আইপিএল-এর গৌরবময় ইতিহাসে যুক্ত হল আরও এক স্মরণীয় অধ্যায়। মঙ্গলবার নৈশালোকে উদ্ভাসিত ইডেন গার্ডেন্স যেমন সাক্ষী থাকল সুনীল নারিনের বিধ্বংসী ব্যাটিং তাণ্ডবের, তেমনই দেখল হারা ম্যাচ একার কাঁধে ভর করে রাজস্থান রয়্যালসকে জেতানো জস বাটলারের ঈশ্বরীয় ইনিংসের। একজন বিশ্বমানে ক্রিকেটার কী ভাবে কার্যত হারা ম্যাচ ছিনিয়ে আনতে পারে প্রতিপক্ষের ডেরা থেকে তার সাক্ষী থাকল ক্রিকেটের নন্দনকানন।
মঙ্গলবার ৪৯ বলে শতরান পূর্ণ করেন নারিন। আইপিএল কেরিয়ারে এটি তাঁর প্রথম শতরান। সতীর্থের সংহার মূর্তি দেখে রাসেলের মতো বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান জড়িয়ে স্বদেশি ক্রিকেটারকে। ১০৯ রানে বোল্ড হয়ে নারিন যখন প্যাভিলিয়নের রাস্তা ধরলেন ধরলেন তখন কলকাতার রান ১৯৫/৫। নারিনকে ডাগআউটের রাস্তা দেখিয়ে সেই উইকেট সেলিব্রেট না করে প্রতিপক্ষের ত্রাসকে হ্যান্ডসেক করে অভিনন্দন জানান বোল্ট। ক্যারিবিয়ান তারকার চওড়া ব্যাটের উপর ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে ২২৩/৬ রান তোলে কেকেআর। নারিন ছাড়া নাইট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে উল্লেখ্য রান করেন অঙ্গকৃশ রঘুবংশী (৩০) এবং রিঙ্কুসিং (২০*)। এ দিন ফের ব্যর্থ হয়েছেন নাইট অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। ৬ বলে ১১ রান করেন শ্রেয়স। রাজস্থানের হয়ে দুইটি করে উইকেট নেন আভেষ খান, কুলদীপ সেন এবং একটি করে উইকেট শিকার করেন ট্রেন্ট বোল্ট এবং যুজবেন্দ্র চাহাল।
পাহাড়প্রামাণ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লে-এর মধ্যেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় রাজস্থান। ছন্দে থাকা যশস্বী জসওয়াল শুরুটা ভাল করলেও দীর্ঘক্ষণ সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। ৯ বলে ১৯ রান করে বৈভব অরোরার বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই বামহাতি ক্রিকেটার। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হন সঞ্জু স্যামসন (১২)। হার্ষিক রানার বলে নারিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ডাগআউটের রাস্তা ধরেন রাজস্থান অধিনায়ক। ধুকতে থাকা রাজস্থান ইনিংসের হাল ধরেন ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে ওপেন করতে নামা জস বাটলার এবং রিয়াল পরাগ। ২৩ বলে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে এই জুটি। রাজস্থানের নড়বড়ে ইনিংসকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে ১৪ বলে ৩৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রিয়ান। এর পর ফের ধস নামে রাজস্থানের ব্যাটিংয়ে। ২ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ধ্রুব জুরেল, ৮ রানে রবিচন্দ্রন অশ্বিন উইকেট দেন বরুণ চক্রবর্তীকে। এর ঠিক পরের বলেই গোল্ডেন ডাকে ফেরেন সিমরণ হেটমায়ার। এই চাপের ম্যাচে বহু টি-২০ ম্যাচের অভিজ্ঞতা সমপন্ন হেটমায়ারের থেকে এমন পারফরম্যান্স আশা করা যায় না। কিন্তু তখনও রাজস্থানের আশা টিকে ছিল কারণ ক্রিজে যে ছিলেন জস বাটলার। একদিক থেকে উইকেটের পতন ঘটলেও রানের গতিতে ছেদ পড়তে দেননি ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যান। ২৬ রান করা রোভমান পাওয়েল বাটলারের কাজ কিছু সহজ করলেও তিনিও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সুনীল নারিনের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ডাগ আউটে ফেরেন। পরবর্তী তিন ব্যাটসম্যানই ছিলেন টেলেন্ডার। কেকেআর-এর জয় এবং রাজস্থানের হারের মধ্যে তখনই একটাই বাধা। এই ধরণের চাপের ম্যাচে তাঁদের উপর ভরসা রাখা যায় না। রানরেট মাথায় রেখে বাটলার যেমন ব্যাট চালিয়েছেন তেমনই সুযোগ বুঝে শেষ বলে সিঙ্গল নিয়ে স্ট্রাইকও রেখেছেন নিজের কাছে। রানের সুযোগ থাকলেও নিজের কাছেই রাখেন স্ট্রাইক এবং তাঁর সিদ্ধান্তে যে কোনও ভুল ছিল না তার প্রমাণ ২ উইকেটে রাজস্থানের জয়।
কলকাতার জার্সিতে এ দিনও ফিকে মিচেল স্টার্ক। বিশ্বকাপ জয়ী অজি পেসারের থেকে আরও বেশি পরিপক্কতা আশা করা হয়েছিল কিন্তু স্টার্ক একাই ৪ ওভারে দিলেন ৫০ রান। নাইটদের হয়ে দুইটি করে উইকেট শিকার বরুণ চক্রবর্তী, হর্ষিত রানা এবং সুনীল নারিনের। একটি উইকেট পান বৈভব অরোরা।
এই ম্যাচের ফলাফলের উপর ভর করে লিগ টেবিলের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ৭ ম্যাচে ৬টি জয় পেয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে রইল রাজস্থান রয়্যালস। অন্য দিকে, ৬ ম্যাচে ৪টি জয়ের সৌজন্যে ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে দ্বিতীয় স্থানের রইল কেকেআর।