নাগরিক জীবনে পার্ক মানেই খুব সকালে বা অলস বিকেলে হাঁটাহাঁটি করা অথবা
গাছের নিচে পাতা বেঞ্চে বসে একটু জিরিয়ে নেওয়া। কিন্তু এরকমই কোনও পার্ক যদি পুরোটাই
জলের নিচে চলে যায় তাহলে কেমন হবে ভাবুনতো। ভাবতে খুব আজব লাগলেও এমন পার্কের অস্তিত্ব
আছে অস্ট্রিয়াতে। অদ্ভুত এই পার্কটি স্কুবা ডাইভিং প্রেমীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়
একটি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। জলের নিচে থাকা এই পার্কটি অস্ট্রিয়ার উত্তর-পূর্বে স্টিরিয়া
অঞ্চলে ত্রাগোস নামের একটি গ্রামে অবস্থিত।
এই এলাকার হসকব পর্বতমালার নিচে সবুজ জলের চমৎকার একটি লেক আছে যার সঙ্গেই
এই পার্কটি অবস্থিত। এটিকে গ্রীন সি বা সবুজ লেক নামে ডাকা হয়। হসকব পর্বতমালার মধ্যবর্তী
এই জায়গাটি বেসিনের মতো গভীর। এই গভীর অংশটাই লেক। এই লেকের চারপাশ নয়নাভিরাম পর্বত
ও গাছপালা দিয়ে ঘেরা। যারা হাইকিং করতে ভালবাসেন তাদের কাছে এই লেকটি অনেক প্রিয় কারণ
এর আশেপাশের পাহাড়গুলো অনেক উঁচু। এই পাহাড়গুলো তুষারে আবৃত থাকে। এখানকার সবচেয়ে উঁচু
পর্বতটির উচ্চতা প্রায় ৯,০০০ ফুট। এই জায়গাটি মূলত পর্বতে হাইকিং শুরুর পয়েন্ট হিসেবে
ব্যবহার করা হয়। এই স্টিরিয়ার হসকব রেঞ্জটি ইউরোপের বেশ জনপ্রিয় একটি হাইকিং গন্তব্য।
শীতের সময়ও পার্কের ছোট একটি অংশ লেক হিসেবেই থাকে যার গভীরতা মাত্র ৩ ফুট।
এখানে বসানো আছে বেঞ্চ, আরও আছে ছোট্ট একটি ব্রিজ। এই বেঞ্চে অনেকেই গা
এলিয়ে বসে চারপাশের নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। প্রতি বছর বসন্তকালে এই
পার্কটি জলের নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করে। যা এখানে অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। এই
অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য এই পার্কটিকে করেছে অনন্য। বসন্ত আসতেই এখানকার পর্বতের গায়ে জমা
বরফগুলো গলতে শুরু করে। যার ফলে ধীরে ধীরে লেকের জল বাড়তে শুরু করে। এরপর গ্রীষ্মকালে
তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এখানকার সব বরফ গলে যায়। তাই মে-জুনের দিকে এই লেকের গভীরতা
বেড়ে গিয়ে ৩৬ ফুট হয়ে যায়। এই তুষারগলা জলেতে তলিয়ে যায় এই পার্ক।
এখানকার রূপ পুরোপুরি বদলে যায়। জলে ডুবে যায় লেকের পাশে থাকা পার্ক, পার্কের
বেঞ্চ, ব্রিজ, ট্রেইল, মাঠের ঘাস। গভীরতা বাড়তে বাড়তে লেকটির আশেপাশের বড় বড় গাছপালাগুলোও
সব জলের নিচে তলিয়ে যায়। এই জায়গাটি পার্ক থেকে পরিণত হয় অপরূপ স্বচ্ছ জলের লেকে। জলের
নিচে সৃষ্টি হয় অবিশ্বাস্য এক জগতের। জলের নীচে থাকা এই পার্কটিতে তখন অতিপ্রাকৃত এক
সৃষ্টি বলে মনে হয়।
পার্কটির যে বেঞ্চে মানুষ বসত, যে ছোট ব্রিজে মানুষ পারাপার হত এবং যে ট্রেইলে
সবাই হাঁটত, সেখানে তখন ঘোরাঘুরি করতে থাকে ট্রাউট মাছেরা। জলের নিচের এই অদ্ভুত সুন্দর
জগত দেখার জন্য এখানে সমাগম হন ডাইভিং প্রেমী ও ফটোগ্রাফাররা। এই সময় পর্যটকদের আনাগোনাও
বেশ বেড়ে যায়। কেউ কেউ লেকের পাড়ে বসে পিকনিকে মেতে উঠেন, কেউ মাছ ধরেন, আবার কেউবা
অক্সিজেন ট্যাংক নিয়ে ডুব দেন জলের নিচে।
তবে এখানে স্কুবা ডাইভিং করতে সার্টিফিকেট লাগে। সাথে লাগবে ডাইভিং এর সব
সরঞ্জামও। সরঞ্জাম ও সার্টিফিকেট ছাড়া এখানে নামা যাবেনা। তবে এখানেই স্কুবা ডাইভিং
শেখার সব ব্যবস্থা আছে। ডাইভিংয়ের পাশাপাশি এখানে শিখতে পারবেন পানির নিচের ফটোগ্রাফি।
এছাড়াও জানতে পারবেন জলজজীবনের নানান দিক সম্পর্কে। প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট হাতে
পেলেই নেমে যেতে পারবেন জলের নিচের এই অপূর্ব জগতে। এই পানি অনেক বেশি ঠাণ্ডা।
যে বেঞ্চে বসে মানুষজন প্রকৃতি দেখত, যে ব্রিজে মানুষ চলাচল করতো, যে ট্রেইলে
ছিল মানুষের পদচারণ তার পাশে সাঁতার কাটার সময় অন্যরকম এক অনুভূতি হবে। আপনার আশেপাশে
ঘুরাঘুরি করবে ট্রাউট মাছের দল। জলের নিচে বড় বড় গাছগুলোর ঝরাপাতা ভাসতে দেখবেন ট্রেইল
ও মাঠের মধ্যে। এ যেন এক অন্য স্বর্গ। বড় বড় গাছগুলোর মধ্য দিয়ে সাঁতার কাটা আপনাকে
অন্যরকম এক স্কুবা ডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা দেবে।