সম্প্রতি হাই কোর্টের
রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী চাকরিহারা হয়েছেন। মুড়ি মুড়কির
মতো যোগ্য_অযোগ্যরা
একত্রে মিশে গিয়েছেন সেই রায়ে। কলকাতা হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে ২০১৬ সালের গোটা
প্যানেল। বর্তমানে এই ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে স্কুল সার্ভিস
কমিশন ও রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্যানেল বাতিল হওয়া
শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের এপ্রিল মাসের পুরো বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। যতদিন
শীর্ষ আদালতে মামলা চলবে ততদিন এই প্রক্রিয়া বজায় থাকবে। এবার এসএসসি প্যানেল
বাতিল প্রসঙ্গ তুলে হাইকোর্টকে তুলোধনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ
সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যা য়।
বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিষেক বলেছেন কলকাতা হাই কোর্টের
একাংশ যেভাবে বিজেপির সঙ্গে যোগসাজোশ করে চলছে, তাতে ওই আদালত তুলে দেওয়া উচিৎ। হাইকোর্টের রায়কে তিনি
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
কল্যাণ-কাঞ্চন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল তৃণমূল
লোকসভা ভোটের আবহে
এমনিতেই সরগরম দেশ। তার মধ্যে ঘৃতাহুতি দিয়েছে এসএসসি প্যানেল বাতিলের ঘটনা।
বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কর্মসূচিতে পুরুলিয়ায় ছিলেন। রাঘবপুর
মোড় এলাকার একটি বাগানবাড়িতে কর্মী বৈঠকের পর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যা য়ের প্রসঙ্গ
তুলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘একজন বিচারপতি, বিচারপতি থাকাকালীন বলেছেন, ‘বিজেপি অ্যাপ্রোচ মি, আই অ্যাপ্রোচ বিজেপি’। তার মানে বিজেপির সঙ্গে তিনি যোগাযোগে ছিলেন। আর সেই
বিচারপতি যদি বিজেপিতে যান তাহলে ভারতবর্ষ থেকে কলকাতা হাই কোর্টকে তুলে দেওয়া
উচিৎ। বেটিং-র নতুন মাত্রা অ্যাড করেছে কলকাতা হাই কোর্টের একাংশ। বিজেপির লোকেরা
বেটিং করছেন। আর সেই বেটিংয়ের দোসর হিসাবে কাজ করছেন বিচারকের আসনে থাকা
বিচারপতিরা।’’ তাঁর আও
সংযোজন, ‘‘আমি মনে করি
গণতন্ত্রে কারও কোনও ক্ষমতা নেই। শেষ কথা বলবে মানুষ। বিচারব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম, বিজেপি, ইডি, সিবিআই, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, ইলেকশন কমিশন যার যত ক্ষমতা আছে প্রয়োগ করে নিন। ৪ তারিখ
ভোট বাক্স খুললে দেখবেন জয় মানুষের হবে। চক্রান্তকারীদের নয়।’’
মে মাসের শুরুতেই মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট, দিনক্ষণ জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী
রায় ঘোষণার আগে রাজ্য
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছিলেন সপ্তাহের শুরুতেই তিনি বোমা ফাটাবেন।
সেই প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আদালতের তর্ক হিসাবে, যুক্তি হিসাবে যদি আমি দেখি এক হাজার, দেড় হাজার জন বাড়তি প্যানেলের
বাইরে থেকে চাকরি পেয়েছেন, তাই পুরো প্যানেল বাতিল। একজন বিচারপতি বিজেপিতে জয়েন
করেছেন, তার মানে তো
সব বিচারপতি বিজেপি হয়ে গেল তা আমি তো বলছি না। যদি আপনার যুক্তি ধরে নিই, তার মানে তাহলে তো তাই হচ্ছে।
বিচারপতি বলেছেন, সবার
চাকরি বাতিল করে দেওয়া হোক। তার দু’দিন আগে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, আমি সপ্তাহের শুরুতেই বোমা ফাটাব।
একটা সপ্তাহ শুরু হয় কবে? সোমবার। রায় হয় কবে? সোমবার। এটা কি কাকতালীয়? আমি এই প্রশ্নটাই সাধারণ মানুষের কাছে রাখছি।’’
অভিষেকের কথায়, ‘‘প্যানেলের বাইরে কিছু লোক চাকরি
পেয়েছে বলে গোটা প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক। এমন বিষয় ভূ-ভারতে
আমরা কোথাও দেখিনি। কলকাতা হাই কোর্টের একাংশ বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশে রয়েছেন।
তাঁদের কথায় বিচার ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়ে রায় দিচ্ছে। কেন শুভেন্দু অধিকারীর
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে না?’’
পরিশেষে যারা চাকরি
হারিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাছয়ের আশ্বাসবাণী, ‘‘যাদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের অনুরোধ করব, আপনারা বিব্রত হবেন না। বিরত হবেন
না। দলগতভাবে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তৃণমূল কংগ্রেস আপনাদের পাশে ছিল, থাকবে। যাঁরা মেধাযুক্ত, যাঁদের চাকরি প্রয়োজন, যাঁরা কষ্ট করে মেধার ভিত্তিতে
চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের কারও
চাকরি আমরা যেতে দেব না। আজ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই যে হাই কোর্টের অর্ডার, তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিজেপির
দুর্নীতি রয়েছে।’’