শ্রাবণ মাস ভোলানাথের খুব প্রিয়।
এই মাসে পূর্ণ ভক্তি সহকারে তাঁর আরাধনা করলে ভগবান শঙ্কর ভক্তদের সকল মনোবাঞ্ছা
পূরণ করেন। হিন্দু ধর্মে শিবপুজোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শিবের প্রতিটি রূপই অনন্য।
মহাদেবের একটি রূপ হল শিবের উগ্র
রূপ।
শিবপুরাণ অনুসারে, মহাদেব ক্রোধান্বিত হলে তিনি তাণ্ডব নৃত্য করেন। একবার তান্ডব নৃত্য করে সমগ্র সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে গিয়েছিলেন
তিনি। কেন শঙ্কর এত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন তা জানেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ভগবান শিবশঙ্কর যখন তাণ্ডব নৃত্য
করেন তখন তাঁর চোখ রাগে লাল হয়ে যায় এবং
সমগ্র বিশ্ব কাঁপতে থাকে। শিবের স্ত্রী দেবী সতী। সতীর বাবা প্রজাপতি দক্ষ একদিন
এক যজ্ঞের আয়জন করলেন। সেই যজ্ঞে সমস্ত দেবকূল নিমন্ত্রিত হলেন, শুধু জামাতা
মহাদেবকে নিমন্ত্রণ করলেন না। এই খবর শুনলেন সতী। তিনি অত্যন্ত অপমানিত হলেন এবং
বাবার কাছে গেলেন প্রশ্ন করতে। এদিকে মেয়েকে দেখে দক্ষ সকলের সামনেই জামাইয়ের
নিন্দা শুরু করলেন। পতিনিন্দা সতী সহ্য করতে পারেননি। তিনি যজ্ঞাগ্নিতে আত্মাহুতি
দিলেন।
মহাদেব স্ত্রীর মৃত্যুর কথা জানতে
পেরে শোক ও রাগে উন্মাদ হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি যজ্ঞস্থলে পাঠালেন নিজের গণ
বীরভদ্রকে। বীরভদ্র গিয়ে প্রজাপতি দক্ষের শিরচ্ছেদ করলেন। এরপর মহাদেব সতীকে কাঁধে
নিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে সারা বিশ্বে তান্ডবনৃত্য করতে লাগলেন। শিবের এই উগ্র রূপ দেখে
সমস্ত দেবতা, দানব এবং সমগ্র বিশ্ব ভীত হয়ে পড়ল।
বাধ্য হয়ে সকল দেবতারা ব্রহ্মদেবের
কাছে গেলেন, তিনি সবাইকে বললেন বিষ্ণুর কাছে যেতে। ভগবান বিষ্ণু বললেন এই সময়ে মহাদেবের সামনে যাওয়া ঠিক
নয়। যতক্ষণ মা সতীর মৃতদেহ তাঁর কাঁধে থাকবে ততক্ষণ তিনি শান্ত হবেন না। তখন শ্রী
হরি সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করলেন।
কথিত আছে, মায়ের শরীরের বিবিধ অংশ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পড়েছিল।
সেই সকল স্থানে তৈরি হয়েছিল শক্তিপীঠ। দেবী সতীর শরীরের সমস্ত অংশ নীচে পড়ে গেলে
তবে প্রশমিত হয়েছিল মহাদেবের ক্রোধ। রক্ষা পেয়েছিল সৃষ্টি।