Ramayana: রামায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি রহস্য যা বিশ্ব এখনও জানে না
Dec 19, 2022 16:38 [IST]
Last Update: Dec 19, 2022 16:38 [IST]
বিশ্বাস করা হয় যে মূল রামায়ণ ঋষি বাল্মীকি রচনা করেছিলেন। তবে তুলসীদাস,
সাধক একনাথ প্রমুখের মতো আরও অনেক পন্ডিতরাও এর অন্যান্য সংস্করণ রচনা করেছেন। মনে
করা হয় যে রামায়ণের ঘটনাগুলি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ থেকে ৫ম শতাব্দীর মধ্যে ঘটেছিল।
রামায়ণের প্রতি ১০০০টি শ্লোকের পরে আসা প্রথম অক্ষর থেকে গায়ত্রী মন্ত্র
তৈরি করা হয়েছে।
গায়ত্রী মন্ত্র ২৪ টি দল নিয়ে গঠিত। বাল্মীকি রামায়ণে ২৪,০০০টি শ্লোক
রয়েছে। রামায়ণের প্রতি ১০০০টি শ্লোকের পরে প্রথম শব্দাংশটি গায়ত্রী মন্ত্র গঠন করে।
এই মন্ত্রটি পবিত্র মহাকাব্যেরই সারাংশ। গায়ত্রী মন্ত্রটি প্রথমে ঋগবেদে উল্লেখ করা
হয়েছে।
রাম এবং তাঁর ভাইরা
ছাড়াও রাজা দশরথ এক কন্যার পিতাও ছিলেন
শ্রী রামের বাবা-মা এবং ভাইদের কথা প্রায় সবাই জানেন, কিন্তু খুব কম লোকই
জানেন যে রামের এক দিদিও ছিল, যার নাম ছিল শান্তা। তিনি বয়সে চার ভাইয়ের চেয়ে অনেক
বড় ছিলেন। তাঁর মা কৌশল্যা বলেই বিশ্বাস করা হয়। একবার অঙ্গদেশের রাজা রোমপদ এবং
তাঁর রানি বর্ষিণী অযোধ্যায় আসেন। তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না। কথাবার্তা সূত্রে রাজা
দশরথ এ কথা জানতে পারলে তিনি বললেন, আমি আমার কন্যা শান্তাকে আপনাদের দেব। কথা রাখেন
অযোধ্যার রাধা। রোমপদও শান্তাকে খুব স্নেহের সঙ্গে লালনপালন করে। একদিন রাজা যখন মেয়ের
সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন এক ব্রাহ্মণ দরজায় এসে বর্ষাকালে ক্ষেত চাষের জন্য রাজদরবার
থেকে সাহায্যের জন্য বলেন। রাজা সেই কথা না শুনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। ব্রাহ্মণ
ছিলেন ইন্দ্রের ভক্ত। দ্বারে আসা মানুষের প্রতি এমন অবহেলায় ইন্দ্রদেব রাজা রোমপদের
উপর ক্ষুব্ধ হন। ফলে তাঁর রাজ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাঠের ফসল শুকিয়ে
যেতে থাকে। এই সংকটের সময়ে রাজা রোমপদ ঋষ্যশৃঙ্গ ঋষির কাছে গিয়ে সমাধান চাইলেন। ঋষি
ইন্দ্রকে সন্তুষ্ট করার জন্য যজ্ঞ করতে বললেন। যজ্ঞ হল এবং মাঠ জলে ভরে গেল। এরপর ঋষ্যশৃঙ্গ
বললেন তাঁর জন্যই ইন্দ্রর কৃপা পেলেন রাজা রোমপদ, এখন রাজা তাঁর মেয়ে শান্তার সঙ্গে
তাঁর বিয়ে দিন। তাই হল, শান্তা ঋষ্যশৃঙ্গর সঙ্গে সুখে বসবাস করতে লাগলেন।
রাম বিষ্ণুর অবতার
কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা কাদের অবতার ছিলেন
রামকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন
