ডায়াবেটিস রোগ এখন ঘরে ঘরে দেখা যায়। ছোট থেকে বড় যে কোনও বয়সেই এই রোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ সুগারের কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে, যা খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায়। সময় মতো এই রোগের উপসর্গ চিহ্নিত করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জীবনযাপন করলে দীর্ঘ স্বাভাবিক জীবন পাওয়া সম্ভব এবং এই রোগের মারাত্মক ও ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে বাঁচা যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
খিদে বেড়ে যাওয়া: এক জন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির যদি আচমকাই খিদে বেড়ে যায়, তবে সে ক্ষেত্রে এক বার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সুগার লেভেল পরিমাপ করা উচিৎ। এই রোগের এটি একটি অন্যতম প্রাথমিক উপসর্গ। নিয়মিত সঠিক পরিমাণে খাওয়ার পরেও ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে খিদের ভাব থেকে যায়।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া: ডায়াবেটিস রোগের সব থেকে প্রাথমিক এবং অন্যতম প্রধান উপসর্গ হল, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা। আসলে রক্তে যখন গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, শরীর তখন তাকে বাইরে বের করা চেষ্টা করে। এই কারণে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে। প্রস্রাবের মাধ্যমে আমাদের শরীর অতিরিক্ত গ্লুকোজকে বর্জন করে। এক জন সাধারণ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ দিনে ৬-৭ বার প্রস্রাব করে। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ১০ বারও স্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু এর থেকে বেশি হয়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
তেষ্টা বেড়ে যাওয়া: যখন কোনও ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তখন প্রস্রাবের মাধ্যমে আমাদের রক্তে থাকা অতিরিক্ত গ্লুকোজ বেরিয়ে যায়। যার ফলে শরীর থেকে অনেক পরিমাণ জলও বাইরে বেরিয়ে যায়। এই কারণে শরীরের জলের স্তর কমে এবং তা পূরণ করার জন্য প্রচুর তেষ্টা পায়।
অস্বাভাবিক ভাবে ওজন কমে যাওয়া: নিয়মিত ডায়েটে বিশেষ কোনও পরিবর্তন বা ব্যায়াম-শরীরচর্চা ছাড়াই আচমকা ওজন কমতে শুরু করলে বুঝে নিতে হবে যে, ডায়াবেটিস রোগের সম্ভাবনা রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কোষগুলিতে গ্লুকোজ পৌঁছতে পারে না এবং প্রয়োজনীয় শক্তি উত্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়। যা আমাদের শরীরকে দুর্বল করে দেয়। শক্তির এই ঘাটতি পূরণের জন্য শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ব্যবহার করে, যার কারণে রোগীর ওজন ধীরে ধীরে কম হতে শুরু করে।
দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া: ডায়াবেটিসের আর একটি মূল উপসর্গ হল, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে ঝাপসা হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ১৬% রেটিনোপ্যাথির শিকার হন এবং ৫% রোগীর অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বারবার প্রস্রাব হওয়ার কারণে শরীরে জলের মাত্রা কমে যায়, যার প্রভাবে চোখ ফুলে যেতে শুরু করে। চোখ ফুলে যাওয়ার পর দৃষ্টিশক্তি অস্পষ্ট হতে শুরু করে। হঠাত্ করে চোখে ঝাপসা দেখলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
পরিশ্রান্ত বা ক্লান্তি বোধ আসা: আগের রুটিনেই পর্যাপ্ত সময় ঘুমোনোর পরেও যদি শরীরে ক্লান্তি এবং অবসাদ ভাব থেকে যায়, তবে তাকে ডায়াবেটিসের লক্ষন হিসেবে ধরা হয়। এক দিকে, শরীরের কোষগুলি পর্যাপ্ত গ্লুকোজের অভাবে প্রয়োজনীয় শক্তি উত্পন্ন করতে পারে না এবং অন্য দিকে ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে শরীরের জলের মাত্রা কমে। এই দুই কারণেই শরীরে ক্লান্তি এবং পরিশ্রান্ত ভাব চলে আসে।
ত্বকের উপর প্রভাব: ডায়াবেটিসের কারণে আমাদের ত্বকের উপরের অংশে কালচে ভাব আসতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে এই সমস্যা দেখা যায়। অন্য দিকে, ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে জল কমে যাওয়ায় ত্বকের উপরেও এর প্রভাব পড়ে। রোগীর ত্বকের উপরিভাগ রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়, যার জেরে ত্বকের উপর সংক্রমণ দেখা যায়। ফলে ত্বকে জ্বালা করে এবং চুলকানিও শুরু হয়। এ ছাড়া, আক্রান্তদের শরীরে ইস্ট-ইনফেকশনও দেখা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি খুবই স্বাভাবিক একটি সমস্যা।
ক্ষত স্থান সারতে অনেক সময় লাগা: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত তৈরি হলে, তা সারতে অনেক সময় লাগে। এটিকে এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও ধরা হয়!