শনিবাসরীয় বৃষ্টি মুখোরিত
সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে জ্বলে উঠল মশাল। দীর্ঘ প্রায় চার বছর
পর যুবভারতীর রঙ আবার লাল-হলুদ। ২০১৯-এ শেষ বার ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা ডার্বি জয়ের
স্বাদ পেয়েছিলেন। এরপরের সময়টা শুধু হতাশায় মোরা লাল-হলুদ প্রেমীদের জন্য। টানা
আটটি ডার্বিতে হারের পর অবশেষে ডুরান্ডে খরা কাটালো মশালবাহিনী। এ দিন সন্ধ্যায়
কুয়াদ্রাদের দামাল ছেলেরা প্রমাণ করলেন কাগজ কলমে নয় খেলাটা হয় মাঠে।
মরসুমের প্রথম ডার্বিতে একেবারে
অন্য মেজাজে পাওয়া গেল ইস্টবেঙ্গলকে। ঐতিহ্যের ম্যাচে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের
বিচারে ইস্টবেঙ্গলকে পিছিয়েই রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করা
লাল-হলুদের খেলা সম্পূর্ণ পাল্টে যায় মাঠে নামার সঙ্গে। যে ফুটবলটা শনিবার খেলল
ইস্টবেঙ্গল তা গত তিন মরসুমে খেলেনি লাল-হলুদ।
Durand Cup 2023: নজিরবিহীন দৃশ্য! ডার্বি জয়ের পর যুবভারতীর সবুজ গালিচার দখল নিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা
ভারতের জার্সিতে সুনীল'দের সাফল্যের পিছনে কীসের অবদান রয়েছে? জানালেন রোহিত
পাসিং ফুটবল থেকে প্রেসিং কিংবা
মাঝমাঠের দখল রাখার লড়াই দেখে মনে হতে বাধ্য পুরনো ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যাচ্ছে
কার্লোস কুয়াদ্রাদের কোচিংয়ে। মোহনবাগানের তারকাখচিত দলকে প্রথমার্ধে সম্পূর্ণ
বোতলবন্দী করে রাখেন জর্ডান-হরমনজোৎ সিং খাবরারা। এরই মধ্যে ২৩ মিনিটে হুগো বুমস
এবং ৩১ মিনিটে মনবীর সিং-এর নেওয়া শট লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হয়। সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গলও।
১৯ মিনিটে সিভেরিওয়র শট ব্লক করেন ব্রেন্ডন হ্যামিল। ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট
প্রতিপক্ষকে মেপে নেওয়ার ফুটবল খেলে দুই দল। দুই স্প্যানিশ কোচের নোট বুকে নিশ্চিত
ভাবে উঠে এসেছিল প্রতিপক্ষের এক-একটি দুর্বল পয়েন্ট। তবে, দুই ক্ষুরধারের কোচের
মস্তিকের লড়াইয়ে ফেরান্দোকে টেক্কা দিয়ে গেলেন কুয়াদ্রাদ।
প্রতিপক্ষকে দেখে নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে
অনেক বেশি আক্রমণে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদে ক্রমাগত আক্রমণে মোহনবাগানের ডিফেন্সের
ফাঁক ফোকর প্রকট হয়ে পড়ছিল। যার সুযোগ দুর্ধর্ষ ভাবে কাজে লাগান নন্দকুমার। ৬০
মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাকে ক্রেস্পোর পাস থেকে একক প্রচেষ্টায় দুর্দান্ত
টেনে বাম পায়ের ইনসুইংয়ে দ্বিতীয় পোস্টে মোহনবাগানের জাল কাঁপিয়ে দেন ওড়িশা এফসি
থেকে খেলতে আসা এই ফুটবলার।
জুনিয়র দল নিয়ে ডুরান্ড অভিযান
শুরু করা মোহনবাগান. ডার্বিতে পুরো সিনিয়র দলকেই মাঠে নামিয়েছিল। দুই জোরা ফলা দিমিত্রি
পেত্রাতোস এবং জেসন কামিংসকে রিজার্ভে রাখলেও পিছিয়ে পড়ে তাদেরও মাঠে নামিয়ে দেন
ফেরান্দো। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। বরং আরও বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবলের
উপর জোর দেয় ইস্টবেঙ্গল। ময়দানের প্রাচীন প্রবাদ ব্যাকফুটে থাকা ইস্টবেঙ্গল খোঁচা
খাওয়া বাঘের থেকেও ভয়ঙ্কর, সেই প্রবাদটি এই দিন আবারএ প্রমাণিত হল।
গত ক’দিন ধরে রাস্তাঘাটে কম বিদ্রুপ হয়নি ইস্টবেঙ্গল ব্রিগেডকে নিয়ে। কিন্তু
শুক্রবার ইস্টবেঙ্গলের অভিজ্ঞ স্প্যানিশ কোচ হুঙ্কার দিয়ে রেখেছিলেন খেলাটা হবে
মাঠে হবে। আর সেই কারণেই নিজের ছেলেদের উপর আস্থা রেখে জানিয়ে ছিলেন ম্যাচ জিতে
যুবভারতী ছাড়ব। গুরুর প্রতি সম্মান রেখে ছেলেরা প্রমাণ করলেন ইচ্ছা এবং পরিশ্রমই
আসল কথা।