মন্দির শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে দেব-দেবীর কথা আসে। কিন্তু আজ আমরা আপনাদের
ভারতের এমন একটি মন্দিরের কথা বলছি, যেখানে কোনও অলৌকিক শক্তির অধিকারী দেবতার স্থান
নেই। বরং, এটি ভারতে জন্মগ্রহণকারী মহান ঋষি, সাধু, জ্ঞানী নারীদের পাশাপাশি ভারতের
স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বীরদের জন্য উৎসর্গীকৃত।
এই মন্দির নির্মাণের পিছনে একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ঐতিহাসিক বীরদের
স্মৃতি সংরক্ষণ করা। হ্যাঁ, আমরা উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে অবস্থিত ‘ভারত মাতা মন্দির’
নিয়ে কথা বলছি।
এখানে ভারত মাতা মন্দিরের নাম থেকেই স্পষ্ট যে এই মন্দির ভারতের গৌরবময়
ইতিহাসের গল্প বলে। এই মন্দির নির্মাণের কৃতিত্ব ‘স্বামী নিত্যানন্দ গিরি মহারাজ’-এর।
তিনি ১৯৮৩ সালে এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী
ইন্দিরা গান্ধি।
ভারত মাতা মন্দির একটি আটতল বিশিষ্ট। এর প্রতিটি তল বিভিন্ন বীরদের জন্য
উৎসর্গীকৃত। একই সময়ে, এই মন্দিরের মোট উচ্চতা ১৮০ ফুট বলে মনে করা হয়। মন্দিরের
প্রথম তলা ভারতমাতাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এখানে বালির উপর ভারতের একটি বিশাল মানচিত্র
তৈরি করা হয়েছে যা লাল এবং নীল আলো দিয়ে সজ্জিত।
অন্যদিকে, মন্দিরের দ্বিতীয় তলাটি ‘সূর্য মন্দির’ নামে পরিচিত। এই তলাটি
ভারতের বীরদের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে, যেখানে মহাত্মা গান্ধি, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী,
গুরু গোবিন্দ সিং, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শিবাজি মহারাজ, রানি লক্ষ্মীবাই, ভগত সিং,
সুখদেব, চন্দ্রশেখর, রাজগুরু প্রমুখের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Kakori Conspiracy: কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা যা বদলে দিয়েছিল বিপ্লবের ছবি
আরও পড়ুন: এটি ভারতের সবচেয়ে ধীরগতির ট্রেন, ৫ ঘন্টায় অতিক্রম করে মাত্র ৪৬ কিলোমিটার পথ
এরপর তৃতীয় তলায় ভারতের নারী শক্তিকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এতে কৃষ্ণভক্ত
মীরাবাই, সতী সাবিত্রী, মৈত্রেয়ী প্রভৃতি ভারতের সমস্ত জ্ঞানী নারীর মূর্তি স্থাপন
করা হয়েছে।
চতুর্থ তলাটি ভারতের মহান সাধুদের কথা মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে,
যেখানে স্থান পেয়েছেন ভক্তি যুগের শ্রেষ্ঠ কবি শ্রী রামচরিতমানসের রচয়িতা গোস্বামী
তুলসীদাস, বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ, সাঁইয়ের মূর্তি।
অন্যদিকে, পঞ্চম তলা ছক দ্বারা সজ্জিত, যেখানে ইতিহাস এবং ভারতের বিভিন্ন
অংশকে চিত্রিত করে সুন্দর করে চিত্রকর্মও করা হয়েছে।
এরপর ষষ্ঠ তলাকে বলা হয় ‘শক্তি মন্দির’, যেখানে হিন্দু ধর্মের আদি শক্তির
মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে মাতা দুর্গা, মাতা পার্বতী, রাধা রানী, কালী মাতা
এবং সরস্বতী মাতার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
সপ্তম তলায় ভগবান বিষ্ণুর দশাবতারের বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাঁদের মূর্তি
স্থাপন করা হয়েছে।
শেষ তল অর্থাৎ অষ্টম তলাটি ভগবান শঙ্করকে উৎসর্গ করা হয়েছে, কারণ ভগবান
শিবকে প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিক শক্তির প্রধান দেবতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই তলায়
হিমালয়, হরিদ্বার এবং সপ্ত সরোবরের সুন্দর দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।