তাঁর চোখের
চাহনি, সুদর্শন চেহারা, অমায়িক হাসি
হিল্লোল তুলেছিল বহু বঙ্গ নারীর মনে। যেদিন তিনি চলে গেলেন সেদিন বাংলা
জুড়ে পালিত হল অরন্ধন দিবস। তিনি মহানায়ক উত্তম কুমার। মৃত্যুর আগে বেলভিউ
ক্লিনিকে আপামর বাঙালির ম্যাটিনি আইডল ডাক্তারের হাত ধরে বারবার আকুতি করে বলেছিলেন,
“ডাক্তার আমাকে বাঁচাও।” সংসারে থেকেও তিনি ছিলেন সবার, মানুষের হৃদয়ের রাজা আজ
থেকে ৪৩ বছর আগে চলে গিয়েছিলেন জগতের সমস্ত মোহ মায়া ত্যাগ করে। তবুও আজও তিনি
মহানায়ক, ম্যাটিনি আইডল, সর্বপরি গোটা বাঙালি জাতিটির গুরু। আজ এই বিশেষ দিনটিতে
জানা যাক তাঁর সম্পর্কিত একটি গল্প।
আরও পড়ুন: Vastu Tips: ঘরে ফিনিক্স পাখির ছবি রাখুন, সমস্যা দূর হবে এবং পরিবেশও থাকবে আনন্দময়
আরও পড়ুন: Shani Dev: শনিবার এই ৫টি কাজ করুন, মুক্তি পাবেন মারাত্মক সাড়ে সাতি দশা থেকে
উত্তম কুমারের চোখে মুখে
ফুটে উঠত রোম্যান্টিসিজম। প্রথম জীবনে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন বোনের বন্ধু গৌরী
দেবীকে। গৌরী উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে, রান্না জানতেন না। অথচ উত্তমকে বিয়ে করে
তিনি খুব সহজেই হয়ে উঠেছিলেন রুটি আর আলুপোস্ত খেতে ভালবাসা কলকাতা পোর্টট্রাস্টের
এক কেরানির স্ত্রী। সেই ভালবাসার সম্পর্কেও একসময় চিড় ধরেছিল। উত্তম ভবানীপুরের
বাড়ি ছেড়ে উঠে এসেছিলেন প্রেমিকা সুপ্রিয়া চৌধুরীর ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে।
সুপ্রিয়া দেবী মহানায়কের প্রিয় বেণু নিজের স্মৃতিকথা ‘আমার জীবন আমার উত্তম’-এ উল্লেখ করেছিলেন ১৯৬২ সালের ২রা ডিসেম্বর ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি
মেনে বিয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়েছিলেন তাঁরা। যদিও গৌরী দেবীর সঙ্গে আইনত
বিবাহবিচ্ছেদ না হওয়ায় সেই বিয়ের মান্যতা ছিল না। অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের
বিবাহিতা স্ত্রীকে ছেড়ে সুপ্রিয়ার সঙ্গে প্রেম ও সংসার করা নিয়ে প্রিয়জনদের
প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছিল উত্তম কুমারকেও। কিন্তু এসবে কান না দিয়ে তিনি
সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গেই থাকতেন ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে। শোনা
যায়, এই কারণে নাকি ‘দেয়া নেয়া’র শুটিং বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন প্রযোজক শ্যামল মিত্র।
উত্তম কুমার ও শ্যামল
মিত্রর বন্ধুত্বের কথা কারও অজানা নয়। বন্ধুর দাম্পত্য জীবনে নেমে আসা ঝড় সামলাতেই একথা বলেছিলেন
শ্যামল মিত্র। উত্তম কুমারের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুরকার শ্যামল মিত্রের পুত্র সৈকত
মিত্র এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন,
‘দেয়া নেয়া’র শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি
দিয়েছিলেন ছবির প্রযোজক শ্যামল মিত্র। কারণ এই ছবির
শ্যুটিংয়ের সময়ই ভবানীপুরের বাড়ি ছেড়ে ময়রা স্ট্রিটে সুপ্রিয়া দেবীর বাড়িতে
থাকতে শুরু করেছিলেন উত্তম কুমার। সেই কথা শ্যামল মিত্রর কানে পৌঁছাতেই তিনি উত্তম
কুমারকে ডেকে বলেন, ‘ভবানীপুরে ফিরে না গেলে ছবির শ্যুট
বন্ধ।’
কথা মতো শ্যুটিং বন্ধ হয়ে
যায় ‘দেয়া নেয়া’র। কারণ দীর্ঘদিনের প্রণয় ও পরিনয়ের সম্পর্ক উত্তম-গৌরীর। উত্তমের পাশে
গৌরী দেবীকে দেখতে অভ্যস্ত শ্যামল মিত্র মেনে নিতে পারেননি সুপ্রিয়া দেবীকে। যদিও
বন্ধুকে আশ্বস্ত করে উত্তম বলেছিলেন,
“এখনই বেণুকে ছেড়ে যেতে পারব না, একটু সময় দে
আমায়।” এরপর আর কোনওদিনই বেণু-কে ছেড়ে যেতে
পারেননি মহানায়ক। শেষমেষ নিজের শর্ত ফিরিয়ে নিয়েছিলেন শ্যামল মিত্র। আসলে তিনি
বুঝতে পেরেছিলেন সুপ্রিয়া দেবীর প্রতি উত্তমের টান ক্ষণস্থায়ী নয়, চিরকালীন। এক মাস পরে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাওয়ার পর নতুন করে শ্যুটিং
শুরু হয় ‘দেয়া নেয়া’র।