আইএসএল-এর প্লে অফে জায়গা নিশ্চিত
করে নিয়েছে এটিকে মোহনবাগান। বর্তমানে লিগ টেবিলের তৃতীয় স্থানে রয়েছে তারা। তিন
নম্বর স্থানেই লিগ পর্যায়ের খেলা শেষ করতে শনিবাসরীয় ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে খেলতে নামছে প্রীতম কোটাল-শুভাশিস
বসুরা। টানা অষ্টম বার জিততে পারলে তিন নম্বর স্থান পাকা করে ফেলবে এটিকেএমবি এবং
তারই সঙ্গে ঘরের মাঠে প্লে-অফ খেলার সুযোগ পাবে তারা।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পরশি ক্লাবের
বিরুদ্ধে নামার আগে তাই বেশ আত্মবিশ্বাসী এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলাররা। ম্যাচের
দুই দিন আগে বিদেশি দিমিত্রিচ পেত্রাতোস, স্লাভকো ডেমানোভিচ এবং বাঙালি তারকা শুভাশিস বসু'র কণ্ঠে ধরা পড়েছে সেই আত্মবিশ্বাস। তবে, সেই আত্মবিশ্বাস যে তাঁদের মধ্যে আত্মতুষ্টির রূপ নিয়েছে তা
বোঝা যায় কথা শুনেই। এই আত্মতুষ্টিই না সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই তারকাদের
কাছে।
দিমিত্রিচ পেত্রাতোস:
ডার্বি বিশ্বের যে প্রান্তেই খেলা
হোক সব সময়ই সেটা মর্যাদার ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে আমি ডার্বি
খেলেছি। যেই মানসিকতা নিয়ে সেখানে খেলেছি, সেই মানসিকতা নিয়েই এখানে খেলব। আমি মনে করি না ইস্টবেঙ্গল প্লে অফের লড়াই
থেকে ছিটকে গিয়েছে বলে তাদের এই ম্যাচে কোনও মোটিভেশনের অভাব হবে। সবুজ-মেরুন
সমর্থকদের কাছে এই ম্যাচটা যেমন মর্যাদার তেমনই আমাদের কাছেও। এই ম্যাচ জিতে তিন
নম্বরে টিকে থাকার লড়াইও রয়েছে আমাদের জন্য। সব থেকে বড় কথা মাঠ ভর্তি
সবুজ-মেরুন সমর্থকরা থাকবেন, তাঁদের খুশি করাটা
আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ইস্টবেঙ্গল বেশ শক্তিশালী দল, বিশেষ করে ওদের আক্রমণভাগ এবং উইং প্লে যথেষ্ট শক্তিশালী।
লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে এসে আমাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে। ফলে তাদের ছোট
করে দেখার কোনও কারণ নেই। আমি গোল করলাম কী না সেটা বড় কথা নয়, আমরা ম্যাচ জিতব সেটাই বড় কথা। আমাদের যা শক্তি তাতে আইএসএল-এর
যে কোনও দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখি, শুধু ইস্টবেঙ্গল নয়। শুধু নিজেদের খেলাটা ঠিক মতো খেলে যেতে
হবে।
আরও পড়ুন: Kolkata Derby: ইমামির পাঠানো ডার্বির টিকিট ফিরত পাঠাল ইস্টবেঙ্গল, টিকিট ফিরেয়ে দিয়েছে আইএফএ-ও
আরও পড়ুন: Pele: পেলে কি সত্যিই একটি যুদ্ধ বন্ধ করেছিলেন? কী ঘটেছিল ৫৩ বছর আগে
স্লাভকো ডেমানোভিক:
ইস্টবেঙ্গলের সব থেকে শক্তিশালী ওদের
আক্রমণ। ক্লেইটন সিলভা খুব ভাল স্ট্রাইকার। সুযোগসন্ধানী এবং গোলটা চেনে। এখনও
পর্যন্ত ১২টি গোল করেছে। ও যখন অন্য ক্লাবে খেলত তখন আমি আরেকটি ক্লাবের জার্সিতে ওর বিরুদ্ধে দু'বার খেলেছি। এক বারও আমায় পরাজিত করতে পারেনি ও। ওর খেলার
ধরনটা আমি জানি, এ বারও পারবে না ও। ব্র্যান্ডন
হ্যামিল অনেক ম্যাচে খেলেছে, ক্লান্ত। সেই
জায়গাটা পূরণ করতে কোচ হয়তো আমাকে খেলাবেন। আমি ইতিমধ্যে বেশ কিছু ম্যাচে আংশিক
সময় খেলেছি, দলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। আমি শুরু
থেকে খেললে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি আগে যেখানে খেলতাম সেখানে সার্বিয়ান
ডার্বিতে নিয়মিত খেলেছি। তা সত্ত্বেও কলকাতা ডার্বিতে প্রথম বার নামব এটা ভেবে বেশ
রোমাঞ্চিত হচ্ছি। ইউটিউব ভিডিও এবং ডার্বির কিছু ক্লিপিংস দেখেছি। সবুজ-মেরুন
সমর্থকদের আবেগ দেখেছি সেখানে।
শুভাশিস বসু:
আজ পর্যন্ত কোনও ডার্বি আমি হারিনি।
গত সাতটা ডার্বিতে জিতেছি। সেই রেকর্ড অক্ষত রাখতে চাই, এ বারও জিতব কারণ তিন নম্বরে থেকে নিজেদের মাঠে খেলার
সুবিধাটা সুনিশ্চিত করতে হবে। প্লে-অফ থেকে ছিটকে গেলেও ইস্টবেঙ্গল ভাল খেলেছে।
শেষ ম্যাচে তো লিগ চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছে। আর হারানোর কিছু নেই ওদের, তাই ওরা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে। কলকাতার সমর্থকদের আমি
যতটা জানি তাতে সব ম্যাচ হারলেও ডার্বি জিতলে সব কিছু ওঁরা ভুলে যায়। আমরা যাঁরা
বাংলার ছেলে তাঁদের কাছে ডার্বির মাহাত্মটাই আলাদা। তবে, এখন দেখি ভিন রাজ্যের ফুটবলার এবং বিদেশিরাও ডার্বিকে
মর্যাদার ম্যাচ হিসেবে নেয়। চাপহীন হয়ে ডার্বিতে আমরা খেলতে নামব। কেরল ম্যাচে
আমাদের দল প্রমাণ করেছে চাপের মুখ থেকে কী ভাবে বেরিয়ে এসে জিততে হয়। বহু দিন
ডার্বি খেলেছি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এই ম্যাচে কেউ ফেভারিট নয়। অনেক সময় সেরাটা দিয়েও হেরে যেতে হয়। খাতায় কলমের
হিসেব এখানে মেলে না। আমরা সকলেই একশো শতাংশ দেওয়ার জন্য তৈরি। দলে নতুন যোগ দেওয়া
দুই-তিন জন বাদ দিলে প্রত্যেকের ডার্বিতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং জিতে ফেরার
অভ্যাসও রয়েছে।