আইপিএল-এ জয়ের সরণিতে ফিরল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ইডেন গার্ডেন্সে দিল্লি ক্যাপিটলসকে ৭ উইকেটে পরাজিত করল পার্পেল আর্মি। ইডেনের এই ম্যাচে দুই দলের ক্রাউডপুলার সে অর্থে কেউ না থাকলেও শহরবাসী হোম দলের সমর্থনের পাশাপাশি মাঠ ভরিয়েছিলেন বাদশা বনাম মহারাজের দ্বৈরথের সাক্ষী থাকতে।
শাহরুখকে দেখার জন্য শহরবাসী প্রথম ম্যাচ থেকেই ভিড় জমিয়েছে ইডেনে কিন্তু বাংলার ঘরের ছেলে সৌরভ যখন খোদ উপস্থিত থাকবেন ইডেনে প্রতিপক্ষের ডাগআউটে তখন সেই ম্যাচ শহরের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে অলাদা উন্মাদনা সৃষ্টি করবে সেটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক ভাবে স্টেডিয়ামের সিংহভাগ দখল নাইট সমর্থকদের কাছে থাকলেও সৌরভের দল দিল্লি ক্যাপিটলসের সমর্থকদের হাজিরাও কম ছিল না নন্দনকাননে।
এ দিন টসে জিতে কিছুটা ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেন ঋষভ পন্থ। চলতি আইপিএল-এ এখনও পর্যন্ত ইডেনে টসে জিতে কোনও দল প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেননি। যেমন ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত তেমনই ব্যতিক্রমী ব্যাটিং দেখা গেল দিল্লির। যে পিচে দু’শোর উপর রান সহজেই তুলছে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি সেখানে দিল্লির ইনিংসের সমাপ্তি ঘটল ১৫৩/৯ রানে।
দিল্লির কোনও ব্যাটসম্যান এই ম্যাচে দাঁড়াতে পারেননি। ওপেনিং পেয়ারে বদল এনেছিল দিল্লি। জ্যাক ফ্রাসার-ম্যাকগ্রুকের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন পৃথ্বী শ। প্রথম ওভারে শুরুটা পৃথ্বী (১৩) ভাল করলেও ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করতে পারেননি। ছন্দে থাকা ম্যাকগ্রুকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একই কথা। ১২ রানে মিচেল স্টার্কের বলে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। ওপেনিং জুটির মতোই ব্যর্থ মিডল অর্ডার। সাই হোপ (৬), অক্ষর প্যাটেল (১৫), ত্রিস্টন স্টাবস (৪) কেউই নাইট বোলারদের সামনে প্রতিরোধ তৈরি করতে পারেননি। ঋষভ পন্থ এবং অভিষেক পোড়েল ধুকতে থাকা ব্যাটিংকে অক্সিজেন জোগানোর চেষ্টা করলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজেদের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন নাইট বোলারদের। ঘরের মাঠে অভিষেক পোড়েল বৈচিত্রপূর্ণ শট খেলতে গিয়ে ১৮ রানে ডাগ আউটে ফেরেন। ঋষভ পন্থ আউট হন ২৭ রানে। প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মধ্যে দিল্লির ইনিংসকে সম্মানজনক রানে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে অবদান রাখেন কুলদীপ যাদব। দিল্লির এই ম্যাচে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী তিনি। তাঁর অপরাজিত ৩৫ রানের সৌজন্যে দেড়শো রানের গণ্ডি টপকায় দিল্লি।
দিল্লির ব্যাটিংয়ে ধস নামানোর প্রধান দুই কারিগর বরুণ চক্রবর্তী। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তিন উইকেট তুলে নেন বরুণ। বৈভব অরোরা এবং হর্ষিত রানা নেন দুইটি করে উইকেট। একটি করে শিকার মিচেল স্টার্ক এবং সুনীল নারিনের।
মাত্র ১৫৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেবে ৩.৩ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় নাইট রাইডার্স। ওপেনিং জুটিতে ফিল সল্ট এবং সুনীল নারিন তোলেন ৭৯ রান। অল্প রান সম্বল করে ইডেনের মাঠে ম্যাচ জিততে হলে অনেক বেশি শৃঙ্খলার প্রয়োজন ছিল দিল্লির বোলিংয়ে এবং একই সঙ্গে ফিল্ডারদের নিজেদের ছাপিয়ে যেতে হত। এর কোনওটাই হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই ফিল সল্টের ক্যাচ মিস করেন লিজার্ড উইলিয়ামস। এই ক্যারিবিয়ান বোলারই প্রথম ওভারে ২৩ রান হজম করে নাইট রাইডার্সের রানের মুখ খুলে দেন।
সুনীল নারিন সোমবার ব্যাট হাতে বিশেষ অবদান রাখতে পারেননি। অক্ষর প্যাটেলের বলে ১৫ রানে আউট হন তিনি। ১৫ রানের মাথায় সল্টের ক্যাচ মিস করার খেসারত বেশ ভাল ভাবে দিতে হয় দিল্লিকে, বিস্ফোরক এই ইংলিশ ব্যাটার করেন ৬৮ রান। এই ম্যাচেও ব্যর্থ হয়েছেন রিঙ্কু সিং (১১)। পর পর দুই ওভারে দুই উইকেট হারালেও জিততে কোনও সমস্যা হয়নি কেকেআর-এর। শ্রেয়স আইয়ার (৩৩) এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার (২৬) শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দেন শাহরুখ খানের দলকে। ম্যাচ শেষে পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করে সমর্থকদের উষ্ণঅভ্যর্থনা গ্রহণ করেন বাদশা, একই সঙ্গে নিজের ছন্দে ইডেনের গ্যালারিকে মোহিত করেন।মাঠ ছাড়ার আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে জড়িয়ে ধরেন শাহরুখ এবং দীর্ঘক্ষণ দাদার সঙ্গে নানান বিষয়ে আলোচণা করতে দেখা যায় তাঁকে।
এই জয়ের ফলে ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকল কলকাতা নাইট রাইডার্স।