জেতা ম্যাচ ড্র করে মাঠ ছাড়ল মোহনবাগান। ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি’র বিরুদ্ধে প্রথমে এগিয়ে গিয়েও ৩-২ গোলে হেরে লিগ শিল্ডের লড়াইয়ে অ্যাডভান্টেজ নিতে ব্যর্থ হল সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা।
জ্বরের কারণে অ্যান্তোনিও লোপেজ হাবাস এই ম্যাচে ডাগ আউটে ছিলেন না। হাবাসের অনুপস্থিতিতে তাঁর সহকারী ম্যানুয়েল পেরেজ প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন। হাবাসের অনুপস্থিতি কতটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে তা বোঝা গেল রবিবারের ম্যাচে। এ দিন প্রথম ৬০ মিনিট যতটা ভাল খেলে মোহনবাগান, ততটাই খারাপ পারফর্ম করে শেষ ৩০ মিনিট। যার খেসারত এই হার।
প্রত্যাশা মতো শুরু থেকে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে রেখেছিল সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা। ক্রমাগত আক্রমণ তুলে আনার ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করেনি বাগান মাঝমাঠ যার নেতৃত্বে দিয়েছেন জনি কাউকো। তাঁর অন্তর্ভুক্তি বদলে দিয়েছে সবুজ-মেরুন মাঝমাঠকে, প্রতি ম্যাচেই নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন কাউকো। রবিবার যেমন একের পর এক আক্রমণের ঠিকানা লেখা পাস বাড়ানোর পাশাপাশি মোহনবাগানের প্রথম গোলটিও করেন কিনি। ২৯ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর ঠিকানা পাস ধরে ডান পায়ের শটে গোল করেন ফিনল্যান্ডের এই বিদেশি।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটও বাগান ফুটবলারদের দাপট ছিল। এই সময়ে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও সেগুলি ক্লিয়ার চান্স ছিল না যা থেকে গোল হতে পারে। শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব খেলা থেকে হারিয়ে যেতে থাকে ৬০ মিনিটের পর থেকে। প্রতিপক্ষকে অনেকটা হালকা ভাবে নেওয়ার খেসারত দিতে হয় এর পর থেকেই। মোহনবাগানের মতো বড় বাজেটের দল নয় চেন্নাইয়িন। তাঁদের হাতে গোলাবারুদও সীমিত। কিন্তু সেই সীমিত ক্ষমতা দিয়েও বিগ বাজেটের দলকে হারানো যায় তা দেখিয়ে দিলেন স্কটিশ কোচ ওয়েন কয়েল। ৬৭ মিনিটে চেন্নাইয়িনের পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে রহিম আলি, আয়ূষ অধিকারী এবং সার্থক গলুই নামার পর চেন্নাইয়িনের খেলা ঘুরে যায়। কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলে ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সঠিক পাসের গুরুত্ব অপরিসীম। চেন্নাইয়িনের প্রথম গোলটির ক্ষেত্রেও ছিল ব্যক্তিত্ব দক্ষতার পরিচয়। ৭২ মিনিটে কনর শিল্ডসের পাস ডান প্রান্ত বরাবর পাস ধরে একক দক্ষতায় দীপক টাংরিকে ইনসাইড ডজ করে বক্সে নিয়ে পৌঁছে ফের আউট সাইড ডজ করে ডান পায়ের জোরালো শটে বল জালে জড়িয়ে দেন জর্ডান মারে। বিশ্বমানের এই গোলের পর মারের কাছেই সুযোগ এসেছিল দলকে এগিয়ে দেওয়ার। এই গোলের কিছু মিনিটের মধ্যে মারের হেড দারুণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন বাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ। চেন্নাইয়িন দ্বিতীয় গোলটি পায় ৮০ মিনিটে। রাফায়েল ক্রিভেলারোর কর্নার থেকে হেডে গোল করে যান রায়ান এডওয়ার্ড। ম্যাচের বয়স তখন ৯০+৪, গোটা স্টেডিয়াম যখন ধরে নিয়েছে ম্যাচ হারতে চলেছে বাগান তখন পেনাল্টি অর্জন করে মোহনবাগান। দিমিত্রি পেত্রাতোস গোল করে দলকে সমতায় ফেরাতে কোনও ভুল করেননি। কিন্তু তখনও ম্যাচে নাটকীয় পট পরিবর্তন হতে পারে তা হতো কেউই আন্দাজ করতে পারেননি। ৬ মিনিট অতিরিক্ত সময় দিয়েছিলেন রেফারি। এমন সময়ে পরিবর্তন ফুটবলার হিসেবে নামা ইরফান ইয়াদওয়াদের লক্ষ্যে ফাঁকায় বল বাড়ান আয়ূষ অধিকারী। বিশাল কাইথ এগিয়ে আসার ফলে মোহনবাগানের বক্স অরক্ষিত হয়ে গিয়েছিল। একা বল টেনে নিয়ে গোল করতে ভুল করেননি ইরফান। হাতে যা কিছু সময় ছিল তাতেই সবুজ-মেরুন মরিয়া হয়ে উঠেছিল গোল শোধ করার জন্য। কিন্তু দেবজিৎ মজুমদারের পর পর দুইটি সেভ তাঁদের সমস্ত লড়াইয়ে পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।