বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব কী? নিশ্চিতভাবে দুর্গোৎসব ছাড়া কিছু নয়। দুর্গোৎসবের পর যদি কোনও কিছু বাংলার প্রতিটি
ঘরকে হিন্দোলিত করে তোলে তা হলে সেটি কী?
পৌষ পার্বণ? পয়লা বৈশাখ? হতে পারে, কিন্তু তা কত জনের কাছে!! অধিকাংশ
বাঙালি-ই বিন্দুমাত্র ভ্রু-সঙ্কুচিত না করে জবাব দেবেন ফুটবল। হ্যাঁ, ফুটবল-ই বটে! না হলে কেনই বা মান্না দে’র কণ্ঠে, ‘সব খেলার সেরা
বাঙালির তুমি ফুটবল...’ গানটি অমরত্ব পাবে, বহু গানের মধ্যে স্বকীয়তায় অনন্য স্থান করে নেবে হাজার
হাজার সঙ্গীতপ্রেমীর মনের মণিকোঠায়! যুগের পর যুগ বাংলা নেতৃত্ব দিয়েছে ভারতীয়
ফুটবলকে। ভারতীয় ফুটবলের মক্কা থেকে উঠে আসা শত শত বঙ্গসন্তান অবিরত শাসন করেছে
দেশের ফুটবলকে।
বাঙালির রক্তে এবং বাংলার মাটিতে
ফুটবলের গন্ধ থাকলেও বিশ্ব ফুটবল নিয়ে আদপে কতটা জানি আমরা? কখনও কি ভেবে
দেখেছেন ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েও কেন উরুগুয়ে খেতাব ধরে রাখার
জন্য ১৯৩৪ বিশ্বকাপে অংশ নিতে গেল না? যে ইংল্যান্ড বিশ্ব ফুটবলকে সেই সময় শাসন করছে, সেই দেশ কেন বিশ্বকাপে দলই পাঠাল না ১৯৫০-এর সংস্করণের আগে? ফিফা-কে ঘিরে কেন তির্যক মনোভাব ছিল Football
Association-এর। কার মস্তিস্কপ্রসূত ছিল
বিশ্বকাপের পরিকল্পনা? ১৯২৮ আমস্টারডাম
ফিফা কংগ্রেসে এই প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? অলিম্পিকে তো ফুটবল ছিল, তা হলে সেটার মধ্যেই কেন এই খেলাকে সীমাবদ্ধ রাখা গেল না, কেন গ্রেটেস্ট শো অব দ্য আর্থের ছাতার তলা থেকে বেরিয়ে
বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করা হল? এই সব প্রশ্নের
উত্তরই আমাদের অধিকাংশের কাছে অজানা। ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন!
Asian Games 2023: অবিশ্বাস্য ব্যাটিং, যুবির বিশ্বরেকর্ড ভেঙে নয়া নজির গড়লেন নেপালের ব্যাটার
ISL 2023-24: 'সুনীল'কে ছাড়াও ওরা শক্তিশালী', বেঙ্গালুরু ম্যাচের আগে অকপট জুয়ান
ভাবলে বুঝতে পারবেন, আদতে পেলে কিংবা মারাদোনা বা মেসি-রোনাল্ডো নিয়ে এত
মাতামাতি করলেও বিশ্ব ফুটবল কিংবা বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে আমাদের জ্ঞান অত্যন্ত
সীমিত। বাঙালির এই সীমাবদ্ধতা দূর হতে পারে বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক কাশীনাথ
ভট্টাচার্য-এর লেখা নতুন বই ‘বিশ্বকাপ
ইতিহাস-বিতর্ক-গল্প’-এর সৌজন্যে। থুরি, বই বললে ভুল হয়। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ এবং ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ কভার করা এই
অভিজ্ঞ সাংবাদিকের এই সৃষ্টিকে কোনও বই বললে তার যথার্থ মূল্যায়ণ করা হবে না। এটি
কোনও বই নয়, ছাপার অক্ষরে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল।
যে দলিল অমর হয়ে থাকবে বাংলার ক্রীড়া সাংবাদিকতায় এবং ক্রীড়া প্রেমীদের মধ্যে।
যতদিন ফুটবল ঘিরে বাঙালি বাঁচবে, বিশ্বকাপ ঘিরে
বাংলার প্রতিটি পাড়ায় কোথাও আর্জেন্টিনা, কোথাও ব্রাজিল বা জার্মানির পতাকা উড়বে ততদিন এই বই ‘বাইবেল’ হিসেবে পূজিত হবে
সমর্থকদের মধ্যে।
বিশ্বকাপের এক একটা ঘটনা, বিতর্ক এবং গল্প এমন ভাবে লেখক তুলে ধরেছেন যেন বইয়ের পাতায়
নয়,
চোখের সামনে সবটাই জীবন্ত দেখা যাচ্ছে। পেলের বিশ্বকাপ জয়, কিংবা মারাদোনার একক কৃতিত্বে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ
জেতানোর গল্পের ভিতরের গল্প, বিতর্কের অন্দরের
প্রেক্ষাপট এই ৪৮৮ পাতার বইয়ে বিস্তারিত ভাবে বর্ণণা করা হয়েছে। আজ যে দৃষ্টিতে
বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন, বিশ্ব ফুটবলের এক
একটা চরিত্রকে জানেন, সেই দৃষ্টিটাই
পুরোপুরি বদলে যাবে যদি এই বইটি আপনার কাছে থাকে এবং অবশ্যই তা অধ্যয়ন করেন।
বিশ্বকাপের এক-একটি ছোট ঘটনাকে ছাপার অক্ষরে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি এই
বইয়ে আপনি পাবেন ১৯৩০ সালের উরুগুয়ের মাটিতে উদ্বোধনী বিশ্বকাপ থেকে ২০২২ কাতার
বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচের পরিসংখ্যান এবং যাবতীয় তথ্য। কোন ম্যাচে কত গোল হয়েছে, প্রতিটি ম্যাচের স্কোরলাইন, গোলদাতা, টুর্নামেন্টের সর্বাধিক গোল স্কোরার, ব্যক্তিগত পুরস্কারের তালিকা থেকে সকল প্রকার খুঁটিনাটি
তথ্য।
দীর্ঘ পড়াশোনা, রিসার্চ এবং বিভিন্ন দেশ ঘুরে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ
নির্যাস এই বইয়ের মলাটের মধ্যে নিঃশেষ করে দিলেও মূল্য সাধারণের মধ্যেই রেখেছেন
লেখক। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৫৭৫ টাকা। কলেজ স্ট্রিটের বর্ণপরিচয় মার্কেট, অন্নপূর্ণা পুস্তক মন্দির (প্রথম তল)- স্টল নম্বর: AP 18 থেকে এই বই সংগ্রহ করা যাবে।