আজ চৈত্র
নবরাত্রির অষ্টমী তিথি। নবরাত্রির অষ্টম দিনে দেবী মহাগৌরীর অষ্টম রূপের পুজো করা
হয়। এই দিনে কুলদেবীর পুজোর পাশাপাশি মা কালী, দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী ও মহাকালীরও পুজো করা হয়।
মহাগৌরীর
আরাধনা করলে জীবনের সকল দুঃখ দূর হয়। দেবী ভক্তদের সকল মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। শাস্ত্রমতে
বিশ্বাস, মহাগৌরী ভগবান শিবকে স্বামী হিসাবে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন।
তাই তাঁর আরাধনা করলে দাম্পত্য জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর হয়।
শতাব্দীকে পেয়েই নিজেদের ‘আবদার’ উগরে দিলেন বীরভূমবাসী
কিংবদন্তি
অনুসারে, মহাগৌরী ভগবান শিবকে স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর
তপস্যা করেছিলেন। তপস্যাকালে হাজার বছর ধরে উপোস ছিলেন তিনি। এর ফলে তাঁর শরীর কৃষ্ণবর্ণের
হয়ে গিয়েছিল। মহাদেব মহাগৌরীর কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে
স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। তারপর গঙ্গার পবিত্র জলে স্ত্রীর দেহ ধৌত করে শরীরকে গৌরবর্ণ
ও দীপ্যময়ী করে তুলেছিলেন। এরপর থেকেই দেবী পার্বতীর এই রূপ
মহাগৌরী নামে পরিচিত হয়।
কুকুরা কেন মানুষের শরীর চাটে, জেনে নিন নেপথ্য কারণ
বাঙালিরা
আবার চৈত্র নবরাত্রিতে পুজো করেন দেবী অন্নপূর্ণার। বাংলার ঘরে ঘরে পরিবারের সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনার জন্য দেবী
অন্নপূর্ণার পুজো করা হয়। কাশিতে বিশ্বনাথের দর্শন করার সময় অবশ্যই পুজো দিতে
হয় মা অন্নপূর্ণার। বলা হয়ে থাকে বাবা বিশ্বনাথ কাশি ধামের নির্মাণকর্তা আর মা
অন্নপূর্ণা হলেন কাশি ধামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
কবিকঙ্কন
ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবী নিজমুখেই বলেছিলেন ‘আমি দেবী
অন্নপূর্ণা প্রকাশ কাশীতে, চৈত্র মাসে মোর পূজা শুক্লা অষ্টমীতে।’ শোনা যায়, বাংলায়
প্রথম নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় দেবী অন্নপূর্ণার পুজোর প্রসারে প্রথম অগ্রণী
ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁরই সভাকবি ছিলেন
ভারতচন্দ্র।
প্রচলিত
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী,শিব
গৌরীর সংসারে একবার প্রচন্ড কলহ লাগে। মা পার্বতী ভোলানাথের উপর রেগে গিয়ে ঘর
সংসার ত্যাগ করে মর্ত্যে ফিরে এসেছিলেন। মা ছাড়া শিবের সংসার হয়েছিল অচল। কিন্তু
ভোলেনাথ জেদ ধরেছিলেন যে মা ছাড়াও তিনি সংসার চালিয়ে নিতে পারবেন, তাই বের হয়েছিলেন ভিক্ষা করতে। কিন্তু সেই
সময় চলছিল দুর্ভিক্ষ। অনেক খোঁজ করেও তিনি অন্নের জোগাড় করতে পারেননি।
সেই সময় তিনি শোনেন যে
কাশিতে একজন সকলকে খাওয়াচ্ছেন। মহাদেবও তাই যান সেখানে। গিয়ে দেখেন মা অন্নপূর্ণা তাঁর সমস্ত
ভক্তদের নিজের ঝুলি উজাড় করে অন্নের ব্যবস্থা করেছেন। ভোলেনাথ মা অন্নপূর্ণাকে
ওখানেই চিনতে পারেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ঝুলি
পেতে দেবীর কাছ থেকে ভিক্ষা চান তিনি। তাই আজও প্রতিকী ছবি হিসাবে ভোলানাথ দেবী অন্নপূর্ণার কাছে
ভিক্ষা চাইছেন এই রূপেই তিনি বাংলার ঘরে ঘরে পূজিত হন।