কলকাতায় তো রয়েছে বহু নামীদামি রেঁস্তরা কিন্তু কলকাতায় এলেই এখানকার খাবার খান ইমতিয়াজ় আলি থেকে শুরু করে বলিউড শাহেনশা। একেবারে রাসবিহারীর লেকমলের কাছেই রয়েছে এই হোটেল তরুণ নিকেতন। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৭টা বাজতেই বাজারের থলি হাতে বেরিয়ে পড়েন অরুণ দেব।তারই হাত ধরে তৈরি ১০৮ বছরের এই হোটেলটি।
আর পাঁচটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়িতে যেমনটা হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই। তিনি সকালবেলা উঠেই রাসবিহারী চত্বরের সব্জি বাজার ঘুরে রুই, কাতলা, ট্যাংরা, ভেটকি, বোয়াল, পার্শে, পাবদা থেকে কই, পুঁটি। তারপরই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাটান মুরগি, খাসি সব নিয়ে ফেরেন। তবে, মুরগির ডিম একেবারে বাদ। বদলে হাঁসের ডিম কিনে নেন গোটা তিরিশ। প্রতি দিন অরুণদের হেঁশেলে ছ-সাত রকম সব্জি হবেই।
রাসবিহারীর মোড় থেকে ফুটপাত ধরে গড়িয়াহাটের দিকে কিছুটা যেতেই ডান হাতে ‘তরুণ নিকেতন’। সময়টা ব্রিটিশ রাজত্বে অন্য দিকে কলকাতায় একটু একটু করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মেস কালচার।তাই যাঁরা গ্রাম থেকে শহরে পড়াশোনা করার জন্যক আসতেন, কলেজ পড়ুয়া থেকে কলকাতায় চাকরি করতে আসা ছেলেদের সস্তায় দু’বেলা খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলেন তরুণ দেব। তরুণ নিকেতনের তৃতীয় প্রজন্মের অরুণ দেব বলেন, “মেসবাড়িতে থাকা ছাত্রদের কথা মাথায় রেখেই এই হোটেল শুরু করেছিলেন দাদু। তাঁর মুখেই শোনা, সেই সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে বিখ্যাত মানুষের আনাগোনাও ছিল এখানে।”
শুনেছি, বলিউডের ‘বিগ বি’ কলকাতায় চাকরি করতে এসে নাকি এখানে খেয়ে তার পর অফিসে যেতেন। ‘জব উই মেট’ খ্যাত পরিচালক ইমতিয়াজ় আলির মুখে তরুণ নিকেতনের প্রশংসা অনেকেই শুনেছেন। মটর ডাল মুলো দিয়ে, কচুশাক, কুমড়ো ফুল বা বকফুলের বড়া, নটে শাক, পুঁই শাক, সর্ষে দিয়ে ইলিশ, চিতল পেটি, পাতলা করে খাসির মাংসের ঝোল, দিশি মুরগি থেকে নিমবেগুন, চুনোমাছ কিংবা কাঁটাচচ্চড়ি, বাটামাছের ঝোল— সবই পাওয়া যায়। সারা বছর পাওয়া যায় কাঁচা আমের চাটনি।