বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম বহু বছর আগে বলে গিয়েছিলেন,
"মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান
মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।"
এ'থা পড়ে সবাই, কিন্তু মানে ক'জন? সকলেই মানলে আজ এত হিংসা, হানাহানি শব্দগুলিরই কোনও অস্তিত্ব থাকত না। তবে সকলেই মানে না এ তথ্যও তো ঠিক নয়। নাহলে হিন্দু মৃতের শেষকৃত্য করছেন মুসলমান প্রতিবেশী বা মুসলিমদের রোজার সাথে রোজা রাখতে কখনও কখনও হিন্দুদেরও তো দেখা যেত না। তাই সম্প্রীতি রয়েছে অবশ্যই, তার বহি:প্রকাশ কখনও ঘটে মানবিকতার মধ্য দিয়ে, কখনও না ঈশ্বরের মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশের ঢাকায় রয়েছে অতি প্রাচীন ঢাকেশ্বরী মন্দির। ভারত থেকে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ঢাকেশ্বরী দেবীকে দর্শন করতে ঢাকায় যান। তাঁদের সানন্দে অভ্যর্থনা জানান সংখ্যাগুরু ইসলাম সম্প্রদায়ের দেশ বাংলাদেশ।
ঢাকেশ্বরী মন্দির ৫১ শক্তিপীঠের একটি। বিশ্বাস অনুসারে, এখানে দেবী সতীর মুকুটের রত্ন পড়েছিল। দূর-দূরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীরা এখানে গহনা ও দামি শাড়ি দান করেন। মা সে'সব দ্বারা শোভিত।
কথিত আছে, ঢাকেশ্বরী দেবীর নামানুসারে শহরের নাম ঢাকা হয়। এই মন্দিরে হিন্দুদের চেয়ে বেশি মুসলিম ভক্তরা আসেন।
সেন রাজা বল্লাল সেন দ্বাদশ শতাব্দীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি সংস্কার করেন। মন্দিরটিকে বাংলার স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেবী মাতার মূর্তির দিকে চারটি শিব মন্দির রয়েছে, যা স্ব স্ব ভাবে অনন্য।
কথিত আছে, দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পর প্রতিমাদের জলে নয়, আয়না দেখিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এই মন্দিরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এতে মন্দিরের অর্ধশতাধিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা পুনরুদ্ধার করতে প্রায় ২৫ বছর লেগেছিল। ১৯৯৬ সালে, ঢাকেশ্বরী মন্দির আবার সম্পূর্ণ হয়। সেই বছরই এই মন্দিরকে বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে দেড় বিঘা জমি দান করেন। মন্দিরের পুরনো রূপ ধরে রাখতে গত ছয় দশক ধরে এই দাবি জানানো হচ্ছিল।
১৯৭১ সালের আগে এই মন্দির যখন পাকিস্তানের অন্তর্গত ছিল, তখন এর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। অল্প কিছু ভক্ত এখানে আসতেন। আজ এই মন্দির হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উদাহরণ হয়ে উঠেছে।