জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে বট সাবিত্রী ব্রত পালন করা হয়। কথিত আছে,
জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে যমরাজ বটগাছের নিচে সাবিত্রীর কাছে স্বামী সত্যবানের
জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সাবিত্রী যমরাজের কাছে তিনটি বর চেয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি
এমন বর ছিল, যা যমরাজকেও বোকা বানিয়েছিল এবং সাবিত্রীর স্বামীর জীবন ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল।
সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনটিতে বট সাবিত্রী ব্রত পালন করা হয়। এই দিনে বটবৃক্ষ, সাবিত্রী
ও সত্যবানের পূজা করা হয়। বিবাহিত মহিলারা উপবাস পালন করেন। বিশ্বাস করা হয় যে এই
উপবাস করলে স্বামীর জীবনের বিপর্যয় দূর হয় এবং তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেন। এবার বট
সাবিত্রীর উপবাস পালিত হবে ১৮ মে। ওই দিন রাত ০৯:৪২ মিনিটে শুরু হবে এবং ১৯ মে রাত
০৯:২২ মিনিটে শেষ হবে। এই বিশেষ দিনে শোভন যোগ তৈরি করা হচ্ছে যা চলবে সন্ধ্যা ০৬:১৭
মিনিট পর্যন্ত। বট সাবিত্রী ব্রত উপলক্ষ্যে আমরা আপনাদের বলব সাবিত্রী কি বর চেয়েছিলেন,
কেন সাবিত্রীর নাম পৃথিবীতে অমর হয়ে গিয়েছিল।
আরও
পড়ুন: Eight Chiranjibi: পুরাকাল থেকেই অমর তারা, পৃথিবীর বুকে আজও রয়েছেন এই আট চিরঞ্জীবী
কিংবদন্তী অনুসারে, সাবিত্রী যখন সত্যবানকে নিজের স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন,
তখন নারদ তাঁকে বলেছিলেন যে সত্যবান স্বল্পায়ু। তাই চাইলে সাবিত্রী অন্য কাউকে স্বামি
হিসেবে চাইতে পারেন। কিন্তু সাবিত্রী বলেন যে তিনি সত্যবানকেই স্বামী হিসেবে মনে মনে
বরণ করেছেন, তাই তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এরপর সত্যবান ও সাবিত্রীর
বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরেই সত্যবানের শ্বশুর ও শাশুড়ি অন্ধ হয়ে যায়,
তাঁর রাজপাটও কেড়ে নেওয়া হয়। রাজগৃহ থেকে বিতাড়িত হয়ে সাবিত্রি-সত্যবান শ্বশুর-শাশুড়ির
সঙ্গে অরণ্যে থাকতে শুরু করেন।
একদিন সত্যবানের প্রচণ্ড মাথার যন্ত্রণা হয়। স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে সাবিত্রী
বসে থাকেন। তিনি ছিলেন এক আশ্চর্য তেজস্বী মহিলা। সাবিত্রী দেখলেন যমরাজ তাঁর দূতদের
নিয়ে এসেছেন সত্যবানের প্রাণ নিতে। সত্যবানের জীবন নিয়ে যমরাজ দক্ষিণ দিকে অগ্রসর
হলেন। সাবিত্রীও তাঁর পিছু পিছু যেতে থাকলেন। যমরাজ সাবিত্রীকে বেশ কয়েকবার ফিরে যেতে
বললেন, কিন্তু তেজস্বী নারী ফিরলেন না। তখন যমরাজ বললেন, “আমার কাছে বর চাও এবং এখান
থেকে ফিরে যাও।” তখন সাবিত্রী ধর্মরাজের কাছে তিনটি বর চাইলেন।
প্রথম বর
সাবিত্রী খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধির নারী ছিলেন। তিনি যমরাজকে প্রথম বরে বলেছিলেন যে, “আমার শাশুড়ি এবং শ্বশুর অন্ধ। আপনি
তাঁদের চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দিন যাতে তাঁরা আবার পৃথিবীর আলো দেখতে পারেন।” যমরাজ বলেন,
‘তথাস্তু’।
আরও
পড়ুন: Kedarnatha Badrinath: IRCTC-এর দারুণ অফার! নামমাত্র টাকায় ঘুরে আসুন কেদার-বদ্রী
দ্বিতীয় বর
দ্বিতীয় বরে সাবিত্রী বলেছিলেন যে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ছিলেন রাজা-রাণী।
কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে তাঁদের রাজ্য ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আজ বৃদ্ধ বয়সে দম্পতি
অরণ্যবাসী। তাই আপনি আবার তাঁদের রাজপাট ফিরিয়ে দিন।” এক্ষেত্রেও ধর্মরাজ রাজি হন
এবং তথাস্তু বলেন।
তৃতীয় বর
তৃতীয় বরে, সাবিত্রী যমরাজের কাছে শত পুত্রের মা হওয়ার এবং অখণ্ড সৌভাগ্যের
বর চান। যমরাজ ভেবেছিলেন এই শেষ বর দেওয়ার পর তিনি সাবিত্রীকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।
তাই কিছু না ভেবে এবারেও তিনি বলেন ‘তথাস্তু’। এই তৃতীয় বরদানেই হেরে গেলেন স্বয়ং মৃত্যুর
দেবতা। সাবিত্রী বললেন, “এবার আপনাকে আমার স্বামীর জীবন ফিরিয়ে দিতে হবেই কারণ আপনিই
আমাকে শত পুত্রের জননী হওয়ার বর দিয়েছেন। আমি একজন পবিত্র নারী। স্বামীর জীবন আপনি
না ফিরিয়ে দিলে আপনার তৃতীয় বর ফলবে না। সাবিত্রীর কথা শুনে যমরাজ নিজের ভুল বুঝতে
পারেন এবং সত্যবানের জীবন ফিরিয়ে দেন।