দিকে দিকে বেজে উঠেছে আগমনী সুর। আজ তৃতীয়া। আর তিনদিন পরেই হবে বোধন। জয়নগরের
মিত্র পরিবারেও তাই এখন উমাকে আনার তোরজোড়। বছরের পর বছর ধরে আজও হয়ে আসছে এই বাড়ির
পুজো। আজ জমিদারি প্রথা না থাকলেও পুজোর নিয়মে কোনও ঘাটতি পড়েনি।
জমিদারি প্রথা আজ নেই, তাই জৌলুস কমেছে বেশ খানিকটা। কিন্তু যথাযথ তিথি
নিয়ম মেনেই হয় পুজো। ১১৩৬ সালে শুরু হয়েছিল মিত্র বাড়ির দুর্গাপুজো। বলা হয়, স্বয়ং
দেবী দুর্গা মানুষরূপে এসে বাড়িতে গৃহকত্রী ভুবনমোহিনী মিত্রকে বলেন, এই পুজো শুরু
করতে। সেই সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল হয় এ তো সবাই
জানে। কিন্তু কাঁঠাল তো হয় বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ্য মাসে। কিন্তু একবার এই বাড়ির একটি কাঁঠাল
গাছে অসময়ে কাঁঠাল ফলেছিল। সেই কাঁঠাল পূজার নৈবেদ্য হিসাবে মা দুর্গাকে নিবেদন করা
হয়।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: রথে নির্মাণ হয় দেবীমূর্তি, গুলির শব্দে শুরু হয় নিরঞ্জণ যাত্রা- ঐতিহ্যে অভিনব জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দেবীবন্দনা
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: কালী আরাধনায় ফিরল কপাল, শুরু হল দুর্গাপুজো
জমিদার বাড়ির দালানে হয় দুর্গাপুজো। একসময় সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা,
রায়দিঘি , মথুরাপুর ইত্যাদি এলাকায় জুড়ে জমিদারি প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করেছিল
মিত্র’রা। সেই সময় জমিদার বাড়িতে ভীড় আর ভীড়। প্রজাদের বাড়ি থেকেই আসত পুজোর সামগ্রী।
এখন তো সে সব দিন অতীত। তাই প্রাচীন নিয়ম মেনেই জন্মাষ্টমীতে মা দুর্গা কাঠামো পূজার
পাশাপাশি মহালয়ায় মা দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। আগে পাঠাবলি দেওয়া হত সাতটি করে,
বর্তমানে তা কমে দুইয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়ির সামনের জলাশয়েই হয় নবপত্রিকা স্নান, এমনকী
বিসর্জনও। বর্তমানে সকলেই যে জয়নগরে থাকেন তা নয়। তবে পুজোর চারদিন দেশ-বিদেশ যেখানেই
পরিবারের সদস্যরা থাকুন না কেন ঠিক এসে হাজির হন। থাকে নরনারায়ণ সেবারও। এই পুজো একইভাবে
বংশ-পরম্পরায় পুরোহিতরা করে আসছেন। ঢাকিরাও বংশ পরম্পরায় আসেন পুজোর সময়। দেড় মণ
চালের নৈবেদ্য অর্পণ করা হয় মা’কে।