কয়েকশো বছর আগে মহারাজ বিশ্ব সিংহের হাত ধরে শুরু হয়েছিল কোচবিহার রাজবাড়ির এই পুজো। স্বপ্নাদেশ
পেয়েই শুরু হয়েছিল এই পুজো। রাজা না থাকলেও আজও বড়দেবীর
পুজো হয়ে আসছে কোচবিহারে। যদিও এখন এই পুজো রাজ্য সরকারের
অধীনস্ত কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট আয়োজন
করে। রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন নিয়েও
ছড়িয়ে আছে কাহিনী।
কোচবিহারের লোকগাথা অনুসারে জানা যায়, কোচবিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা
বিশ্বসিংহ এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। আবার অপর কাহিনী অনুসারে জানা যায়, মহারাজা বিশ্বসিংহের পুত্র কোচবিহারের দ্বিতীয় মহারাজা নরনারায়ণ
স্বপ্নাদেশে স্ববংশে দশভূজা দুর্গা মূর্তির পুজোর প্রচলন করেন। কোচবিহারের ইতিহাস
মতে, মহারাজা নরনারায়ণের ভাই সেনাপতি চিলা রায় নিজেকে
সংসারের সেরা বীর মনে করতেন। তাই তাঁর মনে বিশ্বাস জন্মায় সিংহাসন তার জন্যই তৈরি।
সিংহাসনের লোভে ভ্রাতৃহত্যার ছক কষেন তিনি। একদিন তিনি দাদা
নরনারায়ণকে হত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়ে রাজসভায় যান সেনাপতি
চিলা রায়। কিন্তু হামলার ঠিক আগেই তিনি দেখতে পান স্বয়ং ভগবতী দুর্গা দশ হাত
দিয়ে রক্ষা করছেন রাজা নরনারায়ণকে। চিলা রায় এই অলৌকিক দৃশ্য দেখে ভীত
সন্ত্রস্ত হয়ে লজ্জায় দাদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এই ঘটনায় নরনারায়ণ নিজেকে ভাগ্যহীন মনে করেন এবং চিলা রায়কে ভাগ্যবান মনে
করেন। নিজের ভাগ্যে দেবী দর্শন না ঘটায় মনের দুঃখে অন্ন জল ত্যাগ করে নির্জনবাস
করতে আরম্ভ করেন নরনারায়ণ। জনশ্রুতি আছে যে এই ঘটনার ৩ দিন পর গভীর রাতে দেবী
দুর্গা নরনারায়ণকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেন, 'বত্স ওঠ, জগৎ সংসার আমার যে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পুজো করে তা প্রত্যক্ষ করো। শরত্কালে
তুমি এই মূর্তি নির্মাণ করে যথাবিধি মেনে পুজো করবে।” এরপরই,
মহারাজা নরনারায়ণ চোখ খুলে ভগবতীকে দর্শন করে প্রণাম করে বলেন
'মা, মহিষাসুরের ডান হাত সিংহ দন্তাঘাত করে
আছে, কিন্তু তাঁর বাম হাত শূন্য রয়েছে।' দেবী দুর্গা তখন বললেন-'ওই স্থানে একটি বাঘ দিও।'
রাজা নরনারায়ণ দেবীর অতসী কুসুমাকার বর্ণ দেখে মনে করলেন ভগবতী দেবী
দুর্গার লাল রং হলে ভালো হয়। সেরূপেই দেবীর মূর্তি স্থাপন
করে দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন।
এখনও এখানে দেবীর গায়ের রঙ লাল, অসুরের গায়ের রঙ সবুজ।
দেবীর বাহন সিংহ অসুরের পা কামড়ে ধরে রয়েছে। আর অসুরের হাতে
কামড় বসিয়েছে একটি বাঘ। দেবীর দুপাশে অবস্থান করছেন, দেবীর
দুই সখী- জয়া ও বিজয়া।
এই পুজোয় আগে নরবলি হলেও এখন হয় না। তবে লাগে নররক্ত। তাছাড়া এমনি বলি দেওয়া হয়।