শারদীয়ার আরাধনার পরেই অনুষ্ঠিত হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে
কমলাসনার উপাসনায় ব্রতী হয় মানুষ। ‘কোজাগরী’ শব্দটি এসেছে ‘ কো জাগরী’ থেকে যার অর্থ
‘কে জেগে আছো’। ঈশ্বর বিশ্বাসী
মানুষ মনে করেন এ রাতে দেবী নিজে স্বর্গ থেকে নেমে আসেন খোঁজ নিতে যে কোজাগরী পূর্ণিমার
রাতে কে জেগে রয়েছে। বলা হয় যারা এই পূর্ণিমায় বিনিদ্র রজনী কাটান তিনি দেবীর কৃপাধন্য
হন। প্রত্যেক বৃহস্পতিবার বাড়ি বাড়ি লক্ষ্মীর ঘট বসে, কোথাও কোথাও ভাদ্র সংক্রান্তি,
পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, দীপাবলীতে লক্ষ্মীর আরাধনা করেন মানুষ।
সন্তান-সন্ততি নিয়ে বাস করা বাঙালি মনে করেন যে দেবী দুর্গার সঙ্গে মর্ত্যধামে
আসেন তাঁর চার সন্তান। লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিক। কার্তিক গণেশ শিব পার্বতীর
সন্তান হলেও লক্ষ্মী কিন্তু হর গৌরীর সন্তান নন। পুরাণ অনুযায়ী তিনি ঋষি ভৃগুর কন্যা।
তাঁর মায়ের নাম খ্যাতি। ধাতা ও বিধাতা নামে লক্ষ্মীর দুই ভাই রয়েছেন। স্কন্দ পুরাণে
বলা আছে, নারায়ণ বা বিষ্ণুকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে কঠোর তপস্যা
করেছিলেন দেবী লক্ষ্মী। ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতারা বিষ্ণুর ছদ্মবেশে তাঁর কাছে হাজির
হন। লক্ষ্মী জানতেন, একমাত্র বিষ্ণুই পারেন বিশ্বরূপ দেখাতে। তিনি বিশ্বরূপ দেখানোর
জন্য দেবতাদের অনুরোধ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য দেবতারা তা না পেরে বিদায় নেন।
অবশেষে লক্ষ্মীর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু গিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হন এবং বিশ্বরূপ
দর্শন করান। তারপরেই দেবীর পাণিগ্রহণ করেন নারায়ণ।
বিষ্ণুপুরাণ, ভাগবত এবং মহাভারত আবার অন্য একটি গল্প বলে। দূর্বাসা মুনির
অভিশাপে স্বর্গরাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন লক্ষ্মী। ফলে সম্পদ সমৃদ্দির দবীই যখন স্বর্গ
থেকে বিতাড়িতা তখন দেবতাদের সম্পদ থাকে কী করে! সুররা সম্পদ হারাতেই অসুররা গিয়ে স্বর্গরাজ্য
দখল করল। তখন দেবতাদের সঙ্গে দেবরাজ ইন্দ্র গেলেন ব্রহ্মার কাছে। ব্রহ্মার পরামর্শে
তারপর যাওয়া হল বিষনুর কাছে। বিষ্ণু সমস্যা সমাধানের উপায় বললেন। জানালেন, সমুদ্র মন্থন
করতে হবে। তাহলে উঠে আসবে অমৃত, যা পান করে দেবতারা অমর হবেন। দেবী লক্ষ্মীকেও উদ্ধার
করা সম্ভব হবে। এইইবার দেবতা ও অসুর মিলে শুরু হল ক্ষীরসমুদ্র মন্থন। তাতে উঠে আসল
নানা রকম মণি-মাণিক্য-রত্ন, ঐরাবত হাতি, উচ্চৈঃশ্রবা ঘোড়া এবং আরো কত কী! সেই সঙ্গে
এল অমৃতের ভাণ্ড এবং হলাহল। সমুদ্র থেকে উঠে এলেন দেবী লক্ষ্মী। তাঁর ঠাঁই হল বিষ্ণুর
বুকে। অমৃত নিয়ে দেবতা অসুরদের যুদ্ধে জয়ী হলেন সুরেরাই। তাই তাঁরা পান করলেন অমৃত।
কিন্তু হলাহল অর্থাৎ বিশ কে পান করবেন! হলাহল পান করে মহাদেব হয়ে উঠলেন নীলকণ্ঠ।