হাজি মাস্তান এমন একটি নাম যা
মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড কখনও ভুলতে পারবে না। মাস্তান দাউদ এবং পাঠান গ্যাংকে
একত্রিত করেছিলেন, তাঁর অঙ্গুলীহিলনে
বিখ্যাত মাফিয়া জগৎ পুতুলের মতো নাচত। দিলীপ কুমার থেকে সঞ্জীব কুমার সকলের
সঙ্গেই বৈঠক চলত হাজি মাস্তানের। তারপর ঠিক কী হল? মাস্তানের আভায় পড়ল কোন সময়ের ধুলো? কেন মুম্বইয়ের সবচেয়ে বড় ডনের মৃত্যুতেও পৌঁছালেন না কোনও চলচ্চিত্র
ব্যক্তিত্ব। হাজি মাস্তানের গল্প অবশ্যই চলচ্চিত্রের গল্পের থেকে কম নয়। চরম
দারিদ্র্যের মধ্যে শৈশব কাটানো মাস্তান যখন ঐশ্বর্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠেছিলেন, তখন তিনি এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন যেখানে পৌঁছাতে হলে
ভাগ্যদেবী অবশ্যই সুপ্রসন্ন হতে হয়। কে ভেবেছিল সাইকেল মেরামতের দোকান চালানো
মাস্তান একদিন মুম্বইয়ের বুকে রাজত্ব করবেন।
তামিলনাড়ুর বাসিন্দা মাস্তান আট বছর
বয়সে মুম্বই এসেছিলেন। সেখানে বাবার সঙ্গে মিলে খুলেছিলেন সাইকেলের দোকান। তারপর
কাজ করেছিলেন ডকের কুলি হিসাবে। এখানে হাজি মাস্তানের পরিচয় একজন আরবের বাসিন্দার
সঙ্গে হয়েছিল যার পেসা ছিল অবৈধ পাচার। একবার এক মামলায় সেই আরবিয় ব্যক্তিটি জেলে
যায়। তার কাছে থাকা একাধিক বাক্সের দায়িত্বও নেন মির্জা। জেল থেকে বেরিয়ে ওই ব্যক্তি দেখেছিল যে মাস্তান তাঁর একটি
বাক্সও খোলেননি। বাক্সগুলি ছিল সোনার। হাজির নির্লোভতার পুরস্কার স্বরূপ সেই সোনার
অর্ধেক মাস্তানকে দিয়ে দেয় ওই ব্যক্তি। পাশাপাশি হাজি
মাস্তান মির্জাকে নিজের ব্যবসার অঙ্গও করে নেন। এরপর বদলে যায় মাস্তানের জীবন।
চোরাচালানের এই পথ অনুসরণ করে তিনি সম্পদের উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন।
আরও পড়ুন: জেনে নিন কেন লোকসভায় ৪২০ নম্বর আসন নেই
আরও পড়ুন: Akshay Kumar: কানাডার নাগরিকত্ব ছাড়বেন অক্ষয় কুমার, জানালেন-'ভারতই আমার জন্য সবকিছু'
বলা হয়, মাস্তান ডন ছিলেন নিঃসন্দেহে, কিন্তু তিনি কখনও গুলি চালাননি বা কারও প্রাণ নেননি। তিনি যে অহিংস ছিলেন তা
নয় কিন্তু নিজে রক্তপাতের মধ্যে যেতেন না। ডকের উপর মির্জার একচেটিয়া আধিপত্য
ছিল এবং পোর্টাররাও তাঁকে সম্মান করতেন। সবাই তাঁর জন্য কাজ করতেও প্রস্তুত ছিলেন।
মির্জা ওরফে হাজি মাস্তান
চলচ্চিত্রের একজন দারুণ ভক্ত ছিলেন এবং চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মধুবালাকে খুব পছন্দ
করতেন। এটাও বলা হয় যে তিনি তাঁকে ভালোবাসতেন। তাই বিয়ে করেছিলেন মধুবালারই মতো
দেখতে আর এক অ ভিনেত্রী সোনাকে। সোনার চেহারা অনেকাংশে মধুবালার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ
ছিল।
বি টাউনের রাজ কপূর, দিলীপ কুমার এবং
সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে মির্জার যোগাযোগ ছিল। এমনও বলা হয় যে, অমিতাভ বচ্চনও ‘দিওয়ার’-এর চরিত্রে সঠিকভাবে অভিনয় করার জন্য তাঁর বাড়িতে যেতেন।
সোনা ও মাস্তান অনেক ছবিতে টাকা বিনিয়োগ করলেও সাফল্য পাননি। তাই নিজেই সরে
এসেছিলেন হাজি। তাঁর মৃত্যু সংবাদেও আসেননি
কোনও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।
জরুরি অবস্থা জারি হলে ইন্দিরার
নির্দেশে বহু লোককে গ্রেফতার করা হয়। মাস্তানও ছিলেন তাদের একজন। জেলে তিনি জেপির
সঙ্গে দেখা করেন। এই সাক্ষাৎ মাস্তানের জীবন বদলে দেয়। তিনি রাজনীতিতে আসা
মনস্থির করেন এবং দল গঠন করে মাঠে নামেন। দিলীপ কুমারও এই দলের জন্য প্রচুর প্রচার
করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল দলিত ও মুসলিম ভোটের সাহায্যে ক্ষমতা লাভ করা, কিন্তু তা হতে পারেনি।