রঘুপতির অন্য ভাইরা কার অবতার ছিলেন? ক্ষীরসাগরে ভগবান বিষ্ণু যার উপর অধিষ্ঠিত সেই
শেষনাগের অবতার বলে মনে করা হয় লক্ষ্মণকে। ভরত এবং শত্রুঘ্নকে যথাক্রমে ভগবান বিষ্ণুর
হাতে ধারণ করা সুদর্শন-চক্র এবং শঙ্খর অবতার বলে মনে করা হয়।
সীতা স্বয়ম্বরে
ব্যবহৃত ভগবান শিবের ধনুকের নাম কী ছিল
আমরা অনেকেই জানি যে স্বয়ম্বরের মাধ্যমে সীতার সঙ্গে রামের বিয়ে হয়েছিল।
সেই স্বয়ম্বরের জন্য ভগবান শিবের ধনুক ব্যবহার করা হয়েছিল। অসম্ভব ভারি সেই ধনুকে
পড়ানো ছিল অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। ভগবান শিবের সেই ধনুকের নাম ছিল পিনাক।
লক্ষ্মণ "গুড়াকেশ" নামেও পরিচিত।
বিশ্বাস করা হয় যে ১৪ বছরের বনবাসকালে লক্ষ্মণ দাদা রাম ও দাদার স্ত্রী
সীতাকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে কখনও ঘুমাননি। এই কারণে, তিনি "গুড়াকেশ" নামেও
পরিচিত। বনবাসের প্রথম রাতে, যখন রাম এবং সীতা ঘুমাচ্ছিলেন নিদ্রা দেবী লক্ষ্মণের সামনে
উপস্থিত হলেন। তখন লক্ষ্মণ নিদ্রা দেবীকে এমন বর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন যাতে তিনি
১৪ বছরের বনবাসে ঘুমাতে না পারেন। এর ফলে তিনি রাম ও সীতাকে রক্ষা করতে পারবেন। নিদ্রাদেবী
তখন বলেছিলেন লক্ষ্মণের পরিবর্তে যদি কেউ ১৪ বছর ধরে ঘুমায় তবে তিনি এই বর পেতে পারেন।
এর পরে লক্ষ্মণের কথায় নিদ্রা দেবী লক্ষ্মণের স্ত্রী ও সীতার বোন উর্মিলার কাছে যান।
উর্মিলা লক্ষ্মণের ঘুম নিজের চোখে নেন। তিনি পুরো ১৪ বছর ঘুমিয়েছিলেন।
বনবাসের সময় রাম,
লক্ষ্মণ এবং সীতা যে বনে অবস্থান করেছিলেন তাঁর নাম
মহাকাব্য রামায়ণের গল্প অনুযায়ী আমরা সবাই জানি যে রাম এবং সীতা লক্ষ্মণের
সঙ্গে ১৪ বছর নির্বাসনে গিয়েছিলেন এবং রাক্ষসরাজ রাবণকে পরাজিত করে তাদের রাজ্যে ফিরে
এসেছিলেন। আমরা অনেকেই জানি যে রাম, লক্ষ্মণ এবং সীতা বহু বছর একসঙ্গে ছিলেন। বনে থাকলেও
খুব কম লোকই সেই বনের নাম জানত। সেই বনের নাম ছিল দণ্ডকারণ্য যেখানে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ
তাদের নির্বাসন কাটিয়েছিলেন। এই বনটি প্রায় ৩৫,৬০০ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত ছিল যার
কিছু অংশ বর্তমান সময়ের ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্র প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত
ছিল। সেই সময়ে এই বনকে ভয়ঙ্কর রাক্ষসদের আবাস বলে মনে করা হত। তাই এর নামকরণ করা
হয়েছিল দন্ডকারণ্য যেখানে "দণ্ড" অর্থ "শাস্তি" এবং "অরণ্য"
অর্থ "বন"।
লক্ষ্মণরেখা পর্বটি
বাল্মীকি রামায়ণে বর্ণিত নেই
