বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, নামটা শুনলেই এক কথায় মনে পরে যায় মহিষাসুরমর্দিনীর কথা।
হয়তো অনেকেরই জানা নেই, শুধু মহিষাসুরমর্দিনী-ই নয়, একবার এই কিংবদন্তি শিল্পী ফুটবল
ম্যাচের ধারাভাষ্যও দিয়েছিলেন। প্রখ্যাত ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার অজয় বসু, পুষ্পেন সরকার
ও কমল ভট্টাচার্যের আগে রেডিওতে খেলার বাংলা ধারাভাষ্য যিনি শুরু করেছিলেন তিনি হলেন
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তবে সেই অভিজ্ঞতা তাঁর খুব একটা মধুর ছিল না।
১ নম্বর গার্স্টিন প্লেসের বেতারকেন্দ্র থেকে ‘কলকাতা বেতার’ প্রথম যাত্রা শুরু করে ১৯২৭ সালের ২৬ অগস্ট মাসে।
ভারতীয় এবং ইউরোপিয়, দুই বিভাগে অনুষ্ঠান ভাগ করা হয়েছিল। এর বছর তিনেক পর ভাবা হয়
যে ফুটবলেরও ধারাভাষ্য দেওয়া হবে বেতারে। ১৯৩০ সালে মাঠ থেকে সরাসরি ফুটবল-ধারাবিবরণী
সম্প্রচারের কথা প্রথম জানা যায়। শুরুটা হয়েছিল ইংরেজিতে। খেলার রিলে চালু হয়ে গেল
১৯৩০-এর ফুটবল-মরসুম থেকে। সেই সময়ে ধারাভাষ্য দিতেন বার্টি মায়ার, ডি ডব্লিউ সিডনি
ফ্রিসকিন, নীরেন দে, বেরী সর্বাধিকারী, পিয়ার্সন সুরিটার’রা। কিন্তু বাংলায় তখনও মাঠের
চোঙা, ঢাক ঢোল এবং ঘুড়ির মাধ্যমে ফলাফল জানা যেত। অল ইন্ডিয়া রেডিওর মাধ্যমে সেই রীতিতে
পরিবর্তন আসে।
ডিরেক্টর নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার বাংলা ভাষাতেও এই ফুটবল-রিলে চালু করার কথা ভাবেন।
প্রথমে ধারাভাষ্যকার হিসেবে রাজেন সেনগুপ্তের কথা ভাবা হয়েছিল, কারণ তিনি রেডিওতে প্রথম
থেকেই কাজ করতেন ঘোষক ও সংবাদপাঠক হিসেবে। পাশাপাশি ১৯১১-য় শিল্ড জয়ী মোহনবাগানের সেন্টার-হাফ
হিসেবে খেলায় ফুটবলটা তিনি খুব ভালভাবেই বুঝতেন। কিন্তু তিনি ছুটিতে থাকার দরুন নাম
ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের এবং সহকারী হিসেবে প্রখ্যাত সঙ্গীতকার রাইচাঁদ বড়াল।
Durga Puja 2023: শরতের শিউলি, বীরুপাক্ষের চণ্ডীপাঠ আর ছেলেবেলার গন্ধ মেখে নবরূপে হাজির হোক মহালয়া
সালটা ছিল ১৯৩৪। দু’জনে গেলেন
মাঠে। বেতারে প্রথম বার বাংলায় ধারাবিবরণী। কিন্তু দু’জনে আপ্রাণ চেষ্টা করলেও তাঁরা
যে একেবারেই ছড়িয়ে ফেলেছেন ব্যাপারটিকে তা ‘বেতার জগৎ’ পত্রিকায় লেখা থেকেই বোঝা গিয়েছিল। ধারাবিবরণী
দেওয়ার জায়গা থেকে বসে বীরেন ভদ্রের ধারাভাষ্য দেখে আশপাশে থাকা বিদেশি দর্শকরা হেসে
কুটিকুটি খায়। এমনকি গোলরক্ষক হাত দিয়ে বল ধরেছে, দেখে তিনি চিৎকার করে উঠেছিলেন ‘হ্যান্ডবল’ ‘হ্যান্ডবল’।
Shardiya Navratri Rules: নবরাত্রিতে ভুলেও এই কাজগুলি করবেন না, সংসারে নেমে আসবে অমঙ্গলের ছায়া
বীরেনবাবু বুঝতে পারেন যে ব্যাপারটা একে বারেই ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু কি ভুল
বলছেন সেটা তিনি বুঝতে পারছিলেন না। সহকারীকেই জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী হল রাই?’ রাইচাঁদবাবু
বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, “হল তোমার মুন্ডু! গোলরক্ষক হাতে ধরলে হ্যান্ডবল হয় রে গাধা?”
বেতারকেন্দ্রে পা দিয়েই নৃপেন মজুমদারের কাছে রাইচাঁদের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বলেছিলেন, “এরকম বুদ্ধিমান লোকদের আমার সঙ্গে পাঠাবেন না মশাই।”
স্বাধীনতার আগে সেটাই প্রথম এবং শেষ বাংলায় খেলার কমেন্ট্রি।