প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের
তৃতীয়া তিথিতে পালিত হয় অক্ষয় তৃতীয়া। হিন্দুধর্মে অক্ষয় তৃতীয়া একটি পূণ্যতিথি
হিসেবে পালন করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এদিন যে কোনও শুভ কাজ করলে তার অক্ষয় ফল পাওয়া
যায়। অক্ষয় তৃতীয়া কেনাকাটা করার জন্যেও অত্যন্ত শুভ। মনে করা
হয়, এদিন কিছু কেনাকাটা করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। সেই
হিসেবে অক্ষয় ধনতেরসের মতোই একটি শুভ দিন বলে একে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, অক্ষয় তৃতীয়ায় অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী কী সেই বিশেষ ঘটনা-
১) পরশুরামের জন্ম- সত্যযুগে নারায়ণ মত্স্য, কূর্ম, বরাহ ও নরসিংহ অবতার রূপে ধরাধামে
আসেন শ্রী বিষ্ণু। ত্রেতাযুগে তিনি বামন অবতার, পরশুরাম অবতার ও রাম অবতার রূপে জন্ম নেন। অধর্মের বিনাশ
করে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করতে বারবার অবতার-রূপে পৃথিবীতে এসেছেন বিষ্ণু। তাঁর মধ্য অন্যতম বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্ম হয় অক্ষয়
তৃতীয়াতেই। এদিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে পুজো পাঠ করলে
তাঁদের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার এই কাজগুলি করলে মিলবে প্রভূত ধন সম্পদ
২) নতুন যুগের সূচনা- অক্ষয় তৃতীয়া থেকে নতুন যুগের শুরু করা হয়। ভবিষ্যপুরাণ অনুসারে, দ্বাপর যুগের অবসান ঘটে অক্ষয় তৃতীয়াতে। এরপরই সত্য, ত্রেতা ও কলিযুগের সূচনা হয়।
৩) দেবী গঙ্গার মর্ত্যে আগমন- পুরাণ অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসেন দেবী গঙ্গা। এদিন থেকে মর্ত্যে প্রবাহিত হতে
শুরু করে এই পতিতোদ্ধারিনী নদী। রাজা ভগীরথের তপস্যায় খুশি হয়ে মহাদেবের বরে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে মর্ত্যে নেমে আসেন তিনি। বিশ্বাস অনুসারে, গঙ্গার জলে স্নান করলে বিগত সাত জন্মের পাপও ধুয়ে যায়।
আরও পড়ুন: Thursday Remedies: মা লক্ষ্মীকে গৃহে অচলা রাখতে প্রতি বৃহস্পতিবার পালন করুন হলুদের এই টোটকাগুলি
৪) বদ্রীনারায়ণ ও বাঁকে বিহারীর
দর্শন- এইদিন থেকেই খুলে যায় চারধামের অন্যতম ধাম বদ্রীনাথ
মন্দিরের দরজা। তার সঙ্গে এইদিনই মথুরায় বাঁকে বিহারীর দর্শন পাওয়া যায়। সারা বছর
পোশাকের আড়ালে ঢাকা থাকেন বাঁকে বিহারী।
৫) অক্ষয় পাত্র লাভ- পুরাণ মতে, দেবী
অন্নপূর্ণার কাছেই রয়েছে এই পৃথিবীর সমস্ত খাদ্য ভান্ডার।
এদিন অভুক্তকে খাদ্য দান করলে কোনও খাবারের অভাব হয় না বলে
প্রচলিত বিশ্বাস। পুরাণ অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়ায় অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিলেন
যুধিষ্ঠির। এই কারণে অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই ক্ষেতে বীজ রোপণ করা শুরু করেন কৃষকরা।
৬) মহাভারত রচনার শুরু- মহাভারতকে বলা হয় পঞ্চম বেদ। আর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই মহর্ষি
বেদব্যাস মহাভারত রচনা শুরু করেন। মহাভারতের মধ্যেই রয়েছে শ্রীমদ্ভগবতগীতা। বলা হয়ে থাকে, গীতার অষ্টদশ অধ্যায় যিনি পাঠ করেন, তাঁকে কোনও দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না।