রামনবমী'র সঙ্গে প্রাচীনকাল থেকে এই দিনটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে
হাওড়ার রামরাজাতলার নাম। রামনবমী তিথিতে এখানে রাম পুজো হয়ে আসছে সেই শতাব্দীর পর
শতাব্দী ধরে।
প্রাচীন এই পুজো প্রথমে ছিল তিনদিনের, তারপর তা বেড়ে হয় ১৫ দিনের, ক্রমে পরে তা আরও বেড়ে একমাসের হয়েছিল। আর এখন চৈত্র/বৈশাখে রামনবমীতে শুরু
হয়ে চলে শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার পর্যন্ত। রাম পুজোকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে। শোনা
যায়,
আগে এই পুজো উপলক্ষে প্রতি শনিবার ও রবিবার যাত্রাপালা হতো।
তবে সেসব এখন আর হয়না। কিন্তু প্রতিদিন পুজো, ভোগ নিবেদন, সন্ধ্যারতি ইত্যাদি আচার অনুষ্ঠান
আজও হয়ে থাকে আগের মতোই।
জানা যায়, সাঁতরাগাছির তৎকালীন জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী রাজবেশধারী
ভগবান রাম-সীতার পুজো প্রচলন করেন। তারপর থেকেই রামমন্দির সন্নিহিত এলাকার নামকরণ
হয় রামরাজাতলা নামে।
আরও পড়ুন: গরমে বাইরের কোনও মশলা দেওয়া খাবার ছেড়ে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন লেমন রাইস
আরও পড়ুন: এবার সন্ধ্যাবেলা চায়ের সঙ্গে চটজলদি বানিয়ে ফেলুন মটন কিমা শিঙাড়া
কথিত রয়েছে, রামভক্ত জমিদার অযোধ্যারাম স্বপ্নাদেশ পান শ্রীরামচন্দ্রের
পুজোর। তারপরেই তিনি উদ্যোগী হন বারোয়ারি পুজোর আদলে ভগবান রাম-সীতার পুজো করতে।
শোনা যায়,
সেসময় এই অঞ্চলে বারোয়ারি সরস্বতী পুজোর খুব খ্যাতি ছিল এবং
গ্রামবাসীরা এই পুজোয় মেতে উঠতেন। কিন্তু অযোধ্যারাম বারোয়ারি রামপুজোর প্রবর্তন
করায় গ্রামবাসীদের একাংশ রামপুজোর বিরোধিতা করেন। শেষমেশ দু'দলের আলোচনায় স্থির হয়, রাম-সীতার পুজোই বড় করে করা হবে, কিন্তু সরস্বতী পুজোর দিন প্রতিমা নির্মাণের সূচনা হবে বাঁশ কাটা এবং
প্রারম্ভিক পূজার্চনার মাধ্যমে। আর রাম-সীতার মূর্তির ওপরের দিকে অবস্থান করবেন
দেবী সরস্বতী।
সেই থেকে আজও চলে আসছে সেই প্রাচীন
রীতি। সরস্বতী পুজোর দিন ষষ্ঠীতলার নির্দিষ্ট বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে চৌধুরীপাড়ার
শিবমন্দিরে বাঁশ পুজো করে রাম-সীতার মূর্তি গড়ার কাজের প্রারম্ভিক প্রস্তুতির
সূচনা হয়। তার কিছুদিন পর থেকেই রামরাজাতলা বাজারের আটচালায় কুমারটুলির প্রতিমা
শিল্পী গৌর পালের বংশধরেরা প্রতিমা নির্মাণ শুরু করেন।
রাবণ-বধের পরে সপারিষদ রামরাজা ও
দেবী সীতার মূর্তি এখানে পূজিত হন। সঙ্গে আছে ভগবান শিব, ব্রম্ভ্রা সহ ২৬ জন দেবদেবীর প্রতিমা। আর রাম-সীতার মাথার
ওপরে ৫টি দেবী সরস্বতীর মূর্তি। এছাড়া আছে দেবী জগদ্ধাত্রীর ২টি মূর্তি, একেবারে ওপরে বসুদেব, রামের দু'পাশে লক্ষণ, ভরত, শত্রুঘ্ন, বিভীষণ, হনুমান, জাম্বুবান, শিবের অনুচর
নন্দী-ভৃঙ্গি। পাশে আছে মহাবীর হনুমানের মূর্তি, সাবিত্রী-সত্যবান এবং বিষ্ণুর অবতার বামনের মূর্তির আলাদা মন্দির।
রাম-সীতার পুজোকে কেন্দ্র করে চারমাস
ধরে চলা এই মেলা ভারতের অন্যতম দীর্ঘতম মেলা। শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার (ইংরেজি
মাসের আগস্টের দ্বিতীয় বা তৃতীয় রবিবার) বিশাল শোভাযাত্রা করে হয় রামবিজয়া।