সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। সাদা-কালো
টিভি’র বদলে ঘরে এসেছে কালারিং টিভি, উন্নত হয়েছে গ্রাম-শহর-নগর থেকে রাস্তাঘাট, পরিকাঠামোয়
আমূল বদল এসেছে ফুটবলের মাঠ এবং স্টেডিয়ামে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র
ছাপ পড়েনি। আজ (সোমবার, ৩০ অক্টোবর) সেই দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা’র ৬৩তম জন্মদিন।
যাঁকে ‘ফুটবলের রাজপুত্র’ হিসেবে চেনে গোটা বিশ্ব।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন মারাদোনা।
তারপর থেকে ফুটবলের মাধ্যমে এক উপন্যাস তৈরি করে গিয়েছেন তিনি। ১৯
বছর বয়সেই আর্জেন্টিনার হয়ে যুব বিশ্বকাপ জিতেন তিনি। যেখানে গোল্ডেন বলের খেতাবও
উঠেছিল মারাদোনার হাতে। পরে ১৯৮৬
সালে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতেন তিনি। ১৯৯০-এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা’কে ফাইনালে
তোলার নেপথ্য কারিগর ছিলেন মারাদোনা’ই। এ তো গেল সাফল্যের বিষয়। তবে তাঁর খেলাকে কেন্দ্র
করে একাধিকবার বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব ফুটবল মহলে। যার মধ্যে অন্যতম ‘হ্যান্ড অফ গড’।
১৯৮৬’র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের
বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে দুরন্ত জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।
পিটার শিল্টনের মাথার উপর দিয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন
মারাদোনা। প্রায় প্রত্যেকেই হ্যান্ড বল-এর
দাবি জানিয়েছিলেন কিন্তু তিনি অনেক পরে হেসে
উত্তর দিয়েছিলেন ‘হ্যান্ড অফ গড’! যদিও দ্বিতীয় গোলটা ছিল ম্যাজিকের মতো। পাঁচ জন ইংরেজ ফুটলারকে অনায়াসে মাটি
ধরিয়ে গোল করেছিলেন তিনি। শতাব্দীর সেরা
গোলের স্বীকৃতি পেয়েছিল সেই গোল। ফাইনালে ৩-২ গোলে পশ্চিম
জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা।
I-League 2023-24: আইজল'কে হারিয়ে আই লিগ অভিযান শুরু করল মহমেডান
ICC ODI World Cup 2023: বুমরাহ-শামির আগুনে বোলিংয়ের সামনে ভস্মীভূত ইংল্যান্ড, ছয়'এ ছয় ভারতের
১৯৯০’এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা’কে ফাইনালে তুললেও
ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ে ইতালির ফুটবলে ১৫ মাসের জন্য ব্যান করা হয়েছিল তাঁকে। সেই বছর
বিশ্বকাপ হয়েছিল ইতালি’তেই। প্রতিপক্ষ ছিল সেই পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু সে বার রানার্স
হয়েও দেশে ফিরতে হয়েছিল মারাদোনা’দের।
ফুটবল কেরিয়ারের সায়াহ্নে ২০০৮ সালে কলকাতায় এসেছিলেন
মারাদোনা। শহরে এসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় একটি ফুটবল
অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করেছিলেন ‘ফুটবলের রাজপুত্র’। সেখানে স্মৃতির উদ্দেশ্যে
একটি সিমেন্টে বেদির উপর তাঁর পায়ের ছাপ নেওয়া হয়েছিল। যা এখন কীরকম অবস্থায় রয়েছে,
তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য কলকাতা সফরে আসেন আর্জেন্টাইন
মহারথী। সে বার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় একাদশের বিরুদ্ধে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছিলেন
তিনি। সেকালের সাদা-কালো টিভি’তে খেলা দেখা সেই মহাতারকাকে সামনে থেকে দেখতে কলকাতায়
উপছে পড়েছিল ভিড়। সেই দিনেই স্মৃতি হয়তো আজও মনে রেখেছে এই শহরবাসী। তবে মহাকাব্যিক
এই অধ্যায়ের শেষটা বড়ই আকস্মিক! ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর হঠাৎই যেন থেমে গেল সবকিছু।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন ‘ফুটবলের রাজপুত্র’। তবে ইহলোক ছেড়ে পরলোকে গমন করলেও
তিনি আজও রয়ে গিয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমীদের হ্রদয়ে।