বার্ধক্য যদি একটি শিল্প হয় তবে শাহরুখ খান তাতে গুরুদেব। বলিউডে আজ অনেক তরুণ এবং সুদর্শন অভিনেতা রয়েছেন, শাহরুখ এখনও সমস্ত বয়সের অগণিত মেয়ের ক্রাশ। বলিউডে 'রোমান্স কিং' হিসেবে পরিচিত এই অভিনেতা। আজও মানুষ শাহরুখের জন্মদিন অন্য উৎসবের মতো উদযাপন করে। এই নিবন্ধে, আমরা আপনাকে শাহরুখের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব, যেগুলি সম্পর্কে আপনি এখনও জানেন না। 

শাহরুখ খানের আসল নাম 'শাহরুখ' নয়!

শাহরুখ ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর দিল্লির একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এসআরকে’র বাবা মীর তাজ ১৯৪৮ সালে ভারত বিভাগের পর দিল্লিতে চলে আসেন এবং ১৯৫৯ সালে লতিফ ফাতিমাকে বিয়ে করেন। ১৯৬৫ সালে শাহরুখের জন্মের পর, তাঁর দিদা নাম রাখেন আবদুল রশিদ খান। শাহরুখ নিজের জীবনের প্রথম পাঁচ বছর ম্যাঙ্গালোরে দাদু-দিদার সঙ্গে কাটিয়েছেন। পরে দিল্লিতে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যান। তখন আবদুল রশিদ খান নাম পরিবর্তন করে হন শাহরুখ খান। 

শাহরুখ খান স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সদস্য

আজ শাহরুখ খান এত পরিশ্রম করেছেন যে, তাঁর স্ত্রী গৌরী খান এবং তিন সন্তান আরিয়ান খান, সুহানা খান এবং আব্রাম খান তার নামেই পরিচিত। তবে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা শাহরুখ খানের পরিবার সম্পর্কে জানেন না। তিনি আইএনএ প্রধান জেনারেল শাহনওয়াজ খানের নাতি। শাহরুখের দাদু নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অধীনে ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল ছিলেন। শুধু তাই নয়, তার বাবা মীর তাজও ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি দেশভাগের সময় পাকিস্তান থেকে দিল্লিতে চলে এসেছিলেন। তাঁর পেশাগত জীবনে তার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ, ভারত সরকার তাঁকে তাম্রপত্র দিয়ে সম্মানিত করে। 

টেলিভিশন দিয়ে কেরিয়ার শুরু 

শাহরুখ খানকে বেশিরভাগই ১৯৯২ সালের 'দিওয়ানা' ছবিতে তার ভূমিকার জন্য স্মরণ করা হয়, তবে খুব কমই জানা যায় যে তিনি একটি টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম বিরতি পেয়েছিলেন। তিনি 'ফৌজি' শো দিয়ে নিজের অভিনয় জীবন শুরু করেন যা দূরদর্শনের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিকে পরিণত হয়। তার চরিত্র 'অভিমন্যু রাই' তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এবং শো-এর মেগা সাফল্যের সাথে রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে শাহরুখকে টেলিভিশন শো 'দিল দরিয়া', 'ওয়াগলে কি দুনিয়া' এবং 'উমিদ'-এও দেখা যায়।

স্ক্রিপ্ট না পড়েই সাইন করেছিলেন 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে'তে

'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' শাহরুখ খানের অন্যতম প্রিয় সিনেমা। ছবিটি এখনও মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দিরে চলে। যাই হোক, শাহরুখ এই ছবিতে সাইন করতে খুব বেশি সময় নেননি এবং কোনও চিন্তাভাবনা ছাড়াই তিনি ছবিটিতে সম্মতি দিয়েছিলেন। আসলে, ছবির প্রযোজক আদিত্য চোপড়ার প্রতি তার এতটাই ভালবাসা ছিল যে তিনি স্ক্রিপ্ট না পড়েও ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। 

নয়টি ছবিতে 'রাহুল' চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান

পর্দায় শাহরুখ খানের সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্র ছিল 'রাজ' বা 'রাহুল', কিন্তু আপনি কি জানেন কতগুলি ছবিতে তিনি 'রাহুল' চরিত্রে অভিনয় করেছেন? ব্যস, এই নামে নয়টি ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন তিনি। এই নয়টি সিনেমা হল 'ডর', 'জামানা দিওয়ানা', , 'ইয়েস বস', 'দিল তো পাগল হ্যায়', 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়', 'হর দিল জো পেয়ার করেগা', 'কভি খুশি কাভি গম' এবং 'চেন্নাই এক্সপ্রেস'।

'৫৫৫' নম্বরে শাহরুখ খানের সংযুক্তি ঠিক আছে

অনেকেই জানেন না যে শাহরুখ খান একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি এবং বিশ্বাস করেন যে সঠিক সংখ্যা তার জন্য সৌভাগ্য আনতে পারে। এই কারণেই তাঁর গাড়ির বেশিরভাগ নম্বর প্লেটে তার নম্বর ৫৫৫। শুধু তাই নয়, তাদের কয়েকজন কর্মীদের মোবাইল নম্বরও শেষ হয় ৫৫৫। 

শাহরুখ খানের সম্পত্তি রয়েছে চাঁদে 

সেলিব্রিটিদের পক্ষে তাঁদের জন্মদিনে ভক্তদের কাছ থেকে প্রচুর উপহার পাওয়া খুব সাধারণ, তবে আপনি কি এমন কোনও ভক্তের কথা শুনেছেন যিনি তাদের প্রিয় অভিনেতাকে চাঁদে এক টুকরো জমি উপহার দেন? কিং খান এমন একটি ফ্যান্টাসি উপভোগ করেন যে অস্ট্রেলিয়া থেকে তাঁর একজন ভক্ত তাকে প্রতি জন্মদিনে লুনার রিপাবলিক সোসাইটির পক্ষ থেকে চাঁদে এক টুকরো জমি উপহার দেন। তিনি তাদের 'দ্যা সি অফ ট্রাঙ্কুইলিটি'-তে বেশ কয়েক একর জমি উপহার দিয়েছেন, যা চাঁদের সবচেয়ে বেশি চাওয়া জায়গাগুলির মধ্যে একটি।

