দূর্গাপুজোর পরেই আসে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। কোজাগরী
পূর্ণিমায় এক পাকে ভোগের খিচুড়ি রান্না হয় না এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভোগের
খিচুড়ির স্বাদ একেবারে অন্যরকম। খিচুড়ি তৈরি করে ঠাকুরের কাছে নিবেদন করার পর তার
সঙ্গে ধূপ-ধুনোর গন্ধ মিশলে প্রসাদ খাওয়ার সময় এক স্বর্গীয় স্বাদ পাওয়া যায়। এই
একপাকে ভোগের খিচুড়ি রান্না কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। আর খিচুড়ি মানেই সঙ্গী হবে
লাবড়া। আজ পাঠকের জন্য তাই রইল ভোগের খিচুড়ি ও লাবড়া রান্নার রেসিপি।
ভোগের খিচুড়ি
প্রণালী:
৫০০ গ্রাম সোনামুগ ডাল প্রথমে শুকনো খোলায় মিনিট তিন চারেক
ভেজে নিন। খুব বেশি সময় ধরে ভাজলে ডাল সেদ্ধ হবে না। ডাল ভাজা হয়ে গেলে ভাল করে
ডাল ধুইয়ে রেখে দিন। এরপর কড়াইতে দিন ১৫০ গ্রাম সরষের তেল ও পঞ্চাশ গ্রাম ঘি। তেল
গরম হলে তাতে দিয়ে দিন কয়েকটি তেজপাতা ও ফাটিয়ে নেওয়া শুকনো লঙ্কা। মশলা দুটি একটু
ভাজা হলে দিন এক টেবিল চামচ সাদা জিরে। এক থেকে দেড় মিনিট ধরে জিরে, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ভাজা হলে কড়াইয়ে দিন কুচিয়ে নেওয়া নারকেল। হালকা ভাজা ভাজা
করে ওই তেলেই দিয়ে দিন পরিমাণমতো আদা বাটা। কষাতে কষাতে আদার কাঁচা গন্ধ চলে গেলে
এবার দিন ধুয়ে রাখা ডাল। তারপর ভাল করে তিন থেকে চার মিনিট ভেজে নিন। ডাল ভাজা হয়ে
গেলে দিয়ে দিন আগে থেকে ধুয়ে রাখা গোবিন্দভোগ চাল। এবার চাল ও ডাল একসঙ্গে
কিছুক্ষণ ভেজে নিন। তারপর দিয়ে দিন এক টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো ও দেড় টেবিল চামচ
জিরে গুঁড়ো। চাইলে লঙ্কার গুঁড়োও দিতে পারেন। এবার সব কিছু ভাল করে বেশ কিছুক্ষণ
ধরে মিশিয়ে নিন। তারপর দেড় লিটার জল দিয়ে দিন। এক কেজি চাল ডালের খিঁচুড়ির জন্য
দেড় লিটার জল লাগবে। এক পাকের খিচুড়ি বলে জলও একবারেই দিয়ে দিতে হবে। এবার গ্যাসটা
হাই ফ্লেমে রেখে ভাল করে ফুটতে দিন। তারপর পরিমাণ মতো সন্ধক লবন ও চিনি, কয়েকটি চেঁরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে আবার নাড়াচাড়া করে হাই ফ্লেমে কিছুক্ষণ
ফুটিয়ে নিন। চাল আর ডাল ভাল করে ফুটে যখন সেদ্ধ হয়ে যাবে তখন ছড়িয়ে দিন বেশ কিছুটা
ঘি ও এক চা চামচ গরম মশলা। এবার ফ্লেম লো করে সবকিছু আরও একবার হালকা হাতে মিশিয়ে
নামিয়ে নিন। একটু পাতলা অবস্থাতেই খিচুড়ি নামাবেন। কারণ ঠান্ডা হলে খিচুড়ি জমে
যায়। তারপর ঠাকুরকে ভোগ নিবেদন করুন।
আরও পড়ুন: ঠাকুর দেখতে যাওয়ার সময়ে কিছু জিনিস ব্যাগে রাখা অবশ্যই জরুরি
আরও পড়ুন: পুজোতে চটজলদি বানিয়ে নিন নবরত্ন পোলাও
লাবড়া
এবার জেনে নেওয়া যাক ভোগের লাবড়া কিভাবে বানানো হবে।
প্রণালী:
লাবড়ার জন্য মূলত সবজি লাগে। আর এই তরকারির সবজি একটি বড়
করে কাটতে হয়। প্রথমে বেগুন, মূলো, সিম,
আলু, ঝিঙে, মিষ্টি কুমরো,
পটল, পেঁপে, আর থোঁড়
পরিমাণ মতো কেটে নিন। আরও সবজি চাইলে দিতেই পারেন। এবার কড়াইতে সরষের তেল দিইয়ে
বেগুনগুলো হালকা ভেজে নিন। তারপর একে একে সিম, টুকরো করে
রাখা কুমড়ো ভেজে আলাদা করে তুলে রাখুন। এবার ওই তেলেই ফোঁড়নে দিন তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, চেঁড়া কাঁচালঙ্কা, পাঁচফোড়ন ও সরষে। ফোঁড়নটা একটু ভেজে নিয়ে তার মধ্যে দিয়ে দিন টুকরো করে
রাখা আলু। দু’মিনিট ভাজা হলে একে একে দিতে থাকুন কেটে রাখা
পটল, পেঁপে, মূলো, থোর, ঝিঙে। প্রত্যেকটি সবজি দেওয়ার পর অবশ্যই একবার
করে মিশিয়ে নেবেন। এই তরকারিতে ঝিঙে দেওয়া হয়েছে, তাই এমনিতে
জল বেরোবে। আলাদা জল দেওয়ার আর কোনও দরকার নেই। এবার স্বাদমতো লবন দিয়ে ঢাকা দিয়ে
লো ফ্লেমে সবজিগুলি নরম হতে দিন। ১৫ মিনিট পর ঢাকনা খুললে দেখবেন সবজি অনেকটাই
সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার এর মধ্যে দিয়ে দিন মিষ্টি কুমড়ো ও সিম। তারপর এক চা চামচ
পরিমাণ হলুদ ও কাশ্মিরী লঙ্কার গুঁড়ো। ভাল করে সব কিছু মিশিয়ে আবার ঢাকা দিয়ে ১০
মিনিট রেখে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকা খুলে বেগুনগুলি দিয়ে আবার হালকা হাতে মিশিয়ে
ঢাকা দিয়ে দিন। পুরো রান্নাটায় কিন্তু লো ফ্লেমে হবে। এই ফাঁকে একটু আদা গ্রেটারে
ঘষে নিন। ৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দিয়ে দিন চেঁরা কাঁচা লঙ্কা ও ওই গ্রেট করে নেওয়া
আদার রস। আবারও ভাল করে সব কিছু মিশিয়ে দিয়ে দিন পরিমাণ মতো চিনি। দরকার হলে ঘিও
দিতে পারেন নামানোর আগে। সব কিছু মিশিয়ে গ্যাসের ফ্লেম বন্ধ করে ৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে
রেখে দিন। তারপর পরিবেশন করুন লোভনীয় লাবড়া।