সমগ্র রামায়ণের গল্পের সবচেয়ে চমকপ্রদ পর্ব হল লক্ষ্মণ রেখা পর্ব, যেখানে
লক্ষ্মণ বনে তার কুঁড়েঘরের চারপাশে একটি রেখা আঁকেন। সীতার অনুরোধে রাম সোনার হরিণ
ধরতে গিয়েছিলেন। সেটি আসলে ছিল মায়াবি মারীচের রূপ। মৃত্যুর তখন মারীচ হরিণের রূপ নেয়।
মৃত্যুর সময়, মারিচা রামের কণ্ঠে লক্ষ্মণ ও সীতার নাম ধরে চিৎকার করে। এটা শুনে সীতা
লক্ষ্মণকে বলেন দাদাকে সাহায্য করার জন্য যেতে। প্রথমে লক্ষ্মণ সীতাকে বনে একা রেখে
যেতে রাজি হননি কিন্তু সীতার বারবার অনুরোধের পর তিনি রাজি হন। এরপর লক্ষ্মণ কুঁড়েঘরের
চারপাশে একটি রেখা আঁকেন এবং সীতাকে সেই রেখার মধ্যে থাকতে অনুরোধ করেন। যদি বাইরের
কেউ এই রেখা অতিক্রম করার চেষ্টা করে, পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। এই পর্ব সম্পর্কিত অজানা
তথ্য হল এই গল্পের বর্ণনা বাল্মীকি রামায়ণেও নেই বা রামচরিতমানসেও নেই। কিন্তু রামচরিতমানসের
লঙ্কা কান্ডে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী এই কথা বলেছেন।
রাবণ একজন চমৎকার বীণা বাদক ছিলেন।
রাবণ ছিলেন সকল রাক্ষসদের রাজা। ছোটবেলায় তাকে সবাই ভয় পেত কারণ তাঁর
দশটি মাথা ছিল। ভগবান শিবের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। এটা সর্বজনবিদিত যে রাবণ একজন
মহান পণ্ডিত ছিলেন এবং বেদ অধ্যয়ন করতেন। কিন্তু আপনি কি জানেন রাবণের পতাকার প্রতীক
বীণা কেন ছিল? রাবণ একজন চমৎকার বীণা বাদক ছিলেন, যার কারণে তার পতাকায় প্রতীক হিসেবে
বীণা খোদাই করা হয়েছিল।যদিও রাবণ এই শিল্পকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন না, তবে তিনি
এই যন্ত্র বাজাতে পছন্দ করতেন।
ইন্দ্রের ঈর্ষার কারণে কুম্ভকর্ণ ঘুমানোর দিয়ে আশীর্বাদ পেয়েছিলে
রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণের বিশাল দেহ ছিল।এ ছাড়া তিনি ছিলেন মস্ত পেটুক। রামায়ণে
বর্ণিত আছে যে কুম্ভকর্ণ একটানা ছয় মাস ঘুমাতেন। তারপর জেগে থেকে মাত্র একদিন খেতেন
আবার ছয় মাস ঘুমাতেন। কিন্তু আপনি কি জানেন কিভাবে কুম্ভকর্ণের এই ঘুমের অভ্যাস? একবার
এক যজ্ঞ শেষে প্রজাপতি ব্রহ্মা কুম্ভকর্ণের সামনে হাজির হয়ে কুম্ভকর্ণকে বর দিতে চাইলেন।
এদিকে দেবী সরস্বতীকে কুম্ভকর্ণের জিভের উপর বসতে অনুরোধ করলেন। ফলে রাবনভ্রাতা
"ইন্দ্রাসনের" পরিবর্তে "নিদ্রাসন" চেয়ে বসলেন।
নাসার মতে, "রামায়ণ" এবং "আদমের সেতু" গল্প একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
আরও পড়ুন: শনির গোচরে তৈরি হতে চলেছে শশা মহাপুরুষ যোগ, ভাগ্য চমকাবে এই রাশির জাতকদের
আরও পড়ুন: Christmas 2022: যীশু খ্রিষ্টের জন্মতিথিকে কেন বলা হয় বড়দিন? কী এই দিনের মাহাত্ম্য?
