বিশ্বকাপের খেলা দেখতে এসেও নিজেদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানাল জাপান সমর্থকরা। জার্মানির বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের পর এবং কোস্টা রিকা'র বিরুদ্ধে হার হজম করার পরেও স্টোডিয়াম পরিষ্কার করতে দেখা গেল জাপানের সমর্থকদের। শুধু তাই নয়, গতবারের বিশ্বকাপেও এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল। জানেন কী, এই ঘটনার নেপথ্যে শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক দিকই নেই, বরং রয়েছে শিক্ষা, ঐতিহাসিক এবং ধার্মিক দিকও।

শুরু করা যাক, শিক্ষাগত দিক থেকে। জাপানের ছাত্র-ছাত্রীরা ছোট থেকেই নৈতিক শিক্ষা পান। বিদ্যালয়য়ে তাদের ভর্তি হওয়ার পর পরই শেখানো হয় জিনিস পত্র পরিষ্কার রাখার জন্য। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেখানো হয়, নিজের জায়গা পরিষ্কার রাখার নিয়ম। শুধু তাই নয়, জাপানের বিদ্যালয়গুলিতে সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনে পড়াশোনার পর ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে একসঙ্গে শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার রাখার কাজ করানো হয়। সেখানকার কলেজগুলিতেও রয়েছে এই সমস্ত নিয়ম। তাই খেলার শেষে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করা তাদের শিক্ষার বহিঃপ্রকাশ, বলা যেতেই পারে।

জেনে নেওয়া যাক সাংস্কৃতিক দিকটি। এ দেশের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার আগে বাড়িতেই শেখানো হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাঠ। ছোটদের নিজের খেলনা জায়গা মতো রাখতে শেখানো হয় এবং তাদের থেকে তুলনামূলক যারা একটু বড় তাদের শেখানো হয় নিজেদের ঘর ও বাড়ি পরিষ্কার রাখার জন্য।

জাপানের মূল ধর্ম হল বৌদ্ধ। তবে এই দেশে বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার আগে একটিই ধর্ম ছিল। তা হল ‘শিনতো’ ধর্ম। শিনতো ধর্মের মূল উদ্দেশ্যই হল, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। অর্থাৎ প্রত্যেক জিনিসপত্র পরিস্কার রাখাই তাদের প্রধান কাজ। তবে বৌদ্ধ ধর্ম আসার পর ধীরে ধীরে 'লুপ্ত' হয়ে যায় শিনতো ধর্ম। কিন্তু শিনতো ধর্মের বেশ কিছু ভাল দিকগুলি হারিয়ে যেতে দেননি জাপানি'রা। বিশেষ করে জিনিসপত্র পরিষ্কার করে রাখার রীতিকে 'আঁকড়ে' ধরে রাখেন তাঁরা।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার রীতি প্ৰথমে ছিল না জাপানিদের। অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তাঁরা। ১৩০০ বছর আগে জাপানে আচমকাই ধরা দিয়েছিল 'স্মল পক্স'। সেই সময় প্রায় ১০ লক্ষ জাপানি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন এই রোগে। যা তখনকার হিসেবে জাপানের জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলেই ছড়িয়ে পড়ত এই প্রাণঘাতী রোগ। শুধু তাই নয়, ১৯৯৮ সালে জাপানের নানগো'তে খোঁজ মেলে 'ফ্লু' ভাইরাসের। শীতকালীন অলিম্পিক্সের সময় খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল এই ভাইরাসের। প্রায় ৯০ হাজার নাগরিক এই ভাইরাসের কবলে পড়েন। প্রাণ হারান বেশ কিছু নাগরিক। এই ঘটনার পর আবির্ভাব ঘটে সোয়াইন ফ্লু'র। যা বড়সড় বিপদে ফেলেছিল জাপানি'দের। সেই কারণে নিজেকে এবং নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখাটা ছোট থেকে শিখিয়ে দেওয়া হয় 'ব্লু সামুরাই'দের।