হাওড়ার শিবপুরের রথবাড়ির রথযাত্রা। সে এক মহাধুমধাম ব্যাপার। এখানে
রথ হয় খানিক ভিন্নভাবে। রথবাড়ির রথে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা পুজো পান না, পুজো হয়
নারায়ণের।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই সময়ে দেবী সরস্বতী জিহ্বায় বসেন, হয় সমস্ত ইচ্ছাপূরণ
নারায়ণকে বিশ্বের পালক বলা হয়। জগন্নাথ দেব
নারায়ণেরই তো রূপ। সেই কবে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি বলে গিয়েছেন,
“খৃষ্টে আর কৃষ্টে কিছু
ভিন্ন নেই রে ভাই,
শুধু নামের ফেরে মানুষ ফেরে এ’কথা তো শুনি নাই...”
তাই তাঁদের তো কোনও ভেদ নেই। যিনিই জগন্নাথ তিনিই নারায়ণ একথা
সদা সত্য, চিরন্তন সত্য। আর এই সত্যকেই স্বীকার করে নিয়েছেন রথবাড়ির মানুষেরা।
পুরুষাক্রমে এক প্রথা মেনেও আসছেন। বাড়িতে রথ রয়েছে, তাই গৃহের নাম রথবাড়ি। আসলে
পরিবারটি চট্টোপাধ্যায় পরিবার। এই পরিবারে রথের বিশেষত্ব হল বছরের এই বিশেষ দিনটিতে
এখানে নারায়ণের পুজো হয়।
আরও পড়ুন: তন্ত্রবাধা দোষের কবলে পড়ে প্রতিটি কাজেই আসছে বাধা, এভাবে অশুভ শক্তির হাত থেকে মুক্তি পান
এই নারায়ণ পুজোর নেপথ্য কারণ জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে বেশ
প্রাচীনকালে। বেনারসে বিখ্যাত অগ্যস্ত মিত্র লেনে ছিল চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পৈতৃক
সম্পত্তি। সেখানে নারায়ণের সেবা হত। ফলে উপাধি দেওয়া হয় নারায়ণ। তারপর থেকে এই
পরিবারের সন্তানদের নামের পাশে ‘নারায়ণ’ শব্দটি উপাধিক্রমে দেওয়া হয়।
পারিবারিক নিয়ম মেনে মন্দিরে প্রথমে নারায়ণের পুজো হয়। তারপর
পড়ে রথের রশিতে টান। প্রশাসনিক নির্দেশ অনুসারে নারায়ণকে নিয়ে রথ যায় মন্দিরতলা,
শিবপুর। অবশেষে শিবপুর ট্রাম ডিপোর কাছে ঘড়িওয়ালা মাঠে রথ রাখা হয়। সেটিই জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার
মাসির বাড়ি। তবে তিন ভাই-বোনের মাসির বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেন নারায়ণ। সেখানে
সাতদিন থেকে তারপর আবার রথবাড়িতে ফিরে যায় রথ। আবার শুরু হয় অপেক্ষা পরের বছরের,
মনের মণিকোঠায় জমতে থাকে আশা।