১৯০১ এর মে-জুন মাস। স্বামীজীর
সঙ্গে বেলুড় মঠে দেখা করতে
এসেছেন শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী। তাঁকে স্বামীজী হঠাৎ বললেন-“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
আমায় রঘুনন্দনের 'অষ্টাবিংশতি-তত্ত্ব' এনে দিতে পারেন?” এই অষ্টবিংশতি তত্ত্বকে তৎকালীন শিক্ষিত সম্প্রদায় যাকে কুসংস্কারের ঝুড়ি বলতেন। সেই বই চাইছেন
স্বামীজি! অবাক হয়ে গিয়ে শরৎচন্দ্র জিজ্ঞাসা করেন, “অষ্টবিংশতি তত্ত্ব দিয়ে আপনি কি করবেন?”' স্বামীজী বললেন, “এবার মঠে দুর্গোৎসব করার ইচ্ছে হচ্ছে! তাই দুর্গোৎসববিধি পড়বার ইচ্ছে
হয়েছে।' স্বামীজির ইচ্ছা, তাই শরৎবাবু এনেও দিয়েছিলেন গ্রন্থখানি। বইটি শেষ
করতে বিবেকানন্দের চার পঁচদিন সময় লাগল। তারপর আর এ নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য করলেন না।
দুর্গাপুজোর ঠিক দিন
দশ-বারো দিন আগে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে
স্বামী বিবেকানন্দ নির্দেশ দিলেন দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে। স্বামীজীর
কাছে দুদিনের সময় চেয়ে ব্রহ্মানন্দ বললেন, 'এখন প্রতিমা পাওয়া যায় কিনা দেখতে হবে।' সেই সময় পুজো একেবারে সামনে,
তিন চারদিন আর বাকি- এদিকে তখনও পাওয়া যায়নি দুর্গা মূর্তি। অনেক খুঁজে কলকাতার কুমোরটুলিতে মিলল একটি প্রতিমা। সেই
প্রতিমাতেই হল বেলুড় মঠের প্রথম দুর্গাপুজো।
স্বামীজী জানালেন, কৌপিনধারী সন্যাসীদের পুজো বা ক্রিয়া সংকল্প করার অধিকার নেই। অতএব সঙ্কল্প হল সারদা মায়ের নামে। ষষ্ঠীর বোধনের দু-একদিন আগে নৌকায় করে মঠে এল
দূর্গা প্রতিমা। প্রতিমা মঠে নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর পরই নামল মুষলধারে বৃষ্টি।
পুজোর পুরোহিত
নিযুক্ত হলেন মঠের ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল। আর তন্ত্রধারক হলেন মঠেরই সন্ন্যাসী স্বামী রামকৃষ্ণানন্দের পিতা
ঈশ্বরচন্দ্র ভট্টাচার্য।পুজোর নিয়ম মেনে স্বামীজী পশুবলির পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সারদামণি পশুবলির বিরোধিতা করলেন। পশুবলির বিকল্প
হিসেবে মা দুর্গাকে দেওয়া হল চিনির নৈবেদ্য আর প্রচুর মিষ্টান্ন।
এদিকে মহাষ্টমীর আগের দিন
থেকে স্বামীজীর প্রচণ্ড জ্বর। পুজোমণ্ডপে
যেতে পারলেন না। সন্ধিপূজোর সময় জ্বর গায়েই উঠলেন মণ্ডপে। পুষ্পাঞ্জলি দিলেন। পুজো
হল। অসুস্থ শরীরেই করলেন কুমারী পুজো। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো করার পর ১০৮টি
পদ্ম নিয়ে সেদিন জীবন্ত দুর্গা আরাধনা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।