ভগবান শিব
সমগ্র সৃষ্টির আদি কারণ। ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং সমগ্র মহাবিশ্বের
উৎপত্তি শিব থেকে। ভগবান শিব সম্বন্ধে বলা হয় যে শিব নিরাকার, আদি এবং অসীম। শিব জগতে সকল রূপে বিরাজমান। অতএব, শিবকে যে
কোনও একটি রূপের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার অর্থ তাঁকেই সীমাবদ্ধ করা।
Success Tips: জীবনে করা ৭টি পরিবর্তন আপনাকে এগিয়ে দেবে সাফল্যের পথে
শিবের রূপ
অন্যান্য দেব-দেবীদের থেকে একেবারেই আলাদা। শিবকে ফুলের মালা এবং গহনা দিয়ে
সাজানোর পরিবর্তে, তিনি নিজেকে ভস্ম দিয়ে সাজান। মহাদেবের গলায় সাপের
পৈতা, বাঘছালকে পোশাক হিসাবে পরিধান করে। তাঁর কপালে চন্দ্র শোভিত, জটায় গঙ্গা
বিরাজমান। ভগবান শিবের পরিহিত প্রতিটি জিনিসের বিশেষ গুরুত্ব এবং অর্থ রয়েছে।
চাঁদ: ভগবান শিবের মাথায় অর্ধচন্দ্র
শোভা পাচ্ছে। মহাদেব অর্ধচন্দ্রকে অলঙ্কারের মত চুলে পরিয়েছেন। তাই ভগবান শিবকে
সোম ও চন্দ্রশেখরও বলা হয়। চাঁদের আভা উজ্জ্বল, হালকা, যা মনের মধ্যে ভাল চিন্তার জন্ম দেয়। ভগবান শিবের মাথায় থাকা অর্ধচন্দ্রকে
শুরু থেকেই মনের স্থিতিশীলতা এবং অসীমতার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
সাপের পৈতা: ভগবান শিব ফুল, রত্ন বা কোনও ধাতুর মালা পরেন না বরং সাপের মালা পরেন। সর্পরাজ বাসুকি রয়েছেন শিবের
গলায়। একটি সাপ শিবের গলায় তিনবার জড়ানো হয়, যা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সূচক হিসাবে বিবেচিত হয়। সাপ হল তমোগুণী প্রবৃত্তির
প্রতীক এবং শিবের গলায় থাকা এই বার্তা দেয় যে তমোগুণী প্রবণতা দেবাদিবের নিয়ন্ত্রণে
রয়েছে।
Arabul Islam: ভোটের আগে ছাঁটা হল ডানা, গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে আরাবুল ইসলামকে সরিয়ে দিল তৃণমূল
তৃতীয় নয়ন: ভগবান শিবে ত্রিনয়নধারী। ক্রোধের
সময় তাঁর তৃতীয় নয়ন খুলে যায়। সাধারণ পরিস্থিতিতেও ভগবান শিবের তৃতীয় নয়ন
বিবেক রূপে জাগ্রত থাকে। তাই, মহেশ্বরের তৃতীয় চোখকে জ্ঞান এবং
সর্বব্যাপীতার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই তৃতীয় নয়ন দৃষ্টি প্রদান করে যা
পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরে। তাই শিবকে ত্র্যম্বক বলা হয়।
ত্রিশূল: শিবের হাতে সর্বদা অস্ত্র হিসেবে
ত্রিশূল থাকে। বিশ্বাস করা হয় যে ত্রিশূল ঐশ্বরিক, শারীরিক এবং
বৈষয়িক তাপ ধ্বংস করার জন্য একটি মারাত্মক অস্ত্র। ভগবান শিবের ত্রিশূলে রজঃ সত্ত্বঃ এবং তমঃ এই তিনটি গুণ রয়েছে। এর পাশাপাশি ত্রিশূল জ্ঞান, আকাঙ্ক্ষা ও পরিপূর্ণতার প্রতীক।
ডমরু: ডমরু বাজানোর সাথে সাথে শিবের
তান্ডব শুরু হয়। মহাদেবের ডমরুর রহস্য হল এর মহাজাগতিক শব্দ 'নাদ' উৎপন্ন করে, যা ব্রহ্মার রূপ বলে মনে করা হয়।
কারণ যখন ধ্বংস হয় তখন ব্রহ্মা সৃষ্টি করেন। ডমরুকে বিশ্বের প্রথম বাদ্যযন্ত্র
বলে মনে করা হয়। শিবের হাতে ডমরু সৃষ্টির সূচনা এবং ব্রহ্মার ধ্বনি নির্দেশক।
রুদ্রাক্ষ: রুদ্রাক্ষ সম্পর্কে বিশ্বাস আছে
যে এটি শিবের অশ্রু থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে, যখন শিব গভীর ধ্যানের পরে চোখ খুলেছিলেন, তখন তাঁর
চোখ থেকে একটি অশ্রুবিন্দু পৃথিবীতে পড়েছিল, যা থেকে রুদ্রাক্ষ গাছের জন্ম
হয়েছিল। ভগবান শিব নিজের গলায় এবং হাতে রুদ্রাক্ষ পরিধান করেন যা পবিত্রতা এবং
সাত্ত্বিকতার প্রতীক।
গঙ্গা: শিবের জটায় গঙ্গার অধিষ্ঠান।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, গঙ্গার উৎস হল মহাদেব। শিবের জটায়
গঙ্গার অধিষ্ঠান আধ্যাত্মিকতা এবং পবিত্রতার শিক্ষা দেয়।
বাঘছাল: বাঘকে শক্তি এবং কর্তৃত্বের প্রতীক হিসাবে
বিবেচনা করা হয়। ভগবান শিব বাঘের ছাল পোশাক হিসাবে পরেন, যার মাধ্যমে
প্রমাণিত হয় যে তিনি সমস্ত শক্তির ঊর্ধ্বে। এছাড়াও, এটি
নির্ভীকতা এবং সংকল্পের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।
নন্দী: শিবের বাহন নন্দী বৃষভ অর্থাৎ
ষাঁড়। তাই প্রতিটি শিব মন্দিরে নন্দী থাকেন। নন্দীর চারটি পা ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষের চারটি সাধনাকে নির্দেশ করে।
ভস্ম: ভগবান শিব তাঁর শরীরে
ভস্ম মাখেন। এটি বার্তা দেয় যে পৃথিবী মরণশীল এবং সবকিছুকে একদিন ছাইতে পরিণত হতে হবে। কিন্তু
যখন ধ্বংস হবে তখন অবশ্যই সৃষ্টিও হবে। ভস্ম শিবের ধ্বংসের প্রতীক, আর ব্রহ্মা সৃষ্টির
প্রতীক।