‘জব উই মেট’ সিনেমাটিকে বলিউডের একটি মাইলস্টোন বলা চলে। যে সময়ে এই
সিনেমাটি তৈরি হয় সেই সময় এমন ঘরানার ছবি বেশ বিরল। আদিত্য চরিত্রে শাহিদ কপূর,
গীত চরিত্রে করিনা কপূরের অভিনয় দর্শক মহলে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছিল। আর মানুষের
মুখে মুখে ফিরেছিল ‘জব উই মেট’-এর একের
পরেক কালজয়ী গান। এই সিনেমাতেই উস্তাদ রশিদ খানের কণ্ঠে ছিল ‘আওগে জব তুম ও সাজনা’
গান। ২০০৭ এর পর কেটে গিয়েছে ১৬ বছর। শুধু ‘আওগে জব তুম ও সাজনা’র বয়স বাড়েনি। সে
একইরকম চিরনবীন।
৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার উস্তাদ রশিদ খান চলে গিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই মনে
করেন এই গান তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র তাঁর
কণ্ঠের জন্যই। অমন দরদ দিয়ে আর বুঝি কেউ ‘আওগে জব তুম ও সাজনা’-র প্রতি সুবিচার
করতে পারতেন না।
এই গানের সুর জন্ম
নিয়েছিল বহু বছর আগে। তখনও গানের লিরিক্স তৈরি হয়নি। এক সাক্ষাত্কারে ছবির সঙ্গীত
পরিচালক সন্দেশ শাণ্ডিল্য জানিয়েছিলেন ''এই ছবির
জন্য লেখাই হয়নি এই গান। এই গান ছবি তৈরির বহু বছর আগেই জন্ম নিয়েছিল। তিনি বলেন, এই গানের
সুর হঠাত্ই এসেছিল মনে। আমি রেকর্ড করে রেখেছিলাম। সেই সময় আমি ফিয়াজ আনোয়ারের
সঙ্গে কাজ করছি। আমি তাঁকে শুনিয়েছিলাম।”
সাক্ষাৎকারেই উঠে এসেছিল এই গান রশিদ খানের কাছে
যাওয়ার নেপথ্য গল্প। সঙ্গীত পরিচালক সন্দেশ শাণ্ডিল্য বলেছিলেন, “ফিয়াজ আনোয়ার সেই
সময়ই গানের মুখরা লিখে দিয়েছিলেন। এরপর কেটে যায় বহু বছর। তারপর ইমতিয়াজ আলিকে
একদিন হঠাৎ আমি এই সুর শুনিয়েছিলাম। তিনি শুনেই বলেছিলেন, তাঁর ছবিতে গানটি ব্যবহার করবেন। আমি আবার গানের অন্তরার জন্য ছুটেছিলাম
ফিয়াজের কাছে।''
এরপর খোঁজ পড়ে
গায়কের। শাণ্ডিল্যর কথায়, ''আমি জানতাম এই গানটার প্রতি
সুবিচার তিনিই করতে পারবেন যাঁর সঙ্গীতচর্চার অভ্যাস রয়েছে। কেউ যখন দিনের পর দিন
সঙ্গীতের চর্চা করেন, তাঁর কণ্ঠস্বর শুনলেই আপনি বুঝতে
পারবেন পার্থক্যটা কোথায়। উস্তাদ রশিদ সাহাবের প্রতি বরাবর আমার সেই শ্রদ্ধাটা ছিল। আমি যখন ওঁনার কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেলাম, তিনি প্রচুর টাকা চেয়ে বসলেন। আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম, এটা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে। একই সঙ্গে বলেছিলাম, আপনি
এই গানটি ফেরাতে পারবেন না। আমি বলেছিলাম-- আপনি মানা করতে পারবেন না, কারণ আমি আপনাকে ভীষণ ভালবাসি। তখন উনি খুশি হয়ে বলেছিলেন, ঠিক আছে, চলে এসো, আমি রেকর্ড
করব।''
আজ ইহলোকে নেই রশিদ
খানের নশ্বর দেহ। শুধু রয়ে গিয়েছে তাঁর কণ্ঠ। আজও হয়তো এক প্রেমিক নিজের
প্রেমিকাকে দেখে কোথাও গেয়ে ওঠেন,
‘আওগে জব তুম ও সাজনা,
অঙ্গনা ফুল খিলেঙ্গে,
বরসে গা সাবন,
ঝুম ঝুম কে
দো দিল অ্যায়সে মিলেঙ্গে’