বি আর চোপড়া পরিচালিত ‘মহাভারত’এ কৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নীতিশ ভরদ্বাজ। জীবনে একইসঙ্গে অভিনয় ও পরিচালনা দুই-ই করেছেন নীতিশ। ২০১৪’র সিনেমা ‘মহেঞ্জোদারো’তেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। বিজেপির প্রাক্তন সাংসদও ছিলেন নীতিশ। ১৯৯১ সালে বিয়ে করেছিলেন মনীষা পাতিলকে। তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে। মনীষা’র সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর নীতিশ ভরদ্বাজ বিয়ে করেন আইএএস অফিসার স্মিতা গাটেকে।
রূপা গাঙ্গুলি- দ্রৌপদী
‘মহাভারত’-এ দ্রৌপদী চরিত্রে রূপা গাঙ্গুলির অভিনয় সত্যিই ভোলার নয়। গৌতম ঘোষের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘অন্তরমহল’র মতো সিনেমায় নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছেন রূপা। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু হিন্দি ধারাবাহিকেও।
রাজ বব্বর- রাজা ভরত
‘মহাভারত’-এ ভরত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা রাজ বব্বর। বলিউডে একাধিক সিনেমায় অভিনয়কারী রাজ ১৯৮৯ সালে রাজনীতিতে আসেন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে শিরোনামে আসেন তিনি।
প্রদীপ রাওয়াত-অশ্বত্থামা
‘সরফরোশ’, ‘লগন’, ‘গজনি’র মতো বেশ কিছু সিনেমায় স্মরণীয় অভিনয় রয়েছে প্রদীপ রাওয়াতের। ‘মহাভারত’-এ প্রদীপ অভিনয় করেছিকেন অশ্বত্থামা চরিত্রে। দ্রোনাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা ছিলেন কৌরবদের বন্ধু। পান্ডবদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি পঞ্চপাণ্ডবের নাবালক পুত্রদের মেরে ফেলেন। কৃষ্ণের অভিশাপে তিনি যন্ত্রনাময় অমরত্ব লাভ করেন। তাঁকে নিয়ে নানারকম কাহিনি আজও প্রচলিত।
শরৎ সাক্সেনা- কীচক
রুপোলি জগতে খলনায়ক বা হাস্যচরিত্রে পরিচিত মুখ শরৎ সাক্সেনা। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘ত্রিদেব’, ‘খিলাড়ি’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’র মতো একাধিক সিনেমায় তাঁর অভিনয় দর্শকদের নজর কেড়েছে। ‘মহাভারত’এ মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের শ্যালক ও প্রধান সেনাপতি কীচকের ভূমিমকায় অভিনয় করেছিলেন শরৎ সাক্সেনা। ভীমের হাতে মৃত্যু হয়েছিল কীচকের।
কিরন জুনেজা-গঙ্গা
১৯৮৭ সালে ‘বুনিয়াদ’ দিয়ে ছোটপর্দায় অভিনয় শুরু করেন অভিনেত্রী কিরণ জুনেজা। তাঁর পরের বছরই সুযোগ পান মহাভারতে গঙ্গা চরিত্রে। মহারাজা শান্তনু’র প্রথমা স্ত্রী ও দেবব্রত ভীষ্মের মা ছিলেন গঙ্গা। কিরন জুনেজা গাঁটছড়া বেঁধেছেন পরিচালক রমেশ সিপ্পি’র সঙ্গে।
দেবশ্রী রায়- সত্যবতী
বি আর চোপড়া’র ‘মহাভারত’-এ দেবশ্রী রায় অভিনয় করেছিলেন সত্যবতী চরিত্রে। মহারাজা শান্তনু’র দ্বিতীয়া স্ত্রী এবং ব্যাসদেব, চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্যের মা ছিলেন সত্যবতী। দেবশ্রী বাস্তব জীবনে বিয়ে করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন অভিনেত্রী।
মুকেশ খান্না-ভীষ্ম
বলিউডে একাধিক জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেওয়ার পাশাপাশি ‘মহাভারত’এ ভীষ্ম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মুকেশ খান্না। মহারাজা শান্তনু ও গঙ্গা’র ছেলে দেবব্রত প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করবেন। এই ভীষন প্রতিজ্ঞা’র জন্য শান্তনু পুত্রের নাম দেন ভীষ্ম এবং ইচ্ছামৃত্যুর বর প্রদান করেন। ‘মহাভারত’ ছাড়াও মুকেশ খান্না’র ‘চন্দ্রকান্তা’ ও ‘শক্তিমান’ ছিল নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলির মধ্যে অন্যতম।
গিরিজা শঙ্কর- ধৃতরাষ্ট্র
‘মহাভারত’-এ ধৃতরাষ্ট্রের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গিরিজা শঙ্কর। এছাড়াও একাধিক ধারাবাহিক, সিনেমায় নিজের অভিনয় দক্ষতা ফুটিয়ে তুলেছেন এই অভিনেতা।
রেনুকা ইসরানি- গান্ধারি
‘মহাভারত’-এ গান্ধারি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রেনুকা ইসরানি। সিনেমায় সেভাবে না হলেও, হিন্দি ধারাবাহিকে নিয়মিত মুখ রেনুকা।
গুফি পেন্টাল- শকুনি
‘মহাভারত’-এ শকুনি চরিত্রটির যথাযথ রূপদান করেছিলেন গুফি পেন্টাল। একাধিক সিনেমা সহ বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন গুফি। ‘মহারানা প্রতাপ’ নামে একটি ধারাবাহিকে তাঁকে দেখা গিয়েছিল মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের রূপে।
পুনিত ইশার- দুর্যোধন
অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে ‘কুলি’ সিনেমায় খলনয়কের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য মানুষ পুনিত ইশারকে ঠিক যতখানি মনে রেখেছেন, ততখানিই মনে রেখেছেন ‘মহাভারত’-এর জন্য। এখানে দুর্যোধন চরিত্রে দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছিলেন পুনিত। ২০১৩ সালে একতা কপুর পরিচালিত ‘মহাভারত’-এ পুনিত ইশারকে দেখা গিয়েছিল পরশুরাম চরিত্রে।
পঙ্কজ ধীর- কর্ণ
‘মহাভারত’-এর কর্ণ চরিত্র ছিল অভিনেতা পনজ ধীরের কেরিয়ারের অন্যতম বড় ব্রেক। এছাড়াও ‘চন্দ্রকান্তা’য় চুনারগড়ের রাজা শিবদত্ত’র চরিত্র তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। ‘সনম বেওয়াফা’, ‘বাদশা’র মতো একাধিক সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন পঙ্কজ।
গজেন্দ্র চৌহান- যুধিষ্ঠির
বি আর চোপড়া’র ‘মহাভারত’এ যুধিষ্ঠির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গজেন্দ্র চৌহান। ২০১৫ সালে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন পদে তাঁর বসা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। অনেকেই বলেন যে যোগ্যতা থাকলে ওই পদে বসা যায় তা চৌহানের নেই। এই বিতর্কে গজেন্দ্রকে এক হাত নিয়েছিলেন রণবীর কপুর, কাল্কি কোয়েচলিন, ঋষি কপুর, পরিচালক কিরন রাওয়ের মতো বিশিষ্টরাও।
ফিরোজ খান(অর্জুন)- অর্জুন
অর্জুন নামেই রুপোলি পর্দায় জনপ্রিয় মহাভারতের ‘অর্জুন’ ফিরোজ খান। ‘মেহেন্দি’, ‘জিগর’, ‘রাজা কি আয়েগি বারাত’, ‘করণ অর্জুন’-এর মতো একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তবে অর্জুন অভিনীত বেশিরভাগ চরিত্রই ছিল খলচরিত্র।
প্রবীন কুমার- ভীম
‘মহাভারত’-এ অভিনয়ের আগে প্রবীন কুমার ছিলেন একজন ক্রীড়াবিদ। ১৯৬৬’র কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জয় করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন প্রবীন। ১৯৬৮ এবং ১৯৭২ সালের অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। বি আর চোপড়া’র ‘মহাভারত’এ ভীম চরিত্রে দেখা গিয়েছিল প্রবীন কুমারকে। ভীম ছাড়াও ‘চাচা চৌধুরি’ সিরিজের সাবু চরিত্রটির জন্যও এই ক্রীড়াবিদ-অভিনেতা স্মরণীয়। প্রথমে আম আদমি পার্টিতে যোগ দিলেও, পরে প্রবীন যোগ দেন ভারতীয় জনতা দলে।
সত্যেন্দ্র পাল- দ্রোণাচার্য
‘মহাভারত’এ দ্রোণাচার্য রূপে তো বটেই, মানুষ নিঃসন্দেহে অভিনেতা সত্যেন্দ্র পালকে মনে রাখবে ‘চানক্য’, ‘শক্তিমান’, ‘মহারানা প্রতাপ’ এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য। এছাড়াও অভিনয় করেছেন ‘১৯২০ লন্ডন’, ‘সেহের’, ‘যোধা আকবর’, ‘খুদা গাওয়া’ সিনেমায়।
পেন্টাল- শিখন্ডী
গুফি পেন্টালের ভাই কানওয়ারজিৎ পেন্টাল রুপোলি জগতে পরিচিত মুখ। ‘সত্তা পে সত্তা’, ‘সদমা’, ‘বাওয়ার্চি’, ‘পিয়া কা ঘর’এর মতো সিনেমায় তাঁর অভিনয় দক্ষতা প্রমাণিত। মহাভারতে শিখন্ডি’র চরিত্র ছিল পেন্টালের। কাশীরাজের জ্যেষ্ঠ কন্যা অম্বা তপস্যা করে পরবর্তী জন্মে আসেন দ্রুপদ রাজার ঘরে। তাঁর নাম রাখা হয় শিখন্ডী। শিখন্ডী’র জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভীষ্মের মৃত্যু।
রাজেশ বিবেক- বেদব্যাস
অভিনেতা রাজেশ বিবেক অভিনয় করেছিলেন বেদব্যাস চরিত্রে। তবে তার আগে তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘গান্ধী’-তে ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের চরিত্রে। অভিনয় করেছেন ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’, ‘লগন’, ‘যোধা আকবর’-এর মতো সিনেমায়। ২০১৬ সালে ৬৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় রাজেশ বিবেকের।
নব্বইয়ের নস্টালজিয়া: বি আর চোপড়া’র ‘মহাভারত’
আশির দশকের শেষ আর নব্বইয়ের দশকের শুরু, দূরদর্শনে হঠাৎই ঘটে গিয়েছিল বিপ্লব। সেই বিপ্লবের কান্ডারি ছিলেন পরিচলক বি আর চোপড়া। ১৯৮৮ সালের ২ অক্টোবর সাদা-কালো পর্দায় প্রথমবারের জন্য জীবন্ত হয়ে উঠেছিল বীররসে ভরা মহাকাব্য মহাভারত। ‘যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত, অভুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম, পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতম, ধর্মসংস্থাপনার্থয় সম্ভবামি যুগে যুগে’ সেই বোধহয় প্রথম গীতা’র এই বাণীতে মোহিত হয়েছিলেন অনেকেই। আজ এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক সেদিনের মহাভারতের কিছু চরিত্রেদের যাঁরা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে অমর হয়ে রয়ে গিয়েছেন।