শ্যামাসঙ্গীত
আর পান্নালাল ভট্টাচার্য্য একে অপরের সম্পূরক যেন। একটি ছাড়া আর একটি অসম্পূর্ণ।
পান্নালালের কণ্ঠে ‘কালো মেয়ের পায়ের তলায়’, ‘মা
তোর কত রঙ্গ দেখব বল’, ‘আমার চেতনা চৈতন্য করে দে মা চৈতন্যময়ী’, ‘মা
গো আনন্দময়ী নিরানন্দ কোরো না’, ‘আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানি
নে মা’- এই সকল গান যেন অচিরেই মোহময় করে তুলতে পারে মানুষকে। তাই বহু সঙ্গীতপ্রেমীর
কাছে পান্নালাল ভট্টাচার্য্য ভবতারিণীর বরপুত্র। এমন এক আশ্চর্য প্রতিভাবান শিল্পী, সঙ্গীতপ্রতিভার
জীবনদীপ নিভে গিয়েছিল মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। নিজ হস্তে পান্নালাল নিভিয়েছিলেন সেই
দীপ। করেছিলেন আত্মহত্যা।
মমতাকে কুরুচিকর মন্তব্যের জের , দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে গেল তৃণমূল
কেন
আত্মহননের পন্থা বেছে নিয়েছিলেন তিনি? এ নিয়ে বিবিধ জনের বিভিন্ন মত
রয়েছে। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাটি হল-- পান্নালাল কোনওদিনই নিজের গান
নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। তাঁর দাদা প্রখ্যাত শিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য নাকি
মা ভবতারিণীর দর্শন পেতেন! পান্নালাল ভাবতেন, তাঁর কপালে কবে এমন মাতৃদর্শন
ঘটবে? মাতৃদর্শন হয়নি। পান্নালাল নাকি শিশুর মতো কাঁদতে-কাঁদতে মাকে ডাকতেন! শেষে
দেবীদর্শন না পাওয়ায় অবসাদে, অতৃপ্তিতে আত্মহননের পথ বেছে
নেন তিনি।
১৯৬৬ সালের
২৭ মার্চ কলকাতার কাকুলিয়া রোডের বাড়িতে মাত্র ৩৬ বৎসর বয়সে আত্মহত্যা করেন
তিনি। নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল তাঁর চলে যাওয়ার পর আরও একটি বছর। 'আমার
সাধ না মিটিল আশা না পূরিল' শ্যামাসঙ্গীত দিয়ে পান্নালাল
ভট্টাচার্য্যের সঙ্গীতজীবনের শুরু। পান্নালালের ইচ্ছে ছিল চলচ্চিত্রের নেপথ্য
গায়ক হবেন। পাশাপাশি আধুনিক গানও গাইবেন। কিন্তু তখন গাইছেন শচীন দেববর্মণ, জগন্ময়
মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তাঁর অগ্রজ স্বয়ং ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের
মতো তাবড় শিল্পীরা। দাদাই ভাই পান্নালালকে এই বাস্তব চিত্রটা দেখিয়ে তাঁকে
ভক্তিমূলক গানেই সীমাবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন।
আইপিএল বেটিংয়ে সর্বস্বান্ত স্বামী, দেনার দায়ে আত্মঘাতী হলেন স্ত্রী
দাদার
প্রতি অসম্ভব শদ্ধা, তার জন্যই অবাধ্য হতে পারেননি পান্না।
তারপর কীভাবে যেন শ্যামাসঙ্গীত আর পান্নালাল ভট্টাচার্য্য নামদুটি এক হয়ে গেল।
পান্নালাল তাঁর সমগ্র সঙ্গীতজীবনে সৃষ্টি করেছেন ৩৬টি আধুনিক গান-সহ ১৮টি রেকর্ড, ৪০
টি শ্যামাসঙ্গীতের রেকর্ড। তবে এসবের পাশাপাশি ৩টি বাংলা ছবির গানও গেয়েছেন।