রাবণকে
পৌরাণিক কাহিনির সবচেয়ে বড় খলনায়ক বলে মনে করা হয়। তিনি শ্রী রামচন্দ্রের হাতে
মারা গিয়েছিলেন। রাবণ সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। তাঁকে নিয়ে যা প্রচারিত
তার সবটাই হয়তো সত্যি নয়। বাংলা রামায়ণে রাবণকে রাক্ষস হিসেবে বর্ননা করা হয়েছে।
লঙ্কাধিপতি ছিলেন একজন শিবভক্ত। তিনি অসাধারণ বীনা বাজাতেন। রাবণ ছিলেন দূর্দান্ত
প্রশাসক।
রাবণের দাদা
পুলস্ত্য ছিলেন ব্ৰহ্মার মানসপুত্র এবং স্বনামধন্য ঋষি। পুলস্ত্য ঋষির ছেলে ছিলেন
বিশ্বশ্রবা মুনি। তিনিও কালে কালে হন বিশিষ্ট ঋষি। তিনি বংশগত ও গুণগত ব্রাহ্মণ।
তাই ব্রাহ্মণ ঋষি বিশ্ববার পুত্র রাবণ গুণগত না হলেও কুলগত ব্ৰাহ্মণ ছিলেন
নিশ্চয়ই। অর্থাৎ লঙ্কাধিপতি ছিলেন ব্রহ্মজ্ঞানী। ব্রাহ্মণ-এর সাধারণ সংজ্ঞা হল-
ব্রহ্মাংশে জন্ম যার, অথবা বেদ জানে যে, কিংবা বেদ
অধ্যয়ন করে যে, নতুবা ব্রহ্মের উপাসনা করে যে সে-ই প্রকৃত ব্রাহ্মণ।
ঋষিগণ এই সবরকম গুণের অধিকারী। তাই ঋষিপুত্র হিসেবেই রাবণ অবশ্যই ব্রাহ্মনত্বের
দাবীদার।
লঙ্কায় ছিল
রাবণের রাজধানী। রামায়ণে তাঁর রাজধানী বিশেষিত হয়েছে স্বর্ণলঙ্কা নামে। রাবনের
লঙ্কাকে বহু যায়গাতেই স্বর্ণলঙ্কা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এর থেকেই বোঝা যায় যে
লঙ্কাধিপতির রাজ্যে সবসময় সমৃদ্ধি বিরাজ করত। এর থেকেই বোঝা যায় যে তিনি একজন দক্ষ
সুশাসক ছিলেন। একজন জ্ঞানী রাজার পক্ষেই ভালভাবে রাজ্য পরিচালনা করা সম্ভব।
রাবন সীতাকে
হরন করে অশোকবনে বন্দিনী করেছিলেন। অশোকবন হল সেই স্থান যেখানে গেলে সমস্ত জাগতিক
দুঃখ কস্ট থেকে দুরে থাকা যায়। তাছাড়াও বিশেষজ্ঞরা বলেন যে অশোক কানন ছিল ফল ফুলে
পরিপূর্ণ। রাবণ সীতাকে অশোকবনে রেখেছিলেন যাতে জানকীর মন ভাল থাকে। তাঁর এমন
উদ্যান উচ্চরুচির পরিচায়ক।
রাম রাবনের
যুদ্ধে এমন কীছু অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তির উল্লেখ পাওয়া যায় যা আজকের দিনেও
বিস্ময়কর বটে। শক্তিশেল ও পুস্পক রথ শুধু অস্ত্র বললে ভুল বলা হবে, উচ্চ গবেষণার ফসলও বটে।
রাবণ যখন
মৃত্যুশয্যায় তখন শ্রীরামচন্দ্র লক্ষ্মণকে রাবনের কাছ থেকে সুশাসন এবং অন্যান্য
তত্ত্বজ্ঞান সংগ্রহ করতে বলেছিলেন। রাবণ লক্ষ্মণকে এই সকল বিষয়ে জ্ঞান প্রদান
করেন। এর থেকে স্পষ্ট যে রাবনের কতখানি জ্ঞানী ছিলেন।