কুরুক্ষেত্রের ময়দানে মহাভারতের
যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বাপর যুগের অবসান
ঘটে। এরপর বাড়তে থাকে অনাচার, অধর্মবৃদ্ধি দেখে যুধিষ্ঠির নাতি পরীক্ষিতের হাতে সিংহাসনভার তুলে দেন এবং চার ভাই ও দ্রৌপদীকে নিয়ে হিমালয়ের পথে যাত্রা করেন।
আরও পড়ুন: Uttam Kumar: গৌরীর কাছে ফিরে গেলে তবেই হবে শ্যুটিং, সুপ্রিয়ার কাছে থাকা নিয়ে বন্ধু উত্তমের উপর বেজায় চটেছিলেন শ্যামল মিত্র
আরও পড়ুন: Shraban Month Special: শ্রাবণ মাস শুরু হয়ে গিয়েছে, সোমবার করুন পারদ শিবলিঙ্গে পুজো
কিন্তু আপনি কি জানেন যে দ্বাপর
যুগেই কলিযুগের সূচনা হয়েছিল। আজ শোনা যাক পরীক্ষিৎ ও কলিযুগের
গল্প।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতির কারণে
কলিযুগ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি, শুধুমাত্র
যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কুরু রাজবংশের ধ্বংস এবং অভিমন্যুর পুত্র পরীক্ষিতের হত্যার পর কলিযুগ সারা জগতে ছড়িয়ে পড়ে।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর পাণ্ডবদের বংশের অবসান ঘটাতে দ্রোণপুত্র অশ্বথামা উত্তরার গর্ভে ব্রহ্মাস্ত্র দ্বারা আঘাত
হানেণ। অশ্বত্থামা মাতৃগর্ভেই পরীক্ষিৎকে
হত্যা করেছিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যোগবলে ভ্রুণকে পুনরুজ্জীবিত
করেন। মাতৃগর্ভেই দ্বিতীয়বার জন্ম হয়েছিল পরীক্ষিতের।
যুদ্ধের কিছুকাল পরে পান্ডবরা যখন শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর কথা শুনেছিলেন,
তখন তাঁরা সবকিছু
ত্যাগ করে দ্রৌপদীর সঙ্গে হিমালয়ে চলে যান এবং নাতি পরীক্ষিৎকে সিংহাসনের
উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করেন।
কলিযুগের সূচনা সম্পর্কে তাঁর পিতামহ
অর্থাৎ মধ্যম পান্ডব অর্জুন বলেছিলেন, পরীক্ষিৎ যেন কলিযুগের মোকাবিলা করতে পারবে সেইভাবে সাম্রাজ্যকে প্রস্তুত করেন। কথিত আছে যে, কলিযুগে যখন বিশ্বাসঘাতকতা, লালসা, লোভ এবং ধূর্ততা পরীক্ষিতের সাম্রাজ্যের শেষ সীমায়
পৌঁছায় তখন রাজা এই সমস্ত অশুভের
মোকাবিলা করেন।
ব্রহ্মা ৪টি যুগ সৃষ্টি করেছেন, যথা- সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলিযুগ।
সত্যযুগ চলেছিল ১৭,২৮,০০০ বছর, ত্রেতাযুগে ১২,৯৬,০০০ বছর এবং দ্বাপর যুগ ৮,৬৪,০০০ বছর রাজত্ব করেছিল। কলিযুগ ব্রহ্মাকে
প্রশ্ন করেছিলেন, “এখন যখন আমার ৪,৩২,০০০ বছর শাসন করার পালা, আপনি আমাকে আপনার রাজ্য ছেড়ে যেতে বলছেন!”
শেষ পর্যন্ত পরীক্ষিৎ বুঝতে পারলেন যে তিনি ব্রহ্মার
বিরুদ্ধে যেতে পারবেন না। তবে রাজা কলিযুগকে সতর্ক করে
জানিয়ে দেন যে তাঁর রাজত্বের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কলি মানবজাতিকে ধ্বংস করবেন না। সেই সঙ্গে পরীক্ষিৎ আরও বলে দেন যে, ৫টি জায়গায় কলি থাকবেন
আর যারা এসব স্থানে যাবেন তারাই হবে কলিযুগের শিকার।
যেসব জায়গায় সুরা পরিবেশন করা হয়, সেখানে কলি থাকবে।
এখানে যারা যেচে আসবে কলি তাদেরই স্বাগত জানাতে হবে। কাউকে জোর করবে না।
পতিতালয়ে যারা নিজেরা ইচ্ছা করে আসে তাঁরা নিজেদের
মর্যাদা, বিবেক ও মানবতা ত্যাগ করে আসবে। কলি তাদের ধ্বংস করবে।
কষাইখানায় মানুষ তার
মনুষ্যত্বকে ত্যাগ করে। সেখানে কলির থাকার
অধিকার রয়েছে।
যারা সারা জীবন জুয়াখেলায় জীবন কাটায় তাদের জীবন নষ্ট করার অধিকার কলির রয়েছে।
সোনা লোভের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, তাই কলি একে ধ্বংস করতে
পারে।
কলিযুগ জানত যে সে তার রাজত্ব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু পরীক্ষিতের রাজ্য এখনও তার দখলে আসেনি। যতদিন পরীক্ষিত
জীবিত থাকবে ততদিন তা সম্ভব নয়। তাই কলিযুগ তাঁর সোনার মুকুটে প্রবেশ করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে
দেয়। এরপর পরীক্ষিত এক সন্ন্যাসীকে
অপমান করেন। যা পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।