মুড়িঘন্ট
একটি বহুল প্রচলিত পদ। সম্ভবত মুড়িঘন্ট নামটি এসেছিল মুড়ি অর্থাৎ মাছের মুড়ো এবং
ঘন্ট অর্থাৎ চাল দিয়ে মিশিয়ে রান্না করা হয় তার জন্য। বহুবছর আগে
মুড়িঘন্ট আসলে ছিল গরীব নাবিকদের খাবার। বাংলার মাছ রসিক নাবিকরা আগেকার দিনে যখন
চন্দ্রভাগা অথবা তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকে জাহাজ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যে করার জন্য
দূর-দুরান্তে যাত্রা করতেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের খাদ্য হিসাবে জুটতো নানা ধরনের মাছ। মাছের ঝোল বা ভাজা খাওয়ার পর
বাকি অংশ ফেলে না দিয়ে তার সঙ্গে চাল মিশিয়ে খানিক পোলাওয়ের আকারে বানিয়ে ফেলা
হত হল মুড়িঘন্ট। পরবর্তীতে এই পদটি এতই জনপ্রিয় হয় যে এর জনপ্রিয়তা
ছড়িয়ে পড়ে বিদেশেও। সাধারণত গোবিন্দ
ভোগ চাল দিয়েই অধিকাংশ বাড়িতে এই মুড়িঘন্ট বানানো হয়। তবে
রান্নায় একটু টুইস্ট আনতে চিঁড়ে দিয়েও বানানো যেতে পারে এই
মুড়িঘন্ট। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই রেসিপি-
উপকরণঃ
মাছের
মুড়ো— ৩০০ গ্রাম (রুই অথবা
কাতলা), চিঁড়ে— ১০০ গ্রাম, সরষের তেল— দেড় কাপ, আলু— ৪টি, হলুদ— ২ চা চামচ, নারকেল কোরা— আধ কাপ, ঘি— ১ টেবিল চামচ, গোটা জিরে— ১ চা চামচ, লবঙ্গ— ২টি, ছোট এলাচ— ৩টি, দারুচিনি— ১টি, পেঁয়াজ— ২টি, আদা বাটা— ১ চা চামচ, টমটো— ১টি, লঙ্কা গুঁড়ো— ১ চা চামচ, শাহী গরমমশলা গুঁড়ো— ১ চা চামচ, চিনি— ১ চা চামচ, নুন— স্বাদ মতো
প্রনালীঃ
মাছের মাথা ভাল করে পরিষ্কার করে নুন ও হলুদ দিয়ে মেখে ছাঁকা সরষের
তেলে ভেজে আলাদা পাত্রে তুলে রাখুন। অন্য একটি পাত্রে তেল
গরম করে চিঁড়ে হালকা করে ভেজে নিন। এরপর আলু ডুমো ডুমো করে কেটে নুন ও হলুদ মাখিয়ে তেলে ভেজে তুলুন। এরপর আবার কড়াইয়ে সরষের
তেল গরম করুন। তাতে গোটা জিরে, তেজপাতা, লবঙ্গ, ছোট এলাচ, দারুচিনি ফোড়়ন দিন। এবার ওই
তেলেই সামান্য চিনি দিন। এই বার একে একে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, টমেটো কুচি দিয়ে কষাতে থাকুন। এরপর ভেজে রাখা মাছের মুড়ো হাতা দিয়ে
ভেঙে ওই মশলায় দিয়ে দিন। তারপর ভেজে রাখা আলু ও চিঁড়ে দিয়ে দিন। এরপর সামান্য জল দিয়ে হালকা হাতে নাড়াচাড়া করুন। স্বাদ মতো নুন ও চিনি দিন। গ্রেভি ফুটে উঠলে কুরিয়ে রাখা নারকেল দিয়ে এক
বার ভাল করে নেড়ে নিন। তারপর উপর থেকে ঘি ও শাহী গরমমশষলা গুঁড়ো ছড়িয়ে ঢাকা
দিয়ে রাখুন। এরপর ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন
করুন চিড়ে দিয়ে মাছের মুড়িঘন্ট।