ভুবনেশ্বর: মরসুমের প্রথম ডার্বিকে চরম নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচের সাক্ষী থাকল দেশ। পিছিয়ে থেকে মোহনবাগানকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে সুপার কাপের শেষ চারে পৌঁছল ইস্টবেঙ্গল। সুপার কাপে নিজেদের গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভুনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান। এই ম্যাচের উপরই নির্ভর করছিল দুই প্রধানের মধ্যে কোন দল শেষ চারে খেলার ছাড়পত্র পাবে। ফলে প্রতিবেশী রাজ্যের মাঠে ঘটি-বাঙালের দ্বৈরথ যে অন্য মাত্রা পাবে তার অনুমান করা কঠিন নয়। শুক্রবারের কলিঙ্গ সেই অনুমানকে সত্যি করেই সাক্ষী থাকল সেই মেগা লড়াইয়ের।
মোহনবাগান খাতায় কলমে কিছুটা পিছিয়ে শুরু করলেও ইস্ট-মোহন দ্বৈরথে যে কোনও হিসেবই খাটে না আরও একবার প্রমাণ করে দিল এই দিনের ডার্বি। তারুণ্যে ভরা দল নিয়ে ম্যাচের শুরুর কুড়ি মিনিট ক্রমাগত আগ্রাসী ফুটবল খেলে মোহনবাগান। প্রায় পূর্ণ শক্তির ইস্টবেঙ্গলকে চেপে ধরে, এর ফলও পায় সবুজ-মেরুন শিবির। ১৯ মিনিটে দিমিত্রি পেত্রাতোসের কর্নার থেকে ব্যাক হিলে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন হেক্টর ইউস্তে। বড় ম্যাচে সাধারণত প্রতিপক্ষ মাঝমাঠের দখল নিয়ে নিলে সেই ম্যাচে নতুন করে মাঝমাঠ নিজেদের কব্জায় আনা অনেকটা কঠিন কাজ। তবে, ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত ছিলেন। প্রথম কুড়ি মিনিটের পর ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ। গোল হজমের পর আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ান নিশু কুমার-ক্লেটন সিলভারা। এরই সুবাদে ২৫ মিনিটে দুরন্ত টার্নে বিশ্বমানের গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে সমতায় ফেরান ক্লেটন সিলভা।
ম্যাচে সমতা ফিরে আসার পরে দুই দল ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়েছে একধিপত্য প্রতিষ্ঠার। কিন্তু বল এ দিন পেন্ডুলামের মতো দুলেছে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। প্রথমার্ধের অ্যাডেড টাইমের অন্তিম মুহূর্তে বক্সের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের হ্যান্ড বল করেন। স্পট কিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি দিমিত্রি। কিন্তু তাঁরই সতীর্থ গোলের আগে বক্সে ঢুকে পরায় সেই গোল বাতিল করেন রেফারি। দ্বিতীয় বার নেওয়া দিমিত্রির শট বারে লেগে ফিরে আসে।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গলের অ্যাটাকিং লাইন। মোহনবাগানকে এই অর্ধের শুরু থেকেই চাপে রাখেন সাউল ক্রেস্পো-নন্দ কুমাররা। ডিফেন্স-মাঝমাঠ-ফরোয়ার্ড এতটাই তালমিল ছিল দেখে মনে হচ্ছিল যেন পুরোটাই একই সুতোয় বাঁধা। পিছিয়ে ছিল না মোহনবাগান-ও। সুযোগ পেলেই ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন সাদিকু-দিমিত্রিরা। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে ২-১ গোলে এগিয়ে য়ায় ইস্টবেঙ্গল। বোরহা হেরেরা বাম পায়ের শট পোস্টে লেগে ফিরে এলে বল উপর চোখ রাখা নন্দ কুমার ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তা জড়িয়ে দেন জালে। এই গোলের পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি সবুজ-মেরুন। পাল্টা সময় যত এগিয়েছে ততই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে ইস্টবেঙ্গল। মুহূর্মুহু আক্রমণে একটা সময়ে দিশাহার দেখিয়েছে মোহনবাগান রক্ষণকে। ৮০ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গলকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন ক্লেটন সিলভা। হিজাজি মাহেরের হেড মোহনবাগান গোলরক্ষক অর্শ আনওয়ার গ্রিপ করতে ব্যর্থ হলে তার হাত থেকে বেরিয়ে আসা বল জালে জড়াতে ভুল করেননি ক্লেটন। যে ভাবে ইস্টবেঙ্গল চেপে ধরেছিল তাতে আরও একটি গোল নিঃসন্দেহে হতেই পারত কিন্তু কোনও রকমে পরিত্রাণ পায় পালতোলা নৌকার সাওয়ারিরা। এই ম্যাচে জয়ের ফলে ২৪ জানুয়ারি জামশদপুর এফসির বিরুদ্ধে এই মাঠে সুপার কাপের সেমিফাইনাল খেলবে ইস্টবেঙ্গল।