন তা হলে বিপদ সৃষ্টি হতে পারত ওড়িশার জন্য।
মোহনবাগানের লাগাতার আক্রমণের মধ্যে প্রতিআক্রমণে গোল সুযোগ চলে এসেছিল ওড়িশার সামনে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে গোল লাইন সেভ দেন হেক্টর ইউস্তে।
প্রথমার্ধে যে আগ্রাসী মোহনবাগানকে দেখা গিয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে দ্বিতীয়ার্ধে। ৫৩ মিনিটে অল্পের জন্য দ্বিতীয় গোল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন পালতোলা নৌকার সাওয়ারিরা। মনবীরের পাস থেকে অনিরুদ্ধ থাপার মাথা ঘেঁসা হেড দ্বিতীয় পোস্টে গা ঘেসে বেরিয়ে যায়। ক্রমাগত আক্রমণের ওঠার ফলে মোহনবাগান সুযোগ যেমন পেয়েছে তেমন মিসও করেছে। ৬৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে পেত্রাতোসের ফ্রি-কিক বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৭৫ মিনিটে আবার সুযোগ পায় মোহনবাগান। নিশ্চিত গোল থেকে মোহনবাগানকে এ ক্ষেত্রে বঞ্চিত করেন অমরিন্দর সিং। দিমিত্রির ফ্রি কিক থেকে হেক্টরের হেড লাফিয়ে ডান হাতের স্পর্শে বাঁচান পঞ্জাব তনয়। এই সেভটি-ই এই ম্যাচের সেরা সেভ। ৭৫ মিনিট থেকে পরবর্তী দশ মিনিট অর্থাৎ ৮৫ মিনিট পর্যন্ত খেলার গতির বিপরীতে মোহন ডিফেন্সে চাপ সৃষ্টি করে ওড়িশা, তুলে আনে একের পর এক বিপদের গন্ধমাখা বল। বিশেষ করে বক্সের মধ্যে রয় কৃষ্ণ যে ভাবে বিপদ তৈরির চেষ্টা করছিলেন তা থেকে যে কোনও সময় গোল আসতে পারত। কিন্তু এখানেই পার্থক্য করে দেয় বড় দল। যে দল চলতি মরসুমে দুটি খেতাব জিতে নিয়েছে, চ্যাম্পিয়নশিপের গন্ধ পাচ্ছে সেই দল জানে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কী করণীয় এবং দক্ষতার সঙ্গেই সেই কাজটা করলেন ইউস্তে-শুভাশিসরা।
৬২ হাজার সমর্থককে স্বস্তিতে দিয়ে বহু কাঙ্খিত দ্বিতীয় গোলটি মোহনবাগান পায় দ্বিতীয়ার্ধের সংযুক্ত সময়ে। ৯০+৩ মিনিটে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নামা সাহাল আব্দুল সামাদ বহু কাঙ্খিত গোলটি করেন। ৭২ মিনিটে অনিরুদ্ধ থাপার পরিবর্তে নামেন সাহাল। মোহনবাগান জিতলেও যে ভাবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তা শুধুই অমরিন্দরের জন্য। ও়ড়িশার গোলের নীচে অমরিন্দর না থাকলে অনেক আগেই ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলত মোহনবাগান।