‘রামায়ণ’-এর রচয়িতা মহাকবি বাল্মীকি। কিন্তু এই
মহাকাব্যের আদিকাণ্ডেই বলা হয়েছে যে, রামকথা বাল্মীকির কল্পনা থেকে জাত নয়।
বরং ইক্ষ্বাকু বংশের রাজা রামচন্দ্রের জীবন ও কাহিনি ঘিরেই রামায়ণ তৈরি।
লিখিত হওয়ার আগে
রামচন্দ্রের কাহিনি লোকমুখে প্রচলিত ছিল। কিন্তু তাকে মহাকাব্যের রূপদান করেন
বাল্মীকিই। কিন্তু ভারতীয় লোকসমাজে ‘রামায়ণ’ রচনা নিয়ে অন্য একটি মতও রয়েছে। ‘রামায়ণ’ রচনা শেষ করে বাল্মীকি তাঁর কাব্য
দেবতাদের পাঠ করে শোনাতে আগ্রহী হন। ইন্দ্র, বরুণ, বায়ু, অগ্নি প্রমুখ দেবতা এবং গঙ্গা ও যমুনার
মতো দেবী সেই কাব্য শুনে বিমোহিত হয়ে পড়েন।
দেবতাদের মধ্যে
উপস্থিত ছিলেন নারদ। তিনি কিন্তু প্রশংসায়
অংশগ্রহণ করলেন না। তাঁর নীরবতা দেখে বাকিরা প্রশ্ন করেন। নারদ জানান,
তিনি এর চেয়েও উৎকৃষ্ট এক ‘রামায়ণ’-এর সন্ধান জানেন। দেবর্ষি জানান সেই
রামায়ণের রচয়িতা বজরংবলি হনুমান।
এই কথা বিশ্বাস
না করে মহর্ষি বাল্মিকী পবনপুত্রের ঠিকানা জানতে চান। নারদ জানান,
সীতার বরে অমরত্বপ্রাপ্ত হয়ে হনুমান
হিমালয়ের পাদদেশে এক কদলীবনে বাস করছিলেন।শেষজ পর্যন্ত বাল্মিকী মহাবলীর কাছেযান।
কিন্তু হনুমান তখন সেখানে ছিলেন না।
ইতিমধ্যে
বাল্মিকী দেখতে পান পর্বতগাত্রে কী সব লেখা যেন খোদিত রয়েছে। বাল্মীকি সেগুলি পড়তে
শুরু করেন এবং বুঝতে পারেন যে, রুক্ষ পাথরের গায়ে নখের আঁচড়ে কেউ ‘রামায়ণ’ লিখেছেন। লেখক যে হনুমান তা আর বুঝতে
বাকি থগাকে না তাঁর।
হনুমান
বাল্মীকিকে বলেছিলেন তিনি ‘রামায়ণ’ রচনা করেছেন তাঁর আরাধ্য শ্রীরামচন্দ্রকে সদা স্মরণে রাখার
জন্য। এ ‘রামায়ণ’
একান্ত ভাবেই তাঁর ব্যক্তিগত উপলব্ধির
প্রকাশ। কিন্তু বাল্মীকির রচনা এক মহান কাব্য। যা রচিত হয়েছে এক বিশেষ দূরত্ব
থেকে। সে কারণে যুগ যুগ ধরে মানুষ বাল্মীকির কাব্যই পড়বেন,
হনুমানের রচনা নয়।
এই বলে,
হনুমান তাঁর ‘রামায়ণ’ লেখা পর্বতটিকে উপড়ে ছুড়ে দিলেন দূরে।
শতসহস্র যোজন পার হয়ে সেটি সমুদ্রে গিয়ে পড়ল। বাল্মীকি বিস্মিত হলেন এই কাণ্ডে।
হনুমান তাঁকে জানালেন, এই ‘রামায়ণ’-এর আর কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ,
রামকথা তাঁর হৃদয়ে খোদিত হয়ে আছে।