পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনায় অমাবস্যা তিথিতে
অনুষ্ঠিত হয় মহালয়া। ‘জাগো তুমি জাগো’ আরাধনায়
ধরাধামে অবতীর্ণ হন দেবী দূর্গা। দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষা শেষে ঘরের মেয়ে ফেরে ঘরে।
আনন্দিতার আগমনে সেজে ওঠে মর্তধাম।
মহালয়া, অর্থাৎ দেবী দূর্গাই হলেন একমাত্র
আশ্রয়স্থল। পিতৃপক্ষ’র অবসান হয়ে দেবীপক্ষে উত্তরণ হতে চলেছে
যে মুহুর্তে সেই লগ্নই মহালয়া। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হয়ে
পরবর্তী অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কে পিতৃপক্ষ বলে। পুরাণ মতে ব্রহ্মার নির্দেশে
পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। তাই এই সময় তাঁদের
উদ্দেশ্যে কিছু র্অপণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌঁছায়।
ত্রেতা যুগে শ্রীরাম দেবীর আবাহন করেছিলেন বসন্তকালে। সেই
পুজো বাসন্তী পুজো। মহালয়ায় পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে জলদান করেছিলেন রাম। হিন্দু
ধর্মে যে কোনও শুভ কর্ম করার আগে পূর্বপুরুষ, গোটা জীবজগতের উদেশ্যে
জলদান করা হয়। শুভ কার্যের সাফল্য কামনা করে আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়। তাই হল
তর্পণ। যুগের পর যুগ ধরে এইভাবেই মহালয়ার পূণ্য প্রভাতে উচ্চারিত হয়, ‘ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়ম, আব্রহ্ম
স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্তু।’
আরও পড়ুন: এবারের পুজোতে উত্তর মেরুতে তিন রাত্রি কাটাতেই পারেন
আরও পড়ুন: মন্ডপে প্রবেশের অনুমতি আদৌ মিলবে? ফের উস্কে দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নতুন নির্দেশিকা
মহালয়ার দিন দেবতারা দেবী দূর্গাকে মহিষাসুরকে বধ করার
অনুরোধ জানান। ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর হয়েছিলেন অজেয়। তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে
প্রজাপতি ব্রহ্মা মহিষাসুরকে বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁকে বধ
করতে পারবেন না। ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর হয়ে ওঠেন দুর্দমনীয়। দৈত্যালোক ছেড়ে
দেবলোকে এসে তাঁর অত্যাচার মাত্রাছাড়া হয়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে অন্যান্য দেবতারা
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন। পুরান বলে, এই তিন
শক্তির মিলিত রূই হলেন ‘মহামায়া’।
মহিষাসুরের সঙ্গে তিনি নয়দিন ব্যাপী যুদ্ধ করেছিলেন।
শ্রী শ্রী চণ্ডীর প্রথম অধ্যায় থেকে মহালয়ার যে ইতিহাস
জানা যায় প্রলয়ের সময় কোনও কারণে পৃথিবী বিশালাকার সমুদ্রে পরিণত হয়। সেই সময়
শ্রীবিষ্ণু সেই সমুদ্রের ওপর অনন্তনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় যান। এদিকে বিষ্ণুর
কর্ণমূল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্য’র জন্ম হয়। তাঁরা বিষ্ণুর
নাভিপদ্মে বসবাসকারী ব্রক্ষ্মাকে বধ করতে উদ্যত হলে প্রজাপতি বারবার বিষ্ণুকে
জাগরিত করার চেষ্টা করেন। সেই জন্য শ্রীবিষ্ণুর নয়নে আশ্রয় নেওয়া যোগনিদ্রার স্তব
করতে শুরু করেন। ব্রহ্মার স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে দেবী শ্রীবিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি
পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সঙ্গে মহাযুদ্ধে অবতীর্ন হন।
অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। এই ধারণা
ঠিক নয়। মহালয়ার পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। সেই দিন থেকে
কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিনই হল দেবীপক্ষ।
ছবি সৌজন্য: শুভঙ্কর লাহা