শাহরুখ খান তাঁর পুরস্কার সলমনকে দিয়েছিলেন

শাহরুখ খান ও সালমান খানের বন্ধুত্ব প্রায়ই শিরোনামে থাকে। সেটা বেস্ট ফ্রেন্ডই হোক বা তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ এবং তারপর বছরের পর বছর পরস্পরের সাথে মিলন, কিছুই অজানা নয়। যাইহোক, যা অনেকেই জানেন না তা হল, ১৯৯৮ সালে এসআরকে সেরা অভিনেতার জন্য জি সিনে পুরস্কার জিতেছিলন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রিয় বন্ধু সলমান খানকে মঞ্চে ডেকেছিলেন। 

বুর্জ খলিফাতে আলোকিত একমাত্র অভিনেতা শাহরুখ খান

বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম শাহরুখ খানকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। এভাবেই 'বলিউডের রাজা' হিসেবে নিজের ছাপ ফেলেছেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা অভিনেতার ৫৫ তম জন্মদিনে একটি বিশেষ আলোক প্রদর্শনীর মাধ্যমে তার মুখ প্রদর্শিত করেছিল। তার জন্মদিনের শুভেচ্ছায় আলোকিত হয়েছিল পুরো টাওয়ার। এটি প্রত্যেক ভারতীয়র জন্য সত্যিই একটি গর্বের মুহূর্ত, কারণ তিনিই একমাত্র অভিনেতা যিনি এই সুযোগ পেয়েছিলেন। 

শাহরুখের ডক্টরেট ডিগ্রি আছে 

শাহরুখ খান বলিউডের একমাত্র অভিনেতা যার তিনটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি বিদেশী ডক্টরেট ডিগ্রি রয়েছে। তার জনহিতৈষী এবং মানবতার কাজ, সেইসাথে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে কিং খানের বিশ্বব্যাপী পরিধি, তাঁকে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি অর্জন করেছে। তাই তার আসল নাম ডাঃ শাহরুখ খান। 

শাহরুখ খানও একজন সামন্ত শাহরুখ খান বলিউডের একমাত্র অভিনেতা যিনি নিজেকে 'নাইট অফ লিজিয়ন অফ অনার' বলে দাবি করেন। মালাক্কার একটি জনপ্রিয় রিসোর্টে ২০০১ সালের চলচ্চিত্র 'ওয়ান টু কা ফোর'-এর শুটিংয়ের পর, ভারত থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। পরবর্তীকালে, তিনি মালয়েশিয়ার 'দাতুক' উপাধিতে ভূষিত হন, যা ব্রিটিশ নাইটহুডের সমতুল্য। 

স্ত্রী গৌরী খানকে তিনবার বিয়ে করেছেন শাহরুখ

অনেক মেয়েই শাহরুখের ভক্ত, শুধু এই কারণে নয় যে, তিনি একজন ভাল অভিনেতা বা মানুষ, কিন্তু তার স্ত্রী গৌরী খানের প্রতি তার আনুগত্য ও ভালোবাসা দেখে তারাও এমন একজন স্বামী পেতে চায়। দিল্লিতে থাকাকালীন তিনি গৌরীর প্রেমে পড়েন। যখন তিনি তার বান্ধবীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন তারা দুজনেই আগে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে নিজেদেরকে কোর্ট ম্যারেজে নিবন্ধন করেছিলেন। আদালত বিবাহের পর তাদের নিকাহ হয়েছিল, যা ১৯৯১ সালের ২৬  আগস্ট একটি মুসলিম ঐতিহ্যবাহী বিবাহ হিসাবে হয়েছিল। তারপরে, ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর দম্পতি হিন্দুরীতিতে বিবাহের রীতিতে আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। 

শাহরুখকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল 

২৯১২ সালের ১৬ মে  আইপিএল দল 'মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স' এবং শাহরুখ খানের দল 'কলকাতা নাইট রাইডার্স'-এর মধ্যে একটি ম্যাচ চলছিল। যদিও সেই ম্যাচের পর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য, এমসিএ কর্মকর্তারা নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগে তাকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য প্রবেশে বাধা দিয়েছিলেন। নিজের কৃতকর্মের জন্য মোটেও অনুশোচনা করেননি শাহরুখ। তাই পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হয়েছে ম্যানেজিং কমিটিকে। 

শাহরুখ খান আইসক্রিম একেবারে পছন্দ নয়, ঘোড়ায় চড়তে ভয় পান অনেকেই জানেন না যে শাহরুখ খান আইসক্রিম খুব একটা পছন্দ করেন না এবং তিনি তা খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। শুধু তাই নয়, মানুষের হৃদয়ে রাজত্ব করা কিং খানের ঘোড়ায় চড়ার এক অদ্ভুত ভীতি রয়েছে, যার কারণে তিনি অনেক ছবিতে চড়েননি। এই মুহূর্তে, শাহরুখ খান প্রমাণ করেছেন যে আপনার ইচ্ছাশক্তি থাকলে কঠোর পরিশ্রম আপনাকে সবকিছু পেতে পারে। তাহলে আমাদের গল্পটা কেমন লাগলো? কমেন্ট করে আমাদের জানান, সেইসাথে আমাদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই জানাবেন।