চলে গেলেন
উস্তাদ রশিদ খান। তাও আবার মাত্র ৫৬ বছর বয়সে। কর্কট রোগের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে অতীত
হয়ে গেলেন তিনি। রশিদ খান সেই মানুষ যার সম্পর্কে এক বিশেষ উপমা দিয়েছিলেন বিশিষ্ট
পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। রশিদ তাঁর কাছে ছিলেন ভূমণ্ডলের দীপ্যতম সুরগন্ধর্ব। কিশোর
সঙ্গীতশিল্পীর গান শুনে ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী। তাই তো বলেছিলেন, “ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত তার ভবিষ্যৎ পেয়ে গিয়েছে।” ২০২৪ সালের
৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে সেই
ভবিষ্যৎ অকালেই অতীত হয়ে গেল।
উত্তরপ্রদেশের
বদায়ুনে ১৯৬৮ সালে জন্ম হয়েছিল রশিদ খানের। ছোটবেলায় তিনিও আর পাঁচটা শিশুর থেকে
আলাদা ছিলেন না। রেওয়াজের নাম শুনলে যেন গায়ে জ্বর আসত। এদিকে পরিবার শাস্ত্রীয়
সঙ্গীত ঘরানার, সেই পরিবারের ছেলে হয়ে রেওয়াজে ঢিলেমি দেওয়া তো চলে
না। অতঃপর শুরু হয়েছিল রশিদ খানের সঙ্গীত শিক্ষা।
রশিদ ছিলেন
রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী। প্রথম তালিম দিয়েছিলেন মামা গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ
গুলাম মুস্তাফা খাঁ। মামার হাত ধরেই প্রথম দেখেছিলেন মুম্বই। সেখানে লেখাপড়ার
পাশাপাশি চলতে থাকে গানের তালিম। কিন্তু মুম্বই ভাল লাগেনি রশিদের। তাই ফিরে
এসেছিলেন পারিবারিক ভূম বদায়ুনে।
এরপর কিশোর
রশিদ তালিম নিতে শুরু করেন রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ
সাহেবের কাছ থেকে। ইনি ছিলেন সম্পর্কে রশিদের দাদু। এই দাদুকে যমের মতো ভয় পেতেন
রশিদ। একটু ভুল হয়েছে কি গালে এসে পড়েছে বিরাশি সিক্কা। অতএব প্রথাগত শিক্ষা রশিদ
খানের শুরু হয়েছিল দাদুর মারের হাত থেকে বাঁচতেই। একথা নিজ মুখে বিভিন্ন
সাক্ষাৎকারে বলে গিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী।
দাদুর
সঙ্গেই ১৯৭৮ সালে কলকাতায় চলে এসেছিলেন রশিদ। জীবনের প্রথম অনুষ্ঠান কলকাতাতেই।
১০-১১ বছর বয়সে। পণ্ডিত ভীমসেন জোশীর সঙ্গে এক অসমবয়সী সখ্য ছিল রশিদের। কলকাতাকেই
নিজের সর্বস্ব করে নিয়েছিলেন তিনি। আর ফিরে যাননি।
মূলত
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইলেও ফিউশন, বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু গান
করেছেন উস্তাদ রশিদ খান। ‘যব উই মেট’-এর ‘আওগে যব তুম ও সাজনা’ কি ভোলা যায়! এছাড়া গজলের অ্যালবাম
করেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন। পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, পদ্মভূষণ সম্মান, বঙ্গবিভূষণ সম্মাননা।
মৃত্যুর পর
রশিদ খানের দেহ মঙ্গলবার বিকেলে নিয়ে যাওয়া হবে পিস হেভেনে। বুধবার সকালে
রবীন্দসদনে শায়িত থাকবে তাঁর মরদেহ। তারপর টালিগঞ্জের সমাধিস্থলে সমাধিস্থ করা হবে
শিল্পীকে। বুধবারের পর উস্তাদের নশ্বর দেহ আর পৃথিবীর বুকে থাকবে না। বদায়ুনের
ভূমিপুত্র মিশে যাবেন বঙ্গের মাটিতে। শুধু রয়ে যাবে তাঁর গান, কণ্ঠ। মানব-মননে উস্তাদ রশিদ খান রয়ে যাবেন এক অমূল্য রত্নভাণ্ডারের অধিকারী
হয়ে।