রামায়ণের গল্পের চূড়ান্ত পর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে রাম ও লক্ষ্মণ একটি
বানর বাহিনীর সাহায্যে লঙ্কা জয় করার জন্য একটি সেতু তৈরি করেছিলেন। এই গল্পটি প্রায়
১,৭৫০,০০০ বছর আগে বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি নাসা জানিয়েছে একটি প্রাচীন মানব-নির্মিত
সেতুর কথা। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সংযোগকারী সেই সেতু আবিষ্কৃত হয়েছে এবং গবেষক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের
মতে, এই সেতুর নির্মাণকাজ মহাকাব্য রামায়ণে বর্ণিত সেতুর সময়কালের। নাসা স্যাটেলাইট
দ্বারা আবিষ্কৃত এই সেতুটিকে "আদামের সেতু" বলা হয় এবং এর দৈর্ঘ্য প্রায়
৩০ কিলোমিটার।
রাবণ জানতেন যে তিনি
রাম কর্তৃক নিহত হবেন
রামায়ণের সম্পূর্ণ কাহিনি পড়ার পর, আমরা জানতে পারি যে রাবণ ছিলেন নিষ্ঠুর
এক রাক্ষস যাকে সবাই ঘৃণা করতেন। রাবণের ভাই বিভীষন সীতার অপহরণের কারণে রামের লঙ্কা
আক্রমণের কথা শুনে, রঘুপতির পক্ষে যোগ দেন। রাবণ কিন্তু রাজি হননি। তিনি রামের হাতে
মৃত্যুবরণ করে মোক্ষলাভের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।তিনি বলেছিলেন যে, রাম এবং লক্ষ্মণ যদি
দু’জন সাধারণ মানুষ
হন তবে সীতা আমার কাছে থাকবেন কারণ আমি তাঁদের সহজেই হত্যা করতে পারি। আমি তাঁদের উভয়কেই
পরাজিত করব। আর যদি তাঁরা দেবতা হন তবে আমি উভয়ের হাতে মৃত্যুবরণ করে মোক্ষ লাভ করব।
রাম কেন লক্ষ্মণকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন?
রামায়ণে বর্ণিত আছে যে শ্রী রাম তাঁর ছোট ভাই লক্ষ্মণকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।
কেন রাম প্রাণধিক প্রিয় লক্ষ্মণকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন? এই ঘটনাটি ঘটেছিল যখন শ্রী
রাম লঙ্কা জয় করে অযোধ্যায় ফিরে আসেন এবং অযোধ্যার রাজা হন।একদিন যমরাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে আলোচনা করতে শ্রী রামের কাছে আসেন। আলোচনা শুরু করার আগে তিনি ভগবান রামকে বললেন
যে আপনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিন যে যতক্ষণ আমার এবং আপনার মধ্যে কথোপকথন হবে, দুজনের
মধ্যে কেউ আসবে না। যদি কেউ আসেন আপনি তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবেন। এরপরে রাম লক্ষ্মণকে
দ্বাররক্ষী হিসাবে নিযুক্ত করেন এবং বলে দেন যতক্ষণ তিনি এবং যমরাজ কথা বলছেন ততক্ষণ
যেন তাঁদের মধ্যে না আসে কেউ। এর কিছুক্ষণ পরে, ঋষি দূর্বাসা সেখানে আসেন। দূর্বাসা
লক্ষ্মণকে বলেন রামকে গিয়ে তাঁর আগমনের খবর জানাতে। লক্ষ্মণ বিনয়ের সাথে গোটা বিশয়
জানালে দূর্বাসা রেগে যান এবং অযোধ্যাকে অভিশাপ দেওয়ার কথা বলেন। লক্ষ্মণ শীঘ্রই সিদ্ধান্ত
নিলেন যে তিনি নিজে প্রয়োজনে আত্মত্যাগ করবেন, তাতে ঋষির অভিশাপ থেকে নগরবাসী রক্ষা
পাবে। লক্ষ্মণ ঋষি দূর্বাসার আগমনের খবর দিতে ভিতরে যান। এবার শ্রীরাম দ্বিধায় পড়েন
কারণ তাঁকে তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে লক্ষ্মণকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। এই দ্বিধায় শ্রী
রাম তাঁর গুরু বশিষ্ঠকে স্মরণ করে কিছু পথ দেখাতে বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত রাম লক্ষ্মণের
জীবন উৎসর্গ করেন। লক্ষ্মণ শেষ পর্যন্ত জল সমাধি নিলেন।
রাম সরয়ু নদীতে ডুবে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। মনে করা হয়, সীতা দেহ ত্যাগ করে পৃথিবীতে মিশে যাওয়ার পর, রাম সরয়ু নদীতে জলসমাধি নিয়ে পৃথ্বী লোককে ত্যাগ করেন।