বাঙালির কাছে প্রিয় খাদ্য হল মাছ ভাত। কথাতেই রয়েছে মাছে-ভাতে বাঙালি। একাধিক গবেষণায়
প্রমাণিত হয়েছে যে, স্মৃতিশক্তি ও
মস্তিষ্কের পুষ্টি বৃদ্ধিতে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে, তৈলাক্ত মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের
জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ
হেলথের পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন কোষের প্রাচীর (সেল মেমব্রেন) গঠন করতে উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা নেয় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
দীর্ঘদিন যৌবন ধরে রাখতে চান, মেনে চলুন এই নিয়মগুলি
গবেষকরা বলছেন, যারা সপ্তাহে তিন দিন বা এর বেশি মাছ খান তাদের মস্তিষ্কের
নিউরন কোষ অনেক বেশি সুগঠিত ও বেশি কর্মক্ষম।
বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ, যেমন- ইলিশ, আড়,
ম্যাকারেল, ভেটকি, পমফ্রেট, বোয়াল, চিতল, রুই ও কাতলা
ইত্যাদি জাতীয় মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, আয়োডিন, ভিটামিন ডি, ফসফরাস-সহ নানা খনিজ আমাদের মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে
সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তাই সারা সপ্তাহে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসব মাছ খেতে হবে।
নিউট্রিশনিস্টদের মতে, মস্তিষ্ক ছাড়াও হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে এবং এই দুই প্রধান
অঙ্গের রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে অত্যন্ত উপযোগী মাছে। হার্টের অসুখ ও
মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় মাছের ওমেগা
থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ৭০ থেকে ৭৫ গ্রাম করে মাছ খেতে
পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা।
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা ‘প্রো ব্রেন’ ফুড তালিকার একেবারে প্রথম সারিতে রেখেছেন মাছকে। ছোট বয়সে স্মৃতিশক্তি ও
একাগ্রতা বাড়াতে এবং বেশি বয়সে ‘ডিমেনশিয়া’ বা স্মৃতিহীনতার হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিনের খাবারে
থাকা দরকার এক টুকরা মাছ। ক্রনিক কিডনির অসুখ, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা না থাকলে খাবার তালিকায় মাছ রাখা উচিৎ প্রত্যেকেরই।
Window AC নাকি Split AC, গ্রীষ্মকালে কোনটি ভাল জেনে নিন
শিশু থেকে বয়স্ক সবাই নিশ্চিন্তে মাছ
খেতে পারেন। মাছে যথেষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম ও আয়োডিন। মাছ হল খনিজ পদার্থ আর ভিটামিনের খনি।
অনেকের ছোট মাছ খাওয়ার ঝোঁক রয়েছে। ছোট মাছ
বা শিং-মাগুর মাছ বেশি পুষ্টিকর এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই।
নিয়মিত মাছ খেলে হার্ট অ্যাটাক ও
ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কিছুটা কমে। আমেরিকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের উপর এক স্টাডি
করা হয়েছে। যারা সপ্তাহে মাত্র একদিন মাছ খান তাদের হার্টের অসুখের হার অন্যদের
থেকে ১৫% কম।
তৈলাক্ত মাছে থাকে ডিএইচএ অর্থাৎ
ডোকোসাহেক্সানোয়িক অ্যাসিড যা এক ধরনের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি মস্তিষ্কের
সেরিব্রাল কর্টেক্স (মস্তিষ্কের কোষের ভিত্তি) তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
আমেরিকার মেরিল্যান্ডের ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এক সমীক্ষায় জানিয়েছেন
যেসব ৬০ বছর পেরনো মানুষ সপ্তাহে দুই দিন বা তার বেশি দিন মাছ খান তাদের
দৃষ্টিশক্তি ভাল থাকে।
বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের ম্যাকিউলার
ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ফিশ ডায়েট। ইনস্টিটিউট অফ হেলদি এজিংয়ে ৬৫
থেকে ৯৪ বছর বয়সি ৮০০ জন ব্যক্তির উপর সমীক্ষা চালিয়েছে। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়ম করে সপ্তাহে দুই দিন মাছ
খান তাদের অ্যালঝাইমার্স ডিজিজের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এমনকি এদের
ডিমেনশিয়া অর্থাৎ ভুলে যাওয়ার অসুখ অন্যদের তুলনায় কম। নিয়মিত মাছ খেলে বয়স্ক
পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ, সপ্তাহে ৩৫০-৪০০ গ্রাম মাছ খেতে পারলে অনেক অসুখকে দূরে
সরিয়ে রাখা যাবে। ছোট থেকেই মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ভাল হয়। ইলিশ হোক
বা পোনা,
প্রতিদিনের খাবারে রাখুন এক টুকরা মাছ।