‘শীতকালে তো এমনিই ঘুমাই’-সত্যজিৎ
রায়ের বিখ্যাত ‘খগম’ গল্পে
ধূর্জটিবাবুর বিষাক্ত কেউটে বালকিষাণে পরিণত হয়ে যাওয়ার কথা সবাই জানেন কম বেশি।
ভারতবর্ষ এক সময় ছিল সর্প-সংকুল দেশ। বিষাক্ত, বিষহীন সব
ধরনের সাপের দেখা মেলে ভারত-ভূমিতে, বিশেষত বাংলায়। যদিও
বর্তমানে বাংলায় বিষধর সাপের সংখ্যা নেহাতই অল্প। মানুষ বিষহীন সাপকেও বিষাক্ত
ভেবে ভুল করে মেরে ফেলে। তাই সবার আগে সাপ চেনা খুব প্রয়োজন।
সাপেদের জাতের মধ্যে চন্দ্রবোড়া সাপ মহা বিষাক্ত। পৃথিবীতে
প্রতি বছর সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যান তাঁর একটি বড় অংশ চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মারা
যান। এদের শরীরে হোমটক্সিন থাকে, ফলে চন্দ্রবোড়া কামড়ালে দেহাংস পচে
যেতে শুরু করে। অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হয়। তাই এই সাপ এতটাই বিষধর যে কামড়ালে এক
মুহূর্ত দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তারপরেও সবসময় মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব
হয় না।
আরও পড়ুন: প্রয়াত পণ্ডিত বিরজু মহারাজ
আরও পড়ুন: পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব কাটিয়ে ফের শহরে শীতের আমেজ
চন্দ্রবোড়া সাপ কীভাবে চিনবেন
চন্দ্রবোড়ার মাথা হয় ত্রিকোণাকৃতির। গায়ের রং কিছুটা
হলদেটে বা বাদামি। তার ওপর থাকে গোল গোল চাকা দাগ। এরা দীর্ঘ সময় ধরে হিস হিস করে
মুখ দিয়ে শব্দ করতে পারে। অন্যান্য সাপের মতো শীতে কিন্তু চন্দ্রবোড়া ঘুমায় না।
বরং এই সময়ে তারা বংশ বিস্তার করে। চন্দ্রবোড়া সাপ ঝোপঝাঁড়, নদীর পাড়, ভাগার এই সকল জায়গায় থাকতে পছন্দ করে।
সেই সকল জায়গা মানুষের দখলে চলে আসার কারণে খুব সহজেই এই সাপের ইদানিংকালে দেখা
মিলছে।
অজগর কিন্তু চন্দ্রবোড়া নয়
চন্দ্রবোড়া আর অজগর এক নয়। ছোট অজগরের বাচ্চাকে অনেক সময়
চন্দ্রবোড়া বলে ভুল করেন মানুষ। আবার কখন কখনও চন্দ্রবোড়ার ছানাপোনাকে অজগর ভেবে
বাড়ি নিয়ে গিয়ে পোষার ঘটনাও ঘটেছে। তাই সবার আগে এই দুই সাপের পার্থক্য জানা
দরকার। অজগরের বিষ নেই। তাই একে বিষাক্ত সাপ বলা না গেলেও এটি অবশ্যই প্রাণঘাতী।
অজগর বা ময়াল সাপ শিকারকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে দম বন্ধ করে আগে মেরে ফেলে। তারপর
তাকে ভক্ষণ করে। এরা মৃত প্রাণী খায় না। আস্ত মানুষ বা জীব-জন্তু শিকার করার পর
কয়েকদিন শিকার বন্ধ রাখে অজগর।